গ্রেটার নয়ডার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে গাফিলতি: রোগীর অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

গ্রেটার নয়ডার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে গাফিলতি: রোগীর অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

গ্রেটার নয়ডার যথার্থ হাসপাতালে এক মহিলার পিত্তথলির অস্ত্রোপচারে গাফিলতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারিনী রাখি ভাটি, যিনি জিটা-১ স্থিত আম্রপালী গ্র্যান্ডের বাসিন্দা, ৩১শে মে পেটে ব্যথার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় তার পেটে দুটি পাথর ধরা পড়ে। রোগীর স্বামী এবং আইনজীবী ধীরেন্দ্র ভাটির অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি পাথর অপসারণের কথা জানালেও, দ্বিতীয় পাথর সম্পর্কে অস্পষ্ট উত্তর দেয়। ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানান, সেটি পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

অপারেশনের পরেও রাখির অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ব্যথা চলতেই থাকে, যার কারণে পুনরায় আলট্রাসাউন্ড করানো হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, পেটে ফ্লুইড, অর্থাৎ দূষিত রক্ত জমা হয়েছে, যা গুরুতর সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়। ধীরেন্দ্র ভাটির বক্তব্য, তিনি যখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই গাফিলতি নিয়ে কথা বলেন, হাসপাতাল ভুল স্বীকার করে, কিন্তু কোনো কার্যকরী চিকিৎসা বা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেনি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই গাফিলতির কারণে তার স্ত্রী শুধু শারীরিক কষ্টই পাননি, মানসিকভাবেও অত্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

সিএমও-কে অভিযোগ

এই পুরো ঘটনাটি তখন আরও গুরুতর রূপ নেয় যখন গ্রেটার নয়ডা বার অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টি নিজেদের হাতে তোলে। শুক্রবার, রোগীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র আইনজীবীরা মুখ্য চিকিৎসা আধিকারিক (সিএমও) ড. নরেন্দ্র কুমারের সঙ্গে দেখা করে যথার্থ হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। আইনজীবীরা বলেন, হাসপাতাল একটি সাধারণ অস্ত্রোপচারকে জটিল করে তুলেছে এবং রোগীর মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি করেছে।

বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি উমেশ ভাটি দেবটা এবং প্রাক্তন সম্পাদক সহ অন্যান্য আইনজীবীরা সিএমও-কে একটি স্মারকলিপি পেশ করে অবিলম্বে হাসপাতালটি সিল করার দাবি জানান। তারা বলেন, এই ধরনের ঘটনা শুধু রোগীদের জীবনের জন্য হুমকি নয়, বরং পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরও প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে। অ্যাসোসিয়েশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আইনজীবীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করবেন।

সিএমও-র তদন্ত কমিটি গঠন

ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে সিএমও ড. নরেন্দ্র কুমার তাৎক্ষণিকভাবে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটি পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করবে। ড. কুমার স্পষ্ট করেছেন যে, তদন্তে হাসপাতালের গাফিলতি প্রমাণিত হলে, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, রোগীদের নিরাপত্তা সরকারের অগ্রাধিকার এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাচারিতা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।

এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি হাসপাতালের গাফিলতিই প্রকাশ করেনি, বরং চিকিৎসার নামে কীভাবে রোগীদের আর্থিক ও মানসিক শোষণ করা হচ্ছে, তাও তুলে ধরেছে। চিকিৎসায় গাফিলতি এবং জোর করে অর্থ আদায়ের মতো ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।


যথাযথ হাসপাতালে সামনে আসা এই ঘটনাটি কেবল একজন রোগীর গল্প নয়, বরং এটি সেই বৃহত্তর সমস্যার অংশ যা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভিতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে। রোগী এবং আইনজীবীদের দাবি, হাসপাতালটি সিল করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কোনো রোগীর সঙ্গে এই ধরনের গাফিলতি না হয়। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন এই বিষয়ে কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় এবং দোষীদের কবে জবাবদিহি করে।

Leave a comment