অগস্ট মাসে রাজস্ব বৃদ্ধির ছবি স্পষ্ট
চলতি বছরের অগস্টে গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স (GST) বাবদ সরকারের কোষাগারে ঢুকেছে ১.৮৬ লক্ষ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জিএসটি আদায়ে ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধি। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কার্যকলাপের দৃঢ়তা এবং ক্রমবর্ধমান ভোগব্যয় এই বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।
গ্রস ডোমেস্টিক রেভিনিউতে চাঙ্গা ভাব
অগস্ট মাসে গ্রস ডোমেস্টিক রেভিনিউ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৯.৬ শতাংশ বেশি। তবে ইমপোর্ট থেকে ট্যাক্স আদায়ে সামান্য পতন দেখা গেছে। অগস্টে আমদানি নির্ভর জিএসটি সংগ্রহ ১.২ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমদানি কমার কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং রুপির দোলাচল।
কাউন্সিল বৈঠকের আগে আশার আলো
আগামী ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে বসছে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক। তার আগেই এই উত্থানমুখী সংগ্রহ সরকারের কাছে ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনল। বৈঠকে কর কাঠামো ও ব্যবসাবান্ধব নীতির নতুন দিশা নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের মতে, করদাতাদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ এবং অনলাইন ফাইলিংয়ের আধুনিকীকরণ এই বৃদ্ধিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এপ্রিল মাসে ইতিহাস গড়েছিল জিএসটি আদায়
চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল মাসে রেকর্ড গড়েছিল জিএসটি আদায়। এক মাসে ২.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এপ্রিলের এই সাফল্যকে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যে কার্যকলাপের দ্রুত বৃদ্ধি এবং জিএসটি কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থার কড়াকড়ি এই সাফল্যের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
প্রথম চার মাসে ১০.৭% বৃদ্ধি
২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসে (এপ্রিল থেকে জুলাই) জিএসটি আদায় হয়েছে ৮.১৮ লক্ষ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৭ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসে সংগ্রহ হয়েছিল ৭.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি শুধু অর্থনীতির গতি নয়, সরকারের আর্থিক স্থিতিশীলতাকেও আরও মজবুত করছে।
পূর্ববর্তী অর্থবর্ষের তুলনায় ধারাবাহিক উত্থান
জিএসটি চালুর পর থেকে রাজস্ব আদায়ে ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সংগ্রহ হয়েছিল ১১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.১৮ লক্ষ কোটি টাকা। প্রতি বছর এই বৃদ্ধির হার প্রমাণ করছে অর্থনীতির ভেতরে একটি শক্তিশালী বাজারচাহিদা তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য শুভ বার্তা।
অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারাবাহিক বৃদ্ধির পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ কাজ করছে—আভ্যন্তরীণ ভোগব্যয়ের বিস্তার, ডিজিটাল ফাইলিংয়ের কারণে স্বচ্ছতা, এবং জিএসটি জালিয়াতি রুখতে প্রযুক্তিনির্ভর কঠোর নজরদারি। তাঁদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এই প্রবণতা বজায় থাকলে রাজস্ব আদায় শুধু বৃদ্ধি পাবে না, দেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অর্থায়নেও গতি আসবে।
সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ
যদিও রাজস্ব সংগ্রহে উত্থান হয়েছে, তবু সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে। আমদানি নির্ভর রাজস্ব হ্রাস, আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তা, এবং মূল্যস্ফীতির চাপ সরকারের চিন্তার কারণ। তবে অর্থনীতিবিদদের বিশ্বাস, অভ্যন্তরীণ বাজারের দৃঢ়তা এবং করদাতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।