গণেশ চতুর্থী ২০২৫-এ ভক্তরা গণপতির পূজা ২১টি বিশেষ পাতা (পত্র) দিয়ে করেন, যাকে পত্র পূজা বলা হয়। প্রতিটি পাতা আলাদা গুণ ও আশীর্বাদের প্রতীক। দূর্বা সমৃদ্ধি, বেল পবিত্রতা এবং শমী বিজয়ের প্রতীক। এই পূজার মাধ্যমে বিঘ্নহর্তা গণপতি প্রসন্ন হন এবং জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও বাধা দূর হয়।
Ganesh Chaturthi 2025: গণেশ চতুর্থীতে দেশজুড়ে ভক্তরা গণপতি বাপ্পার মূর্তি স্থাপন করে ১০ দিন ধরে পূজা-অর্চনা করবেন। প্রথা অনুসারে, গণপতিকে মোদক, লাড্ডু এবং ২১টি বিশেষ পাতা দিয়ে পূজা করা হয়, যাকে পত্র পূজা বলা হয়। এই পাতাগুলির মধ্যে দূর্বা, বেল, শমী, তুলসী সহ অন্যান্য ২১টি পাতা অন্তর্ভুক্ত, যেগুলি আলাদা আলাদা গুণ ও আশীর্বাদের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই পূজার মাধ্যমে বিঘ্নহর্তা গণপতি শীঘ্র প্রসন্ন হয়ে জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি এবং বাধা দূর করেন।
পত্র পূজা: একটি আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান
পত্র পূজা কেবল একটি প্রথা নয়, বরং এর মধ্যে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য লুকানো আছে। শাস্ত্র অনুসারে, প্রতিটি পত্র একটি বিশেষ গুণ ও শক্তির প্রতীক। এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই পাতাগুলির মাধ্যমে গণপতি জীবনের বাধা দূর করেন এবং সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করেন। পত্র পূজার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়, কারণ এটি ভক্তদের ইতিবাচক শক্তি প্রদান করে।
গণেশ চতুর্থীতে কেন ২১টি পাতা নিবেদন করা হয়
গণেশ চতুর্থীর অনুষ্ঠানে ২১টি পাতার ব্যবহার বিশেষভাবে শুভ বলে মনে করা হয়। শাস্ত্র অনুসারে, এই সংখ্যাটি সম্পূর্ণতা, সমৃদ্ধি ও আশীর্বাদের প্রতীক। এই পাতাগুলির মধ্যে তুলসীর একটি বিশেষ স্থান আছে। সাধারণ দিনগুলিতে তুলসী পাতা গণপতিকে নিবেদন করা হয় না, কারণ পুরাণ অনুযায়ী, এক সময় তুলসী ও গণপতির মধ্যে অভিশাপের সম্পর্ক ছিল। গণেশ চতুর্থীতে ব্যতিক্রম হিসেবে এটি অর্পণ করা হয়, যার ফলে পূজা আরও ফলদায়ক হয় বলে মনে করা হয়।
২১টি পাতার তালিকা
- শমী পত্র - বিজয় ও পাপ নাশক।
- ভৃঙ্গরাজ পত্র - আয়ু ও শক্তি প্রদানকারী।
- বেল পত্র - ত্রিদেবের প্রতীক, শিব ও গণপতির প্রিয়।
- দূর্বা পত্র - গণপতির প্রিয়, সমৃদ্ধির প্রতীক।
- বের পত্র - সরলতা ও সন্তোষের প্রতীক।
- ধুতুরা পত্র - উগ্র শক্তিকে শান্ত করে।
- তুলসী পত্র - সাধারণ দিনে নয়, কিন্তু গণেশ চতুর্থীতে শুভ।
- সেম পত্র - অন্ন ও উর্বরতার প্রতীক।
- আপামার্গ পত্র - রোগ নিবারক ও শুদ্ধির প্রতীক।
- কণ্টকারী পত্র - বাধা নাশক ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন।
- সিঁদুর পত্র - সৌভাগ্য ও মঙ্গলের প্রতীক।
- তেজপাতা পত্র - সুগন্ধ, শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।
- অগস্ত্য পত্র - জ্ঞান ও শক্তির প্রতীক।
- কনের পত্র - নিडरতা ও সাহসের প্রতীক।
- কলা পাতা - সমৃদ্ধি ও উন্নতির প্রতীক।
- আক পত্র - রোগ হরণকারী এবং গণপতির প্রিয়।
- অর্জুন পত্র - ধৈর্য ও শক্তির প্রতীক।
- দেবদারু পত্র - শুদ্ধতা ও স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে।
- মরুয়া পত্র - সুগন্ধ ও পবিত্রতার প্রতীক।
- কচনার পত্র - উন্নতি ও সৌন্দর্যের প্রতীক।
- কেতকী পত্র - পবিত্রতা ও মঙ্গল কার্যের প্রতীক।
পত্র পূজার লাভ
গণেশকে ২১টি পাতা দিয়ে অর্পণ করলে শুধু ধর্মীয় লাভ হয় না, এর জীবনের উপর ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। শাস্ত্র অনুসারে, প্রতিটি পাতা বিশেষ আশীর্বাদ প্রদান করে। দূর্বা পাতা থেকে সমৃদ্ধি আসে, বেল পাতা থেকে পবিত্রতা বৃদ্ধি পায় এবং শমী পাতা থেকে বিজয় লাভ হয়। এই প্রকারে, পত্র পূজা জীবনের বাধা দূর করে সুখ-সমৃদ্ধি ও মানসিক শান্তি দেয়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
গণেশ চতুর্থীতে তুলসী পাতা অর্পণ করা একটি ব্যতিক্রম, যা পুরাণের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই ২১টি পাতার পূজার মাধ্যমে ঘরে ইতিবাচক শক্তির প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং পরিবারে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। এই পূজা শিশু ও বড় উভয়ের জন্যই আধ্যাত্মিক শিক্ষার মাধ্যম হয়ে ওঠে।