হাজারিবাগে আদিবাসী বীর সিদো-কানহুর মূর্তি ১৫ দিনে দ্বিতীয়বার ভাঙা হলো। কর্ম পূজার আগের সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটার পর ক্ষুব্ধ জনতা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় এবং পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।
হাজারিবাগ: ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ শহরে কর্ম পূজার আগের সন্ধ্যায় আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামী সিদো ও কানহুর মূর্তি আবারও ভাঙা হয়েছে, যা মানুষের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। মঙ্গলবার সকাল প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ এই ঘটনা ঘটার পর স্থানীয় গ্রামবাসী ও নাগরিকরা সদানন্দ রোড ও কোরহ রোড মোড়ে কয়েক ঘন্টা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পুলিশ জানিয়েছে যে অন্ধকারের এবং বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা মূর্তিগুলি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আধিকারিকরা দোষীদের শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন।
১৫ দিনে দ্বিতীয়বার এই ঘটনা
প্রায় ১৫ দিন আগেও সিদো-কানহুর মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু সেবার দোষীদের শনাক্ত করা যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের অবহেলার কারণেই এই দ্বিতীয় ঘটনা ঘটেছে। আগের ঘটনায় দুষ্কৃতীরা কলেজের কাছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে.বি. সহায়-এর মূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।
স্থানীয় আদিবাসী সমাজের বক্তব্য, সিদো ও কানহু তাঁদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। তাই মূর্তি ভাঙা সম্প্রদায়ের ভাবাবেগকে আঘাত করার সামিল।
অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ভাঙচুর
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনাটি মঙ্গলবার সকাল প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘটেছে। রাতের টহলদারিতে মূর্তিগুলি অক্ষত অবস্থায় ছিল। আধিকারিকদের ধারণা, ভোরের আগে ভারী বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা মূর্তিগুলি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
পুলিশের সন্দেহ, অন্ধকার ও বৃষ্টির আড়ালে অপরাধীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এসপি স্তরের আধিকারিক ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তিনি আরও জানান যে সিসিটিভি ফুটেজ এবং আশেপাশের মানুষের বয়ানের ভিত্তিতে দোষীদের শনাক্ত করা হবে।
স্থানীয়রা ঘটনার পর রাস্তায় নামেন
খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয়দের এক বিশাল ভিড় ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে দিতে সদানন্দ রোড ও কোরহ রোড মোড়ে পিডব্লিউডি চক দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করে রাখেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ লাগাতার উদাসীন রয়েছে এবং দোষীদের আড়াল করছে। তাঁরা দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করার দাবি জানান। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অমিত কুমার আনন্দ আশ্বাস দিয়েছেন যে দোষীদের শনাক্ত করে শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে। এই আশ্বাসের পর মানুষ অবরোধ তুলে নেন এবং পরিস্থিতি শান্ত হয়।
মূর্তিগুলি আদিবাসী সমাজের পরিচয় ও গৌরবের প্রতীক
সিদো ও কানহু মুর্মু ছিলেন দুই ভাই, যাঁরা ১৮৫৫-৫৬ সালে ব্রিটিশ শাসন এবং স্থানীয় জমিদারদের বিরুদ্ধে সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আদিবাসী সমাজে তাঁদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রদূত এবং নায়ক হিসেবে সম্মান জানানো হয়।
তাঁদের মূর্তিগুলি আদিবাসী সমাজের পরিচয় ও গৌরবের প্রতীক। তাই এই মূর্তিগুলির বিরুদ্ধে হওয়া ভাঙচুর সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর সংবেদনশীলতা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। সমাজকর্মী ও স্থানীয় নেতাদের মতে, প্রশাসনকে এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।