কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সভাপতিত্বে বুধবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে কর সংস্কার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সম্ভাব্য সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে চারটি স্ল্যাবকে কমিয়ে দুটি করা, দৈনন্দিন পণ্যের উপর জিএসটি কমানো এবং বিলাসবহুল ও ক্ষতিকারক পণ্যের উপর কর বাড়ানো। বিরোধী রাজ্যগুলি রাজস্ব ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে।
কাউন্সিল বৈঠক: জিএসটি কাউন্সিলের দুই দিনের বৈঠক বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সভাপতিত্বে শুরু হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত জিএসটি সংস্কারের ঘোষণাকে কার্যকর করার বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। সম্ভাব্য বড় সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে রয়েছে চারটি কর স্ল্যাব কমিয়ে দুটি স্ল্যাব করা, টিভি, ফ্রিজের মতো দৈনন্দিন পণ্যগুলিতে জিএসটি কমানো এবং প্রিমিয়াম গাড়ি ও ক্ষতিকারক পণ্যগুলিতে কর বাড়ানো। বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলি রাজস্ব ক্ষতির জন্য কেন্দ্রের কাছে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
জিএসটি স্ল্যাব কমিয়ে দুটি করার প্রস্তাব
বর্তমানে জিএসটিতে চারটি স্ল্যাব চালু রয়েছে - ৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%। বৈঠকে আলোচনা হচ্ছে যে সেগুলিকে কমিয়ে কেবল দুটি স্ল্যাব - ৫% এবং ১৮% রাখা হবে। এর উদ্দেশ্য হল কর কাঠামোকে সরল করা এবং সাধারণ ভোক্তাদের সুবিধা দেওয়া। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই পরিবর্তনের ফলে দৈনন্দিন প্রয়োজন এবং সাধারণ পণ্যগুলিতে ভোক্তাদের খরচ কমে যাবে।
দৈনন্দিন জিনিস সস্তা হবে
বৈঠকে এটিও প্রস্তাব করা হয়েছে যে টিভি, ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজের মতো ইলেকট্রনিক পণ্যগুলিকে ২৮% স্ল্যাব থেকে সরিয়ে ১৮% স্ল্যাবে আনা হোক। এছাড়াও, ঘি, সুপারি, জলের বোতল, নোনতা খাবার, ওষুধ এবং মেডিকেল সরঞ্জামগুলির মতো দৈনন্দিন জিনিসগুলি, যা বর্তমানে ১২% স্ল্যাবে রয়েছে, সেগুলি ৫% এ আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ মুদ্রাস্ফীতি থেকে সরাসরি স্বস্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই পদক্ষেপের ফলে দেশীয় ভোগ বাড়বে এবং অর্থনীতিতে অগ্রগতি বৃদ্ধি পাবে। একই সাথে, ছোট ব্যবসায়ী এবং কৃষকরাও এর সরাসরি সুবিধা পাবেন।
বিলাসবহুল এবং ক্ষতিকারক পণ্যের উপর কর বাড়তে পারে
অন্যদিকে, সাধারণ ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি সরকার বিলাসবহুল এবং ক্ষতিকারক পণ্যগুলির উপর কর বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে। বর্তমানে প্রিমিয়াম গাড়ি এবং এসইউভিগুলিতে ২৮% জিএসটি লাগে। প্রস্তাব হল যে সেগুলিকে নতুন সংস্কারের অধীনে ৪০% পর্যন্ত করের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও, তামাক এবং মদের মতো ক্ষতিকারক পণ্যগুলিতেও অতিরিক্ত কর আরোপ করা যেতে পারে।
এর মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্য দ্বিমুখী - একদিকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া এবং অন্যদিকে রাজস্ব ভারসাম্য বজায় রাখা। আর্থিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এর ফলে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলির রাজস্বে ভারসাম্য বজায় থাকবে।
রাজ্যগুলির উদ্বেগ এবং ক্ষতিপূরণের দাবি
অন্যদিকে, বৈঠকের আগে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলির অর্থমন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন এবং কেন্দ্র সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন যে যদি ১২% এবং ২৮% স্ল্যাবগুলি সরিয়ে কেবল ৫% এবং ১৮% দুটি স্ল্যাব রাখা হয়, তবে রাজ্য সরকারগুলির আয় প্রভাবিত হতে পারে। হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, কেরালা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং পশ্চিমবঙ্গ-এর অর্থমন্ত্রীরা এই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
রাজ্যগুলির আরও বক্তব্য হল যে নতুন স্ল্যাব ব্যবস্থা দ্বারা তাদের রাজস্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বৈঠকে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে এবং এর সমাধানের সিদ্ধান্ত রাজ্যগুলির আর্থিক পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলবে।