অগস্ট মাসে সোনার দাম দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখী। বছরের শুরু থেকেই সোনার দর ক্রমশ বাড়ছে। মার্কিন ট্রাম্প সরকারের ট্যারিফ নীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দোলাচল এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা হল সোনার মূল চালিকা শক্তি। এই পরিস্থিতিতে শুধু ভারতীয় বাজারই নয়, বৈশ্বিক বাজারেও সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নতুন রেকর্ড গড়ছে।
জুলাই মাসের শেষের দিক: সাময়িক হ্রাস
জুলাই মাসের শেষের দিকে সোনার দাম কিছুটা কমেছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তখন শেয়ার বাজারে ডাউন ট্রেন্ড এবং আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারের অস্থিরতা দামকে সাময়িকভাবে চাপ দিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প সরকারের ভারতীয় পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধি ঘোষণা পরেই সোনার দামের পুনরায় উর্ধ্বগতি শুরু হয়।
অগস্ট মাসের সোনার দাম বৃদ্ধি
অগাস্টের প্রথম দিনে প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ছিল ৯৮,৬০০ টাকা। এই মাসের মধ্যে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০০,৬০০ টাকায়। অর্থাৎ মাসের শুরু থেকে প্রায় ২ হাজার টাকার ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই বৃদ্ধি চলতি অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাপের কারণে।
রুপোর দামেও ঊর্ধ্বগতি
সোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রুপোর দামেরও অগস্ট মাসে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। মাসের শুরুতে প্রতি কেজি রুপোর দাম ছিল ১,১০,২৫০ টাকা। বর্তমানে এটি বেড়ে হয়েছে ১,১৫,৫৫০ টাকা। অর্থাৎ অগস্ট মাসে প্রতি কেজি রুপোর দাম বেড়েছে প্রায় ৫,৩০০ টাকা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক ধাতব বাজারের চাহিদা ও সরবরাহে অস্থিরতার কারণে রুপোর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
কলকাতার বাজারে বর্তমান সোনার দর
কলকাতার বাজারে পাকা সোনার দাম বিভিন্ন ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়েছে।
পাকা সোনা বার (২৪ ক্যারাট): ১,৩০,০০০ টাকা (প্রতি ১০ গ্রাম)
পাকা সোনা বার (খুচরো): ১,০০,৬০০ টাকা (প্রতি ১০ গ্রাম)
হলমার্কযুক্ত গয়না সোনা (২২ ক্যারাট): ৯৫,৬৫০ টাকা (প্রতি ১০ গ্রাম)
সোনার বাজারে এই দরগুলোই মূল রেফারেন্স। তবে খুচরো কেনাকাটায় সাধারণত কিছুটা অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হয়।
রুপোর বর্তমান বাজারমূল্য
রুপোর দামও কলকাতার বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
রুপো (খুচরো): ১,১৫,৫৫০ টাকা (প্রতি কেজি)
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রুপোর বাজারে এই ঊর্ধ্বগতি আন্তর্জাতিক চাহিদা এবং সরবরাহের সীমাবদ্ধতার কারণে হয়েছে।
কেন খুচরোতে দাম বেশি হয়?
বাজারে গেলে এই দরে সরাসরি সোনা বা রুপো কিনতে পারবেন না। কারণ এই মূল দরের সঙ্গে যুক্ত হয় গয়না তৈরির মজুরি এবং GST। সোনার উপর ৩% GST নির্ধারিত হলেও গয়না বিক্রেতার মজুরি এবং বিভিন্ন বিপণি ফি আলাদা হতে পারে। ফলে খুচরোতে দাম আরও কিছুটা বাড়ে।
আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব
বিশ্বের বড় বড় ধাতব বাজারে সোনার চাহিদা এবং সরবরাহের ভারসাম্য ব্যাহত হওয়ায় ভারতের বাজারেও সরাসরি প্রভাব পড়েছে। ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের অস্থিরতা মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছেন। সোনা ও রুপোর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হলেও, বাজারের ওঠা-নামা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বিনিয়োগ করার সময় বাজার পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারের খবর লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সামগ্রিক চিত্র: চলতি বছরের রেকর্ড
এই বছর সোনা ও রুপোর দামের ধারাবাহিক উর্ধ্বগতি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। অগাস্ট মাসে প্রায় প্রতিটি প্রান্তিক দামে বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ঊর্ধ্বগতি চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত বজায় থাকতে পারে, যদি আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক চাপ কমে না।অগাস্ট মাসে সোনা ও রুপোর দামের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষ এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। দেশের বাজারে ক্রয়ক্ষমতা ও বিনিয়োগ পরিকল্পনার ওপর এই দাম সরাসরি প্রভাব ফেলবে। এই পরিস্থিতিতে সচেতন থাকা এবং বাজার পর্যবেক্ষণ চালানো অত্যন্ত জরুরি।