হরিয়ানায় বন্যা দুর্গতদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বড় ঘোষণা: কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, বাড়ি ও পশু-র জন্যও বিশেষ সাহায্য

হরিয়ানায় বন্যা দুর্গতদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বড় ঘোষণা: কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, বাড়ি ও পশু-র জন্যও বিশেষ সাহায্য

হরিয়ানায় বন্যা-আক্রান্ত কৃষক ও নাগরিকদের জন্য বিরাট স্বস্তি। মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সিং সাইনি প্রতি একর জমিতে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ, বাড়ি ও গবাদি পশুর ক্ষতির জন্য সহায়তার অর্থ এবং ই-ক্ষতিপূরণ পোর্টাল চালু করার ঘোষণা করেছেন।

Haryana Flood: সম্প্রতি হরিয়ানায় ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। অনেক জেলায় জলমগ্নতা, ফসলের ক্ষতি এবং বাড়িঘর ধ্বংসের খবর পাওয়া গেছে। মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সিং সাইনি বন্যা-আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং ত্রাণ কার্যক্রমের পর্যালোচনা করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে রাজ্য সরকার কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ত্রাণ থেকে বঞ্চিত করবে না।

কৃষকদের জন্য বিরাট স্বস্তি

মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে বন্যা-আক্রান্ত কৃষকদের ফসলের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তারা প্রতি একর জমিতে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন। এর জন্য ই-ক্ষতিপূরণ পোর্টাল (E-Compensation Portal) চালু করা হয়েছে, যেখানে কৃষকরা ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের নিবন্ধন করতে পারবেন। এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬৯ হাজারেরও বেশি কৃষক প্রায় ১০ লক্ষ একর জমির ফসলের ক্ষতির নিবন্ধন করেছেন।

বাড়িঘর ও অবকাঠামোরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে

বন্যার কারণে অনেক বাড়ি ভেঙে গেছে বা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে এই ধরনের সমস্ত বাড়ির সমীক্ষা করা হবে এবং তাদের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

  1. সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়া বাড়ির জন্য সমতল অঞ্চলে ১.২০ লক্ষ এবং পার্বত্য অঞ্চলে ১.৩০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।
  2. আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পাকা বাড়ির জন্য ১০ হাজার টাকা এবং কাঁচা বাড়ির জন্য ৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
  3. দোকান ও ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষতির জন্যও সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে।

ত্রাণ শিবির ও চিকিৎসা ব্যবস্থা

সরকার বন্যা-আক্রান্ত এলাকায় ৩৭৬টি ত্রাণ শিবির ও ১৩৫টি চিকিৎসা শিবির স্থাপন করেছে। ডাক্তারদের দল মোতায়েন করা হয়েছে যাতে কোনো মহামারী বা রোগের ঝুঁকি কমানো যায়। যাদের থাকার মতো বাড়ি নেই, তাদের জন্য অস্থায়ী শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বন্যার কারণে এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে এখন পর্যন্ত হরিয়ানায় বন্যা ও বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে फतेहाबाद ও ভিওয়ানিতে ৩ জন করে, কুরুক্ষেত্র ও যমুনা নগরে ২ জন করে, এবং হিসার ও ফরিদাবাদে ১ জন করে রয়েছেন। সরকার মৃতদের পরিবারকে প্রতি ব্যক্তি ৪ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

কৃষক ও পশুপালকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা

  • ১০ শতাংশের বেশি ফসল হানি হলে কৃষকদের ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রতি একর দেওয়া হবে।
  • দুধ দেওয়া পশু যেমন গরু, মহিষ ও উটনির মৃত্যুর জন্য ৩৭,৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
  • ভেড়া, ছাগল ও শূকরের জন্য ৪ হাজার টাকা এবং দুধ না দেওয়া পশু যেমন উট, ঘোড়া ও ষাঁড়ের জন্য ৩২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
  • পোল্ট্রির ক্ষতির জন্য ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হবে।

বিধায়ক ও মন্ত্রীরা এক মাসের বেতন দেবেন

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে সকল বিধায়ক ও মন্ত্রী বন্যা ত্রাণ তহবিলে এক মাসের বেতন দেবেন। এছাড়াও তিনি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও ত্রাণ তহবিলে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। জেলাগুলিতে জরুরি ত্রাণ কাজের জন্য ৩ কোটি ৬ লক্ষ টাকা সংরক্ষিত তহবিল হিসাবে প্রদান করা হয়েছে।

প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকেও সাহায্য করবে হরিয়ানা

সিএম সাইনি জানিয়েছেন যে হরিয়ানা সরকার জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবকে ইতিমধ্যেই ৫-৫ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে। এখন হিমাচল প্রদেশকেও ৫ কোটি টাকা সাহায্য দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন যে এই কঠিন সময়ে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।

সেবা পক্ষ উদযাপিত হবে

মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে ১৭ই সেপ্টেম্বর থেকে ২রা অক্টোবর পর্যন্ত সারা রাজ্যে সেবা পক্ষ উদযাপিত হবে। এর আওতায় বিধায়ক, কর্মী ও কর্মকর্তারা বন্যা-আক্রান্ত মানুষদের সাহায্য করবেন এবং জনকল্যাণমূলক কাজে অংশ নেবেন।

ত্রাণ অর্থের সম্পূর্ণ বিবরণ

  • মৃত্যুর ক্ষেত্রে – ৪ লক্ষ টাকা
  • অঙ্গহানি (৪০–৬০%) – ৭৪ হাজার টাকা
  • অঙ্গহানি (৬০% এর বেশি) – ২.৫ লক্ষ টাকা
  • সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি – ১.২০ থেকে ১.৩০ লক্ষ টাকা
  • আংশিক ক্ষতি – ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা
  • দোকান ও শিল্পের ক্ষতির জন্য – ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত
  • ফসল হানি – ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রতি একর
  • পশু হানি – ৪ হাজার থেকে ৩৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত

Leave a comment