মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে ভারত-আমেরিকা শুল্ক বিতর্ক: ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক আরোপের কারণ জানাল প্রশাসন

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে ভারত-আমেরিকা শুল্ক বিতর্ক: ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক আরোপের কারণ জানাল প্রশাসন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ভারতের উপর ৫০% উচ্চ শুল্ক আরোপের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। ট্রাম্প প্রশাসন ২৫১ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে এই পদক্ষেপটি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জাতীয় নিরাপত্তা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প শুল্ক: ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে এক বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত থেকে আসা বহু পণ্যের উপর ৫০% পর্যন্ত শুল্ক (High Tariff) আরোপ করেছিলেন। এখন এই বিষয়টিই আমেরিকার শীর্ষ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। আদালতকে ট্রাম্প প্রশাসনকে জানাতে হয়েছে যে কেন ভারত-এর মতো একটি বড় বাণিজ্যিক অংশীদারের উপর এত বেশি শুল্ক আরোপ করা হল।

আদালতে পেশ হল ২৫১ পৃষ্ঠার জবাব

ট্রাম্প প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে ২৫১ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত জবাব দাখিল করেছে। এতে জানানো হয়েছে কেন ভারতের উপর এই শুল্ক আরোপ জরুরি ছিল এবং এর সঙ্গে আমেরিকার অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার কী সম্পর্ক। প্রশাসনের মতে, ভারতের উপর ২৫% পারস্পরিক শুল্ক এবং ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে মোট শুল্ক ৫০% হয়েছে।

২৭ আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর

এই শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর করা হয়েছে। অর্থাৎ, ভারত থেকে আমেরিকায় যাওয়া পণ্যের উপর এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এর ফলে ভারতের রপ্তানিকারকরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, বিশেষ করে সেইসব শিল্পগুলি যারা আমেরিকার বাজারের উপর নির্ভরশীল।

বিষয়টি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত

ট্রাম্প প্রশাসন আদালতকে জানিয়েছে যে এই সিদ্ধান্ত সরাসরি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত। ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে জ্বালানি পণ্য আমদানি করে। আমেরিকার মতে, এটি বিশ্বজুড়ে শান্তি ও নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলেছে। তাই জাতীয় জরুরি অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য ভারতের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

IEEPA-এর উল্লেখ

এই পদক্ষেপকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন IEEPA (International Emergency Economic Powers Act)-এর উল্লেখ করেছে। এই আইনটি ১৯৭৭ সালে তৈরি হয়েছিল এবং এর অধীনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অধিকার রয়েছে যে যদি কোনো আন্তর্জাতিক জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে তিনি বিশেষ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারেন।

জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক দৃঢ়তার যুক্তি

ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, শুল্ক আরোপ না করার পরিস্থিতিতে আমেরিকা বাণিজ্যিক প্রতিশোধের শিকার হতে পারত। এই পদক্ষেপ আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য জরুরি ছিল। প্রশাসন জানিয়েছে যে যদি ভারতের উপর শুল্ক আরোপ না করা হত, তাহলে মার্কিন শিল্প ও বাণিজ্যের বড় ক্ষতি হত।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি

সুপ্রিম কোর্টে আরও জানানো হয়েছে যে ভারতের উপর শুল্ক আরোপ করার পর আমেরিকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union)-এর ২৭টি দেশ এবং ৬টি অন্যান্য প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারের সঙ্গে প্রায় ২০০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে। অর্থাৎ, এই শুল্ক কৌশল আমেরিকার জন্য বিশ্বজুড়ে একটি বড় অর্থনৈতিক অস্ত্র প্রমাণিত হয়েছে।

Leave a comment