ইন্টারনেটের যুগে জ্ঞানের ভাণ্ডার
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে “গুগল” আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বইপত্র ঘেঁটে উত্তর খোঁজার যুগ অনেক আগেই শেষ। এখন এক ক্লিকেই আমরা জেনে যাই যে কোনও প্রশ্নের উত্তর। এই কারণে অনেকেই গুগলকে নিজের শিক্ষক হিসেবে ভাবেন। কিন্তু এই সুবিধার আড়ালেই লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর কিছু বিপদ, যেগুলো ভুলেও সার্চ করা উচিত নয়।
অভ্যাসে পরিণত হয়েছে সার্চ
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকে কখনও প্রয়োজনের তাগিদে, কখনও নিছক কৌতূহলবশত গুগলে সার্চ করি। রেসিপি থেকে শুরু করে চিকিৎসা, ভ্রমণ, পড়াশোনা কিংবা বিনোদন—সবকিছু গুগলের হাতের মুঠোয়। কিন্তু সব তথ্য খোঁজা সমানভাবে নিরাপদ নয়। অজান্তেই কখনও বিপদ ডেকে আনা সম্ভব।
সতর্কবার্তা দিচ্ছে বিশেষজ্ঞরা
আইন বিশেষজ্ঞ ও সাইবার নিরাপত্তা কর্মীরা বারবার সতর্ক করছেন—কিছু বিষয় এমন আছে যা গুগলে সার্চ করলে তা আইনি অপরাধ বলে গণ্য হয়। সরকার ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এমন অনুসন্ধানের ওপর নজর রাখে। ভুলবশতও যদি এই ধরণের সার্চ আপনার ডিভাইসের ইতিহাসে থেকে যায়, তবে তা বিপদের কারণ হতে পারে।
বোমা তৈরির কৌশল
সবচেয়ে বিপজ্জনক হল বোমা বা বিস্ফোরক তৈরির উপায় খোঁজা। অনেকেই নিছক কৌতূহল বা রসিকতার ছলে সার্চ করেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত বলে ধরা হয়। সাইবার সেল ও নিরাপত্তা সংস্থা এমন সার্চ শনাক্ত করলেই সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই এমন অনুসন্ধান আপনাকে জেল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
পাইরেসির ফাঁদ
সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ বিনামূল্যে দেখার জন্য অনেকেই গুগলে “ফ্রি মুভি ডাউনলোড” সার্চ করেন। এটি কপিরাইট আইন ভঙ্গের সমান অপরাধ। ভারতীয় আইনে, এই অপরাধে তিন বছরের জেল ও দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। অর্থাৎ সামান্য বিনোদনের লোভে ভবিষ্যৎ বিপন্ন হতে পারে।
হ্যাকিং টিউটোরিয়াল
গুগলে “হ্যাকিং সফটওয়্যার” বা “হাউ টু হ্যাক” সার্চ করাও বিপজ্জনক। এটি সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এই ধরণের অনুসন্ধান ধরা পড়লে কর্তৃপক্ষের সন্দেহ তৈরি হয় যে আপনি অবৈধ কাজে জড়িত। আইন অনুযায়ী এর শাস্তি সরাসরি জেল পর্যন্ত গড়াতে পারে।
শিশুদের সঙ্গে জড়িত অশ্লীল বিষয়
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধের মধ্যে একটি হল শিশুদের নিয়ে অশ্লীল বিষয়বস্তু সার্চ করা। আন্তর্জাতিক আইনে এটি চাইল্ড পর্নোগ্রাফি হিসেবে বিবেচিত হয়। এর বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শুধু সার্চ করলেই যদি ধরা পড়ে যান, জেল অনিবার্য।
অবৈধ চিকিৎসা ও গর্ভপাত বিষয়ক তথ্য
অবৈধ গর্ভপাত, নিষিদ্ধ ওষুধ বা বিপজ্জনক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কিত সার্চও আইনের চোখে অপরাধ। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভুল তথ্য ছড়ানো বা ব্যবহার করাও বড় বিপদ ডেকে আনে। তাই চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে সবসময় অনুমোদিত ও বৈধ উৎসের ওপর নির্ভর করা উচিত।
নজরদারি সর্বক্ষণ চলছে
অনেকেই ভাবেন তাঁদের সার্চ প্রাইভেট। কিন্তু বাস্তব হল, গুগল, ইন্টারনেট প্রোভাইডার এবং সরকারি নজরদারি সংস্থা—সবাই আপনার অনলাইন কার্যকলাপের রেকর্ড রাখে। তাই অবৈধ সার্চ করলে তা সহজেই ধরা পড়তে পারে।
কৌতূহল নয়, সচেতনতা জরুরি
অধিকাংশ মানুষই ভুলবশত বা মজা করে এসব সার্চ করেন। কিন্তু আইন এ ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয় না। তাই কৌতূহল মেটানোর জন্য বিপজ্জনক পথে না গিয়ে সচেতন হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
শেষ সতর্কবাণী
মনে রাখবেন, গুগল জ্ঞানের ভাণ্ডার হলেও, সবকিছু সার্চ করার জায়গা নয়। বিপজ্জনক ও অবৈধ বিষয় এড়িয়ে চলুন। কারণ এক মুহূর্তের অসতর্কতাই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
ডিসক্লেইমার
এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে লেখা। নিউজ 18 বাংলা এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে না। আইন ও সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত চূড়ান্ত পরামর্শের জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।