কেন্দ্রীয় সরকার দেশের রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য ২৫,০০০ কোটি টাকার একটি সহায়তা প্রকল্প শুরু করার কথা ভাবছে। ২০২৫ থেকে ২০৩১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত চলা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল ভারতীয় রপ্তানিকারকদের, বিশেষ করে MSME সেক্টরকে সস্তা ঋণ, ব্র্যান্ডিং, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী করা।
Export Scheme: কেন্দ্রীয় সরকার রপ্তানি সংবর্ধন মিশনের (Export Promotion Mission) অধীনে রপ্তানি ক্ষেত্রকে বড় উৎসাহ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্র মারফত জানা গেছে, ২০২৫ থেকে ২০৩১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত চলা এই প্রকল্পে প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে। এর উদ্দেশ্য হল ভারতীয় রপ্তানিকারকদের, বিশেষ করে MSME সেক্টরকে সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী ঋণ সরবরাহ করা, ই-কমার্স রপ্তানিকে উৎসাহিত করা এবং বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবটি ব্যয় বিষয়ক অর্থ কমিটিতে (EFC) পাঠিয়েছে এবং অনুমোদন পাওয়ার পরে এটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সামনে পেশ করা হবে।
দুটি অংশে বিভক্ত হবে এই প্রকল্প
এই মিশনটিকে দুটি উপ-পরিকল্পনায় বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হবে ‘রপ্তানি উৎসাহ’ এবং দ্বিতীয়টি ‘রপ্তানি দিশা’।
রপ্তানি উৎসাহ প্রকল্পের জন্য ১০,০০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা হবে। এর মধ্যে, সুদ সমতাকরণ সহায়তার জন্য ৫০০০ কোটি টাকার বেশি তহবিল অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর উদ্দেশ্য হল রপ্তানিকারকদের সহজলভ্য এবং সস্তা ঋণ সরবরাহ করা, যাতে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না থাকে।
রপ্তানি দিশা প্রকল্পের জন্য ১৪,৫০০ কোটি টাকার বেশি খরচ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিদেশী বাজারের বিকাশ, ব্র্যান্ডিং, লজিস্টিক এবং গুণগত মানের অনুসরণ-সহ বিভিন্ন দিকের ওপর মনোযোগ দেওয়া হবে।
৬ বছরের জন্য রপ্তানি সংবর্ধন মিশন
সূত্র অনুসারে, প্রস্তাবিত মিশনের উদ্দেশ্য হল ব্যাপক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিশীল রপ্তানি বৃদ্ধি নিশ্চিত করা। এই মিশনটি শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ভারতীয় রপ্তানিকারকরা, বিশেষ করে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগ অর্থাৎ MSME-রা যে বাধাগুলির সম্মুখীন হয়, সেগুলি দূর করার ওপর জোর দেবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় বিষয়ক অর্থ কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। এখান থেকে অনুমোদন পেলে, এর পরে এটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সামনে পেশ করা হবে।
ই-কমার্স রপ্তানিকারকদের ওপরও ফোকাস
সরকার ই-কমার্স রপ্তানিকারকদেরও এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর অধীনে, তাদের ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। এর ফলে ছোট রপ্তানিকারকরা নগদ প্রবাহের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন এবং তারা সহজেই তাদের ব্যবসা প্রসারিত করতে সক্ষম হবেন।
এই প্রকল্পে বিকল্প বাণিজ্য অর্থায়নের উপায়গুলিকে উৎসাহিত করা এবং নগদ অর্থের অভাব দূর করার পদক্ষেপের ওপরও জোর দেওয়া হবে। এর উদ্দেশ্য হল ছোট এবং মাঝারি স্তরের রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখা।
রপ্তানির গুণমান এবং ব্র্যান্ডিংয়ের উপর জোর
রপ্তানি দিশা প্রকল্পের অধীনে গুণগত মান পূরণের জন্য ৪০০০ কোটি টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ রাখা হবে। এর ফলে বিশ্ব বাজারে ভারতীয় পণ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়বে।
এছাড়াও, বিদেশী বাজারে ভারতীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিং এবং প্রচারের জন্য একটি বড় বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রায় ৪০০০ কোটি টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ ব্র্যান্ডিং এবং বাজার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
লজিস্টিক এবং স্টোরেজ অবকাঠামোর উন্নতি
ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি হল লজিস্টিক এবং স্টোরেজের সমস্যা। এই প্রকল্পে এই ত্রুটিগুলি দূর করার জন্য ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। রপ্তানির জন্য গুদামজাত করার সুবিধা এবং লজিস্টিক নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করার ওপর সরকার বিশেষ মনোযোগ দেবে।
এর পাশাপাশি, ভারতীয় উদ্যোগগুলিকে বিশ্ব ভ্যালু চেইনের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ক্ষমতা নির্মাণের পরিকল্পনাও তৈরি করা হচ্ছে।
মার্কিন শুল্ক থেকে মুক্তি
এই প্রকল্পের একটি বড় উদ্দেশ্য হল ভারতীয় রপ্তানিকারকদের বিশ্ব বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা এবং মার্কিন শুল্কের প্রভাব থেকে রক্ষা করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক দেশ বাণিজ্য নীতি এবং শুল্কে পরিবর্তন করেছে, যার ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে তারা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।