হঠাৎ রাস্তার কুকুর তাড়া করলে এক্সপার্ট জানালেন বাঁচার সঠিক কৌশলদুইটি কাজ কখনও করবেন না!

হঠাৎ রাস্তার কুকুর তাড়া করলে এক্সপার্ট জানালেন বাঁচার সঠিক কৌশলদুইটি কাজ কখনও করবেন না!

রাস্তার কুকুরের আচমকা আক্রমণ – আতঙ্কের মুহূর্ত

আমরা অনেকেই হয়তো জীবনে অন্তত একবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, যখন নির্জন রাস্তায় বা অন্ধকার গলিতে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ এক বা একাধিক রাস্তার কুকুর আমাদের দিকে তেড়ে এসেছে। তারা ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করতে করতে আমাদের চারপাশ ঘিরে ধরে, কখনও আবার দাঁত বের করে ভয় দেখায়। এমন সময় অনেকেই ভয় পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান বা চেঁচামেচি শুরু করে দেন, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। পোষ্যপ্রেমীদের কাছেও এই আচরণ অস্বস্তিকর লাগে, কারণ সাধারণত কুকুর মানুষের বন্ধু হলেও, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। কেন এই আচরণ ঘটে? বিশেষজ্ঞদের মতে, রাস্তার কুকুর মূলত নিজের এলাকা রক্ষা করতে গিয়ে এমন করে। তারা অপরিচিত কাউকে তাদের ‘টেরিটরি’-তে দেখলেই হুমকি মনে করে। ফলে আতঙ্কিত হওয়ার পরিবর্তে ঠাণ্ডা মাথায় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়াই একমাত্র উপায়।

আচমকা বাইক তাড়া করা কুকুর – বড় বিপদ

শুধু হেঁটে যাওয়ার সময় নয়, অনেক সময় দেখা যায় চলন্ত বাইক বা স্কুটারের পেছনে তাড়া করে কুকুর ছুটে আসছে। তারা দ্রুতগতিতে ঘেউ ঘেউ করতে করতে চাকা ধরার চেষ্টা করে। রাস্তায় এ ধরনের পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ ভয়ে চালক গতি বাড়িয়ে দিলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। আগ্রার বিখ্যাত পশু চিকিৎসক ডা. সঞ্জীব নেহেরু বলছেন, এই সময়েই মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নেন। তিনি পরামর্শ দেন, এমন পরিস্থিতিতে বাইকের গতি কমিয়ে দেওয়া বা নিরাপদে দাঁড় করানোই ভালো। এতে কুকুর বুঝতে পারে যে আপনি তাদের হুমকি দিচ্ছেন না। যত বেশি গতি, তত বেশি তারা আক্রমণাত্মক হয়—এটা যেন মনে রাখেন।

চোখে চোখ রাখা – বড় ভুল

ডা. নেহেরুর মতে, কুকুরের চোখে চোখ রাখা মানে তাকে চ্যালেঞ্জ করা। এটি কখনও করবেন না। বরং চোখ নিচের দিকে রাখুন এবং সরাসরি তাকানো থেকে বিরত থাকুন। পশুর চোখের দিকে তাকানো অনেক সময় তাদের মনে আক্রমণাত্মক প্রবৃত্তি জাগিয়ে তোলে। কুকুর তখন মনে করে, আপনি তাদের মোকাবিলা করতে এসেছেন, আর সেটাই বিপজ্জনক হতে পারে। তাই, যতটা সম্ভব শান্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকুন, চিৎকার বা তীক্ষ্ণ আওয়াজ করবেন না। শব্দ বা চেঁচামেচি অনেক সময় কুকুরকে আরও উত্তেজিত করে তোলে।

ধীরে হাঁটা – আতঙ্ক না ছড়ানো

যদি আপনি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং দেখেন যে কুকুর আপনার দিকে এগিয়ে আসছে, তাহলে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াবেন না। বরং ধীরে ধীরে হেঁটে যান, যেন বোঝা যায় আপনি হুমকি নন। কুকুর খুব দ্রুত মানুষের শরীরের ভাষা বুঝতে পারে। যদি তারা বুঝে নেয় যে আপনি তাদের তাড়া করছেন না বা ভয় দেখাচ্ছেন না, তবে আক্রমণ করার সম্ভাবনা কমে যায়। এই সময়ে আপনার শরীরের অঙ্গভঙ্গি শান্ত এবং স্থির রাখুন।

মুখ ও শরীর বাঁচানোর কৌশল

হঠাৎ আক্রমণ হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজের মুখ এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বাঁচানো। অনেকেই ভয় পেয়ে হাত-পা ছুঁড়তে থাকেন, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরং হাত দিয়ে মাথা ও মুখ ঢেকে রাখুন। যদি হাতে ছাতা, ব্যাগ বা লাঠি থাকে, সেটি কুকুরের সামনে ধরে রাখুন বা বাতাসে নেড়ে দিন, যাতে তারা ভয় পায় এবং সরে যায়। মনে রাখবেন, পালিয়ে গেলে কুকুর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

খাবার ব্যবহার করে মনোযোগ সরানো

আপনার কাছে যদি খাবার বা বিস্কুট জাতীয় কিছু থাকে, তাহলে সেটি দূরে ছুঁড়ে দিন। এতে কুকুরের মনোযোগ আপনার দিক থেকে সরে গিয়ে খাবারের দিকে চলে যাবে। এই কৌশল অনেক সময় বিপদ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। তবে খাবার ছোঁড়ার সময় শান্ত ও ধীর গতিতে কাজ করুন, যাতে কুকুর বুঝতে না পারে যে আপনি আতঙ্কিত।

বিশেষজ্ঞের চূড়ান্ত পরামর্শ

ডা. নেহেরুর কথায়, কুকুর তখনই বিপজ্জনক হয়, যখন তারা ভয় পায় বা মনে করে তাদের এলাকা দখল হয়ে যাচ্ছে। তাই রাস্তার কুকুর দেখলে তাদের প্ররোচিত না করাই সবচেয়ে জরুরি। কোনও রকম উত্যক্ত করা, পাথর ছোঁড়া বা লাঠি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করবেন না। এতে তারা আরও ভয় পেয়ে আক্রমণ করতে পারে। যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, আশেপাশের মানুষকে সাহায্যের জন্য ডাকুন।এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এখানে দেওয়া তথ্য সাধারণ জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ থেকে সংগৃহীত। প্রয়োগের আগে অবশ্যই নিজের পরিস্থিতি বিচার করুন এবং প্রয়োজনে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা পশু চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

Leave a comment