বিহারে নির্বাচনের আগে নীতীশ কুমার তাঁর জনসভা করে রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন। তিনি কুশওয়াহা সমাজ এবং পশ্চিমি দেশগুলির মানুষকে একত্রিত করার চেষ্টা করছেন, যাতে এনডিএ-তে আসন সমঝোতায় দর কষাকষি করতে পারেন।
Bihar Politic: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য বাড়ছে। রাষ্ট্রীয় লোকসমতা পার্টির প্রধান উপেন্দ্র কুশওয়াহা বর্তমানে নিয়মিত জনসভা করছেন এবং তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। পাটনার মিলার গ্রাউন্ডে তাঁর জনসভা বিশেষ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এই জনসভাটি বিহারে সামাজিক ন্যায়বিচারের আন্দোলন শুরু করা শহীদ নেতা জগদেব প্রসাদের আত্মদান দিবসে অনুষ্ঠিত হয়।
সামাজিক ন্যায় ও জগদেব বাবুর উত্তরাধিকার
জগদেব প্রসাদকে ‘বিহারের লেনিন’ বলা হয়। তিনি দরিদ্র, দলিত এবং পশ্চিমি সমাজের কণ্ঠস্বর ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে শোষিতদের মধ্যে নব্বই শতাংশ মানুষ আছেন এবং নব্বই শতাংশ মানুষের শাসন থাকা উচিত। এই চিন্তাভাবনাই তাঁকে সামাজিক ন্যায়বিচারের সবচেয়ে বড় মুখ করে তুলেছিল। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে পুলিশের গুলিতে তাঁর আত্মদান হয়। তারপর থেকে এই দিনটি তাঁর উত্তরাধিকারকে স্মরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।
উপেন্দ্র কুশওয়াহার জাতিগত সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা
বিহারের রাজনীতি সবসময় জাতিগত সমীকরণের উপর দাঁড়িয়ে আছে। উপেন্দ্র কুশওয়াহা নিজেও কুশওয়াহা সমাজের মানুষ এবং তিনি এই সম্প্রদায়ের উপর নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। বিহারের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪.২১ শতাংশ কুশওয়াহা সমাজের, যা প্রায় ৫৫ লক্ষের বেশি। এই সম্প্রদায়ের প্রভাব রাজ্যের প্রায় ২০ থেকে ২৫টি বিধানসভা আসনে নির্ণায়ক বলে মনে করা হয়। এই কারণেই উপেন্দ্র কুশওয়াহা তাঁর রাজনৈতিক শক্তি বাড়ানোর জন্য কুশওয়াহা সমাজের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
সীমা সংস্কার ও সাংবিধানিক অধিকারের উপর জোর
পাটনার জনসভায় উপেন্দ্র কুশওয়াহার মূল ফোকাস ছিল সীমা সংস্কার এবং সাংবিধানিক অধিকারের উপর। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমি, দলিত এবং শোষিত জনগোষ্ঠীর তাদের জনসংখ্যার অনুপাতে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব না পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সামাজিক ন্যায়বিচার অসম্পূর্ণ থাকবে। এই জনসভায় বিহারের সকল জেলার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন, যা এটিকে শক্তি প্রদর্শনের রূপ দিয়েছিল।
লোকসভা নির্বাচনের হারের পর নতুন রাজনৈতিক ভূমির সন্ধান
লোকসভা নির্বাচনে হারের পর উপেন্দ্র কুশওয়াহা বিজেপির সাহায্যে রাজ্যসভার সদস্যপদ লাভ করেন। বর্তমানে তিনি জেডিইউ এবং বিজেপির সঙ্গে এনডিএ জোটের অংশ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আসন ভাগাভাগির ফর্মুলা নির্ধারিত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, তিনি ক্রমাগত জনসভা এবং শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁর দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়াতে চান।
কুশওয়াহা ভোটব্যাংকের গুরুত্ব
কুশওয়াহা সমাজকে রাজনৈতিকভাবে লাভ-কুশ সমীকরণের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সমীকরণ যাদব এবং কুশওয়াহা সমাজের একতার উপর ভিত্তি করে তৈরি। এনডিএ এই ভোটব্যাংকের গুরুত্ব বুঝতে পারে, কারণ লোকসভা নির্বাচনের সময় এই ভোট বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে অনেক আসনে ক্ষতি হয়েছিল। উপেন্দ্র কুশওয়াহা এখন নিশ্চিত করতে চান যে বিধানসভা নির্বাচনে এই ভোটব্যাংক তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকে।
জগদেব বাবুর রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা
জগদেব প্রসাদ অর্থনীতি এবং সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তিনি তাঁর পুরো জীবন দলিত, পশ্চিমি এবং সংখ্যালঘু সমাজের একতা এবং তাদের অধিকারের লড়াইয়ে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি বিহার সমাজতান্ত্রিক দলের সচিবও ছিলেন এবং রাজ্যে প্রথম অ-কংগ্রেসী সরকার গঠনে তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ওবিসি সমাজের যাদব, কুর্মি এবং কোইরি এই তিনটি জাতিকে একত্রিত করে ত্রিবেনী রাজনীতির সূচনা করেন, যা বিহারের রাজনীতিকে নতুন দিশা দিয়েছিল।
নাগমণি বনাম উপেন্দ্র কুশওয়াহা
জগদেব প্রসাদের ছেলে নাগমণি নিজেকে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী মনে করেন। তবে, উপেন্দ্র কুশওয়াহাও নিজেকে জগদেব বাবুর উত্তরাধিকারের সঙ্গে যুক্ত করেন, কারণ তিনিও কুশওয়াহা সমাজের মানুষ। এই কারণেই এবার তিনি জগদেব প্রসাদের আত্মদান দিবসে জনসভা করে তাঁর রাজনৈতিক বার্তা আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছেন।
২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচন এনডিএ-র সঙ্গে যৌথভাবে লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু আসন ভাগাভাগি এখনও সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে রয়ে গেছে। উপেন্দ্র কুশওয়াহার চেষ্টা এটাই যে জনসভা এবং জনসমর্থনের মাধ্যমে তিনি জোটের মধ্যে নিজের গুরুত্ব দেখাতে পারেন এবং বেশি আসনে দাবি করতে পারেন।