কর্ণাটকের হাসান জেলায় গত এক মাসের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের কারণে ১৮ জনের মৃত্যু রাজ্য সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই মৃত্যুগুলির মধ্যে উদ্বেগের বিষয় হল, মৃতদের বেশিরভাগের বয়স ছিল ৪৫ বছরের কম, এবং অনেকের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। এই হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া মৃত্যুর সংখ্যা শুধু প্রশাসনকে সতর্ক করেনি, রাজ্য সরকারও এর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাও এটিকে অত্যন্ত গুরুতর বলে মনে করছেন এবং বলেছেন যে এটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয় এবং এই মৃত্যুগুলির গভীর তদন্ত প্রয়োজন। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন যে হার্ট অ্যাটাকের ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের একটি দল গঠন করা হোক, যারা পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ করে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করবে।
বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষা থেকে মিলবে দিশা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাও সোমবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ পোস্ট করে বলেছেন যে হাসান জেলায় এক মাসের মধ্যে ১৮টি হার্ট অ্যাটাকের ঘটনাকে স্বাস্থ্য বিভাগ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। আমি ইতিমধ্যেই 'জয়দেব ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওভাসকুলার সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ'-এর পরিচালকের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দলকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এই দল ১০ দিনের মধ্যে একটি স্টাডি রিপোর্ট পেশ করবে।”
রাও বলেছেন যে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই 'পুনীত রাজকুমার হৃদয়া জ্যোতি' প্রকল্পের অধীনে হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য কাজ করছে, তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে গভীর গবেষণা প্রয়োজন। তিনি স্বীকার করেছেন যে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে, তবে তরুণদের মধ্যে এই ধরনের হঠাৎ মৃত্যু উদ্বেগের বিষয়।
হার্ট অ্যাটাক কি এবং কেন হয়?
হার্ট অ্যাটাক, যা চিকিৎসা পরিভাষায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন নামে পরিচিত, তখন হয় যখন হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী করোনারি ধমনীতে বাধা সৃষ্টি হয়। এই বাধা সাধারণত ধমনীতে কোলেস্টেরল জমা হওয়া বা রক্তের জমাট বাঁধার কারণে হয়। যখন হৃদপিণ্ডের পেশী প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না, তখন সেই অংশের ক্ষতি হতে শুরু করে এবং সময় মতো চিকিৎসা না হলে তা জীবনের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদরোগের ক্ষেত্রে বংশগত কারণের পাশাপাশি জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ এবং ব্যায়ামের অভাব এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই লক্ষণগুলো উপেক্ষা করবেন না
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা এবং সময় মতো চিকিৎসা করানো জীবন বাঁচাতে পারে। বুকে চাপ বা আঁটসাঁট ভাব, পিঠ, চোয়াল বা বাহুতে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঘোরা, অস্থিরতা এবং বমি বমি ভাব-এর মতো উপসর্গ হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। ডাক্তারদের মতে, যদি কারো এমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে তাকে অবিলম্বে চিকিৎসা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং দেরি না করে হাসপাতালে যেতে হবে।
সরকারের কড়া পদক্ষেপ এবং সমাধানের দিকে পদক্ষেপ
হাসান জেলায় হার্ট অ্যাটাকের কারণে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু নিয়ে সরকারের মনোযোগ এখন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার দিকে। 'পুনীত রাজকুমার হৃদয়া জ্যোতি'-এর মতো প্রকল্পগুলি হৃদরোগের প্রাথমিক পরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য চালু করা হচ্ছে। এখন সরকার চায় যে এমন ঘটনাগুলির গভীরে গিয়ে কেবল কারণগুলি খুঁজে বের করা হোক তা নয়, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনাগুলোও প্রতিরোধ করা যায়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, সরকার রিপোর্ট পাওয়ার পরে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করবে। এই পুরো ঘটনাটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে হৃদরোগ এখন শুধুমাত্র বয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তরুণদের জন্যও একটি গুরুতর হুমকি হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা-ই একমাত্র সমাধান।