উত্তরাখণ্ডে 'অপারেশন কালনেমি': ভুয়া সাধুদের বিরুদ্ধে অভিযান

উত্তরাখণ্ডে 'অপারেশন কালনেমি': ভুয়া সাধুদের বিরুদ্ধে অভিযান

উত্তরাখণ্ড সরকার 'অপারেশন কালনেমি' শুরু করে ভুয়া সাধুদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে। দেরাদুন-হরিদ্বারে মুসলিম ও বাংলাদেশি সহ বহু সন্দেহভাজনকে ধরা হয়েছে। এই অভিযানের উদ্দেশ্য হল কাওাড় যাত্রাকে শুদ্ধ ও নিরাপদ রাখা।

Haridwar: শ্রাবণ মাস শুরু হতেই সারা দেশ থেকে ভক্তরা কাওাড় যাত্রায় অংশ নিতে হরিদ্বারে আসেন। কিন্তু এই ধর্মীয় আস্থায় পরিপূর্ণ যাত্রাপথে কিছু অসামাজিক ব্যক্তি সাধু-সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ ধারণ করে ভক্তদের भावनाओं সঙ্গে প্রতারণা করতে শুরু করে। এমনই ভুয়া সাধু ও ঠগদের বিরুদ্ধে উত্তরাখণ্ড সরকার 'অপারেশন কালনেমি' নামে একটি বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।

অপারেশন কালনেমি কী?

উত্তরাখণ্ড সরকার শ্রাবণ মাসে কাওাড় যাত্রাকে পবিত্র ও নিরাপদ রাখতে 'অপারেশন কালনেমি' শুরু করেছে। এই নামটি রামায়ণের রাক্ষস কালনেমির থেকে অনুপ্রাণিত, যে সাধুর ছদ্মবেশ ধারণ করে হনুমানকে প্রতারণা করার চেষ্টা করে। সেই একই ভাবে, আজকের সমাজে অনেক ঠগ সাধুর ছদ্মবেশ ধারণ করে কাওাড় যাত্রায় অংশ নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামীর নির্দেশে হরিদ্বার ও দেরাদুনে এই অভিযানের অধীনে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয় এবং ভুয়া সাধুদের ধরার কাজ শুরু হয়েছে।

বহু সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে 

এ পর্যন্ত এই অভিযানের অধীনে হরিদ্বার ও দেরাদুনে ৫০ জনের বেশি সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। দেরাদুন পুলিশ অপারেশন-এর প্রথম দিনে ২৫ জন সন্দেহভাজনকে ধরে, যাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নাগরিক রুকন রকম ওরফে শাহ আলমও ছিল। তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। হরিদ্বার পুলিশ এসএসপি অজয় ​​সিংহের নেতৃত্বে আরও ২৫ জন সন্দেহভাজনকে ধরেছে। এই সকল ব্যক্তি সাধু-সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে ঠগবাজি, চুরি ও ভিক্ষা করার মতো কাজ করত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৬ জন মুসলিম যুবকও রয়েছে, যারা গেরুয়া বস্ত্র পরিধান করেছিল।

সাধু-সন্ন্যাসী ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদের সভাপতি মহান্ত রবীন্দ্র পুরী সরকারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন - 'আসল সাধু সমাজের সম্মান বজায় রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। ভুয়া সাধুদের কারণে সাধু-সন্ন্যাসীদের সম্মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাই এই অপারেশন জরুরি।' অন্যদিকে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সঙ্গে যুক্ত যশভীর মহারাজ কাওাড় যাত্রার শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য একটি আলাদা অভিযান শুরু করেছেন। তিনি 'হর-কি-পৈড়ি'তে দোকানদারদের ভগবান বরাহের ছবি এবং গেরুয়া পতাকা বিতরণ করছেন, যাতে ধর্মের নামে হওয়া ঠগবাজি বন্ধ করা যায়।

খাবার ও পানীয়ের জিনিসও পরীক্ষা করা হচ্ছে

লখনউ এবং অন্যান্য জেলাগুলিতে খাদ্য সুরক্ষা ও ঔষধ প্রশাসন (এফএসডিএ)-এর দলগুলি কাওাড় পথে অবস্থিত দোকানগুলির নিবিড় তদন্ত শুরু করেছে। ভেজাল খাবার ও দূষিত জল বিক্রি বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, কাওাড় যাত্রীদের ভাবাবেগে আঘাত না লাগে সে কারণে অনেক জায়গায় এক মাসের জন্য নন-ভেজ দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের কাওাড়িদের প্রতি আবেদন

হরিদ্বার পুলিশ কাওাড়িদের প্রতি আবেদন জানিয়েছে যে তারা যেন মূল হাইওয়ের পরিবর্তে কাওাড় পথ ব্যবহার করেন। এই বিশেষ রাস্তাটি কেবল কাওাড় যাত্রীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ভান্ডার এবং বিশ্রাম স্থানও তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও, প্রশাসন এটাও নির্দেশ দিয়েছে যে কোনও কাওাড় যেন নির্দিষ্ট উচ্চতার বেশি না হয়। উঁচু কাওাড়ের কারণে হাই টেনশন তারের জন্য দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে, তাই প্রয়োজন অনুযায়ী সেই কাওাড়গুলি ছোট করে দেওয়া হবে।

হরিদ্বারে আস্থার ঢেউ

শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া কাওাড় যাত্রায় লক্ষ লক্ষ ভক্ত হরিদ্বারে পৌঁছেছেন। গঙ্গা ঘাটে 'বম বম ভোলে'-র জয়ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। হর-কি-পৈড়িতে রাতের গঙ্গা আরতির সময় ভক্তদের বিশাল ভিড় দেখা যাচ্ছে।

Leave a comment