গুরুগ্রামে টেনিস কোচ রাধিকা যাদবকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্ত তাঁর বাবা। কারণ পেশা নিয়ে বিবাদ এবং মেয়ের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা থেকে উদ্ভূত অসন্তোষ।
হরিয়ানা: গুরুগ্রামে রাধিকা যাদব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত এবং নিহত ব্যক্তির পিতা দীপক যাদবকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তদন্তে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে, যার মধ্যে বাবার মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ, সামাজিক চাপ এবং মেয়ের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রভাব প্রধান।
পুলিশ রিমান্ডের পর বিচার বিভাগীয় হেফাজতে
পুলিশ দীপক যাদবকে হেফাজতে নিয়ে কয়েকদিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। শুক্রবার তাঁর রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, তাঁকে আদালতে পেশ করা হয়, যেখানে থেকে তাঁকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ এখন ঘটনার পেছনের মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক কারণগুলি অনুসন্ধানের চেষ্টা করছে।
কাকার চাঞ্চল্যকর বয়ান
রাধিকার কাকা বিজয় যাদব জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই যখন তিনি গুলির শব্দ শুনে উপরে যান, তখন দীপক কাঁদছিল এবং বলছিল, "ভাই, কন্যাবধ হয়ে গেল! আমাকে ফাঁসি দিন।" বিজয় যাদব সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেন এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে দীপক আত্মহত্যা করতে পারে। তিনি থানায় গিয়ে কর্মকর্তাদের স্পষ্ট করে বলেন যে দীপকের উপর নজর রাখা হোক।
পরিবারে উত্তেজনা এবং আত্ম-সম্মানের সংঘাত
জিজ্ঞাসাবাদে দীপক যাদব জানিয়েছেন যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। তাঁর মনে হতো রাধিকার কারণে সমাজে তাঁকে কথা শুনতে হয়। তিনি এই বিষয়েও অস্বস্তি বোধ করতেন যে রাধিকা টেনিস প্রশিক্ষণ থেকে বাড়ির আয় বাড়াচ্ছিল এবং নিজেকে একজন তারকা মনে করত।
মিউজিক ভিডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপ নিয়ে অসন্তুষ্টি
রাধিকার ক্রমবর্ধমান সামাজিক উপস্থিতি, মিউজিক ভিডিওতে অংশগ্রহণ এবং জনপ্রিয়তা তাঁর বাবা দীপককে পীড়া দিচ্ছিল। পুলিশের সন্দেহ, এই মানসিক চাপই এই হত্যাকাণ্ডের কারণ। দীপক রাধিকাকে অনেকবার এসব কিছু ত্যাগ করতে বলেছিলেন, কিন্তু যখন সে রাজি হয়নি, তখন তিনি এই ভয়ংকর পদক্ষেপ নেন।
ঘটনার বিবরণ এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট
ঘটনার সময় বাড়ির প্রথম তলার ফ্ল্যাটে কেবল দীপক, তাঁর স্ত্রী মঞ্জু এবং রাধিকা উপস্থিত ছিলেন। রাধিকার চাচা কুলদীপ যাদব জানান, সকাল ১০:৩০ মিনিটে গুলির শব্দ শুনে যখন তাঁরা উপরে যান, তখন রাধিকা রান্নাঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল এবং তার পাশে রিভলবার ছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে যে রাধিকাকে খুব কাছ থেকে চারটি গুলি করা হয়েছিল।
চাচা এফআইআর দায়ের করেন
রাধিকার চাচা কুলদীপ যাদবই দীপক যাদবের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। তিনি পুলিশকে জানান যে তিনি রাধিকাকে রক্তে মাখামাখি অবস্থায় দেখেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ এও তদন্ত করছে যে ঘটনায় ব্যবহৃত লাইসেন্স করা রিভলভারে মোট কতগুলি গুলি ছিল।
টেনিস প্রশিক্ষণে আপত্তি ছিল বাবার
গুরুগ্রাম পুলিশ জানিয়েছে যে রাধিকা পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন এবং শিশুদের প্রশিক্ষণ দিতেন। যদিও তাঁর নিজস্ব কোনো একাডেমি ছিল না। তিনি ভাড়ায় টেনিস কোর্ট বুক করে শিশুদের কোচিং দিতেন। এতে দীপকের আপত্তি ছিল। তিনি চাইতেন রাধিকা এই কাজ বন্ধ করে দিক। এই মতবিরোধ দুজনের মধ্যে বিবাদের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।