মাত্র ২৮ মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১৬৩০ ডলার থেকে ৩২৬০ ডলারে পৌঁছনো মানে ১০০ শতাংশ রিটার্ন—যা অন্যান্য বিনিয়োগ মাধ্যমের তুলনায় অভাবনীয়। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২5 সালের জুন—এই সময়ে যারা ধৈর্য ধরে সোনা ধরে রেখেছিলেন, তাঁদের পোর্টফোলিওতে রীতিমতো আলোড়ন উঠেছে। যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহে কিছুটা মূল্যহ্রাস দেখা গেছে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার অংশ এবং লং টার্মে এই খাত আবার নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে।
সঙ্কটের ছায়ায় ভরসার আলো—‘সেফ হ্যাভেন’ হিসেবেই উজ্জ্বল সোনার বাজার
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আমেরিকার ব্যাংকিং সঙ্কট, মধ্যপ্রাচ্যে বারবার অশান্তি, এমনকি চীনের রিয়েল এস্টেট খাতে ধস—এই সব অনিশ্চয়তার সময় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকছেন নিরাপদ বিকল্পের দিকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হোল্ডিং বাড়ানোও এই ধারাকে ত্বরান্বিত করেছে। ফলে সোনা শুধু গয়নার উপাদান নয়, বরং আর্থিক ঝুঁকি কমাতে তা হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।
স্বস্তির ইঙ্গিতেই দাম পড়ল? বিনিয়োগকারীদের ‘প্রফিট বুকিং’-এ চাপ সোনার উপরে
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইজরায়েল-ইরান সংঘাত দ্রুত মিটে যাওয়া এবং মার্কিন অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতার লক্ষণ দেখাতে বাজারে আতঙ্ক অনেকটাই কমেছে। সেই সঙ্গে, যাঁরা উচ্চমূল্যে সোনা কিনেছিলেন, তাঁরা লাভ তুলতে শুরু করায় বাজারে জোগান বেড়ে গেছে। ফলে এপ্রিল মাসে প্রতি ১০ গ্রামে সোনার দাম যেখানে এক লক্ষ ছুঁয়েছিল, জুনের শেষে তা ৯৬,১৮০ টাকায় নেমে এসেছে—যা এক প্রকার কারিগরি সংশোধন বলেই ধরা হচ্ছে।
কেন বলা হচ্ছে এই পতন সাময়িক? ফের দৌড় শুরু করবে সোনা?
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৪৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আগামী ১২ মাসে সোনা কেনার পরিকল্পনা করছে। এর মানে একটাই—দীর্ঘমেয়াদে চাহিদা অব্যাহত থাকবে। এমনকি, যদি মার্কিন ডলারের দাম ওঠানামা করে বা শেয়ারবাজারে বড় ধাক্কা আসে, তাহলেও বিনিয়োগকারীরা ফের ছুটে যাবেন সোনার দিকে। ফলে সোনার পতন স্বল্পমেয়াদী হলেও দীর্ঘমেয়াদে তার দাম ফের চড়তেই পারে।
সুযোগ এখনই! পতনের ছায়ায় বিনিয়োগের উজ্জ্বল সম্ভাবনা
যাঁরা স্মার্ট বিনিয়োগকারী, তাঁরা জানেন—দাম পড়া মানেই আতঙ্ক নয়, বরং সুযোগ। বর্তমান পতনকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে সোনা কেনা যেতে পারে। তবে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পোর্টফোলিওর ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি অংশ সোনায় রাখা উচিত নয়, কারণ যেকোনও এক খাতে অতিরিক্ত নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
বিশ্ব অনিশ্চয়তায় কাঁপলেও সোনার উপর আস্থা অটুট থাকবে
সোনার দাম নামতেই পারে, কিন্তু তার মূল্যবান ভাবমূর্তি বদলায় না। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতির উদ্বেগ কিংবা অর্থনৈতিক মন্দা—যেকোনও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেই সোনা হয়ে উঠেছে মানুষের ভরসার জায়গা। ফলে ভবিষ্যতের জন্য যারা আর্থিক নিরাপত্তা চাইছেন, তাঁদের জন্য সোনাই থেকে যাচ্ছে সবচেয়ে স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য পছন্দ।