বিখ্যাত ব্যবসায়ী অনিল আগরওয়ালের সংস্থা বেদান্ত গ্রুপের সহযোগী হিন্দুস্তান জিঙ্ক আবারও বিতর্কে জড়াতে চলেছে। আমেরিকার খ্যাতনামা শর্ট সেলার রিসার্চ ফার্ম ভাইসরয় রিসার্চ হিন্দুস্তান জিঙ্কের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ এনেছে। ফার্মটির দাবি, সংস্থাটি ব্র্যান্ড ফি চুক্তি নিয়ে সরকারের থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেয়নি, যা সরাসরি শেয়ারহোল্ডার চুক্তির লঙ্ঘন।
সরকারের অংশীদারিত্ব, তবুও নেওয়া হয়নি অনুমোদন
হিন্দুস্তান জিঙ্কে ভারত সরকারের ২৭.৯২ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে, যেখানে বেদান্তের কাছে ৬১.৮৪ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। তা সত্ত্বেও ভাইসরয়ের অভিযোগ, ২০২৩ সালে সংস্থাটি যে ব্র্যান্ড ফি চুক্তি করেছে, তাতে সরকারের সম্মতি নেওয়া হয়নি। এর ফলে শেয়ারহোল্ডার চুক্তির একাধিক শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বেদান্ত বা হিন্দুস্তান জিঙ্ক কেউই কোনো সরকারি মন্তব্য করেনি।
২০০২ সালের বেসরকারিকরণের স্মৃতি উস্কে দেয় এই ঘটনা
এই বিতর্কটি ২০০২ সালে হওয়া বেসরকারিকরণ চুক্তির সাথে জড়িত, যেখানে বেদান্ত হিন্দুস্তান জিঙ্কের অংশীদারিত্ব কিনেছিল। সেই সময় সরকার ও বেদান্তের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট শেয়ারহোল্ডিং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার একাধিক বিষয় উভয় পক্ষকে মানতে বাধ্য। ভাইসরয় রিসার্চের বক্তব্য, সংস্থাটি এই বিষয়গুলি উপেক্ষা করেছে।
তিনটি প্রধান বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ
ভাইসরয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী হিন্দুস্তান জিঙ্ক তিনটি প্রধান বিধান লঙ্ঘন করেছে:
- বিধান ১৪: এই বিধান সরকারি মনোনীত পরিচালকদের অনুমোদন ছাড়া বোর্ড স্তরে কোনো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত রাখে যা স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে।
- বিধান ১৬: এই বিধান অনুসারে হিন্দুস্তান জিঙ্ক, তার মতো অন্য কোনো সংস্থাকে কোনো গ্যারান্টি বা সুরক্ষা (security) দিতে পারে না।
- বিধান ২৪: এই ধারার অধীনে কোম্পানি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে ২০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বা অগ্রিম দিতে বাধ্য হতে পারে না, যতক্ষণ না বোর্ড স্তরে সুস্পষ্ট সম্মতি থাকে।
- ভাইসরয়ের দাবি, এই তিনটি বিষয়ই কোম্পানি লঙ্ঘন করেছে, এবং তা সত্ত্বেও সরকারের থেকে কোনো পূর্বানুমোদন নেওয়া হয়নি।
ব্র্যান্ড ফি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন
বেদান্ত অক্টোবর ২০২২-এ হিন্দুস্তান জিঙ্কের উপর ব্র্যান্ড ফি (Brand Royalty) ধার্য করেছিল। এই ফি গ্রুপের অন্যান্য সংস্থাগুলির মধ্যে একটি কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং কৌশলের অংশ হিসেবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ভাইসরয়ের বক্তব্য, এটি একটি অ-বাণিজ্যিক এবং পক্ষপাতদুষ্ট চুক্তি, যার উদ্দেশ্য গ্রুপের মধ্যে অর্থের হস্তান্তর।
রিসার্চ ফার্মটি আরও বলেছে যে এই ব্র্যান্ড ফি-র কোনো স্বচ্ছতা ছিল না, এবং এর তথ্য না বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছিল, না শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নিয়ে অনুমোদন করানো হয়েছিল।
ডিফল্টের আশঙ্কা এবং আইনি মোড়
ভাইসরয় রিসার্চের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে হিন্দুস্তান জিঙ্কের এই পদক্ষেপ সরাসরি ডিফল্টের পরিস্থিতি তৈরি করে। শেয়ারহোল্ডিং চুক্তির অধীনে যদি কোনো শর্তের লঙ্ঘন হয়, তাহলে বেদান্তকে ১৫ দিনের মধ্যে সমাধান করতে হবে। যদি তা না হয়, তাহলে সরকারের কাছে বিশেষ অধিকার রয়েছে।
এই অধিকারগুলির অধীনে সরকার
- বেদান্তের অংশীদারিত্ব ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে কিনতে পারে।
- অথবা বেদান্তকে এই আদেশ দিতে পারে যে সে সরকারের অংশীদারিত্ব ২৫ শতাংশ প্রিমিয়ামে কিনবে।
এই বিকল্প থেকে স্পষ্ট যে সরকারের কাছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য শক্তিশালী আইনি ও আর্থিক অধিকার রয়েছে।
শেয়ার বাজারে পড়েছে প্রভাব
এই বিতর্ক সামনে আসার পর বিএসইতে হিন্দুস্তান জিঙ্কের শেয়ার সামান্য বেড়ে ৪৩৬ টাকায় বন্ধ হয়েছে, যেখানে বেদান্তের শেয়ার ৪৪৬.২৫ টাকায় সামান্য পতনের সাথে বন্ধ হয়েছে। যদিও, বিশ্লেষকদের বক্তব্য, যদি এই মামলা আরও বাড়ে, তাহলে এর প্রভাব বেদান্তের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং শেয়ারের উপর গভীর হতে পারে।
আগেও উঠেছে প্রশ্ন
এই প্রথম নয় যে বেদান্ত বা তার সহযোগী সংস্থাগুলির উপর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগেও বহুবার কোম্পানির কাজকর্মের ধরন এবং কর্পোরেট গভর্নেন্স নিয়ে গুরুতর মন্তব্য করা হয়েছে। এইবার আমেরিকান শর্ট সেলারের রিপোর্ট এই বিতর্ককে আরও গভীর করে দিয়েছে।