গ্রহের মানব জীবনে বিশেষ প্রভাব রয়েছে এবং এর মধ্যে মঙ্গল গ্রহকে "যুদ্ধ ও শক্তির দেবতা" বলা হয়। প্রতি বছর যখন মঙ্গল তার গতিপথ পরিবর্তন করে, তখন এটি আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিক—অর্থ, কর্মজীবন, বৈবাহিক জীবন এবং স্বাস্থ্য—কে প্রভাবিত করে। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর রাত ৯টা ২১ মিনিটে মঙ্গল তুলা রাশিতে প্রবেশ করবে। এই গোচরের প্রভাব কিছু রাশির জন্য বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। ধর্মীয় শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে এই সময়ে সঠিক প্রতিকার এবং সতর্কতা অবলম্বন করে এই অসুবিধাগুলি হ্রাস করা যেতে পারে।
মেষ রাশি: বৈবাহিক জীবনে সতর্ক থাকুন
মেষ রাশির জন্য মঙ্গলের তুলা রাশিতে গোচর তাদের সপ্তম ভাব, অর্থাৎ বিবাহ ও অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এই সময়টি বৈবাহিক জীবনে উত্থান-পতন এবং সঙ্গীর সাথে মতবিরোধ আনতে পারে। জীবনসঙ্গীর সাথে কথোপকথনের সময় শব্দচয়নে সতর্ক থাকা আবশ্যক। ছোটখাটো বিবাদ বড় ঝগড়ায় পরিণত হতে পারে, তাই এই সময়ে ধৈর্য ও সংযম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ধর্মীয় প্রতিকার হিসেবে মেষ রাশির ব্যক্তিদের জন্য হনুমান চালিসা পাঠ অত্যন্ত উপকারী হবে। হনুমান জি সংকট থেকে রক্ষা করেন এবং তাঁর স্মরণ মনে সাহস, শক্তি ও শান্তি সঞ্চার করে। এর পাশাপাশি, বাড়িতে লাল বস্ত্রের ব্যবহার এবং সংকটমোচন হনুমানের ছবির সামনে প্রদীপ জ্বালানোও শুভ ফল দেবে।
কর্কট রাশি: বাড়ি ও অর্থের বিষয়ে সতর্কতা
কর্কট রাশির জন্য মঙ্গলের গোচর চতুর্থ ভাব, অর্থাৎ বাড়ি, পরিবার ও সম্পত্তি সম্পর্কিত ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করবে। এই সময়ে ভূমি-ভবন সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা এবং আদালত-কাছারি সংক্রান্ত বিষয়ে সমস্যা হতে পারে। বাড়ির খরচ বাড়তে পারে এবং আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাও থাকবে।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কর্কট রাশির লোকেদের সূর্যকে জল নিবেদন করা বিশেষ লাভ দেবে। তামার পাত্রে সূর্যকে জল দিলে বাড়ির শক্তি ও অর্থ সংক্রান্ত সমস্যা কমে। এছাড়াও বাড়িতে নিয়মিত গাওয়া ঘি-এর প্রদীপ জ্বালানো, উপবাস করা এবং ধর্মীয় বই পড়া মানসিক শান্তি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়ক হবে।
কুম্ভ রাশি: পরিশ্রম ও সতর্কতার প্রয়োজন
কুম্ভ রাশির জন্য মঙ্গলের গোচর নবম ভাব, অর্থাৎ কর্মজীবন ও পেশাগত জীবনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং প্রমাণিত হতে পারে। এই সময়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং যদি আপনি অলসতা বা অবহেলা করেন তবে সাফল্য পেতে অসুবিধা হবে। কর্মজীবনে প্রত্যাশিত লাভ না পেলে মানসিক চাপ ও হতাশার অভিজ্ঞতা হতে পারে।
এই রাশির ব্যক্তিদের অর্থ সংক্রান্ত লেনদেনে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কাউকে অতিরিক্ত বিশ্বাস করা এই সময়ে উচিত হবে না। ধর্মীয় প্রতিকার হিসেবে কুম্ভ রাশির লোকেদের অভাবী ব্যক্তিদের খাদ্য বা সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দান করা উচিত। এতে কেবল পুণ্যের বৃদ্ধিই হবে না, মঙ্গলের প্রতিকূল প্রভাবও কম হবে।
মঙ্গল গোচরের সময় সতর্কতা
- ক্রোধ ও বিবাদ এড়িয়ে চলুন: মঙ্গল শক্তি ও ক্রোধের প্রতীক। এই সময় যেকোনো প্রকার বিবাদ এড়িয়ে চলা উচিত।
- ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও পূজা: বাড়িতে নিয়মিত পূজা, প্রদীপ জ্বালানো ও যজ্ঞ করলে মঙ্গলের দোষ কমে।
- ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন: মানসিক শান্তি ও ইতিবাচক মনোভাব জীবনের উত্থান-পতন মোকাবিলা সহজ করে তোলে।
- অংশীদারিত্ব ও ব্যবসায় সতর্কতা: যেকোনো প্রকার বিনিয়োগ বা অংশীদারিত্বে তাড়াহুড়ো করা থেকে বিরত থাকুন। প্রথমে ভালোভাবে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর মঙ্গল গোচর কিছু রাশির জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু সতর্কতা, সংযম ও ধর্মীয় প্রতিকার অবলম্বন করে এই প্রভাবগুলি হ্রাস করা যেতে পারে। মেষ, কর্কট ও কুম্ভ রাশির লোকেদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। হনুমান চালিসা পাঠ, সূর্যকে জল নিবেদন ও অভাবী ব্যক্তিদের দান করা মঙ্গল দোষ কমাতে সহায়ক হবে। ইতিবাচক মনোভাব ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনে সাফল্য ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।