২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত ২৫ বছর মেয়াদী চুক্তির অধীনে, আদানি পাওয়ারকে গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত সমস্ত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ-কে সরবরাহ করার কথা ছিল।
আদানি পাওয়ার এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ২০১৭ সালে ২৫ বছর মেয়াদী বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির অধীনে, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় অবস্থিত ১,600 মেগাওয়াটের ডেডিকেটেড তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশকে ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা ছিল। এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে।
জুনে ৪৩৭ মিলিয়ন ডলারের রেকর্ড পরিশোধ
বাংলাদেশ জুন ২০২৫-এ আদানি পাওয়ারকে ৪৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এককালীন পরিশোধ, যার মধ্যে সমস্ত বকেয়া, বহন খরচ এবং বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সম্পর্কিত বিষয়গুলির সমাধান অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে আদানি পাওয়ারের আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কোম্পানির সুনাম বেড়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত পরিশোধ চলছে
সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ গত তিন থেকে চার মাস ধরে প্রতি মাসে ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছে। জুনে এককালীন অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ দুই মাসের বিলিংয়ের সমপরিমাণ লেটার অফ ক্রেডিট (Letter of Credit) এবং সরকারি গ্যারান্টিও প্রদান করেছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার সম্পূর্ণ ক্ষমতায় শুরু
এখন যেহেতু সমস্ত আর্থিক বাধা দূর হয়েছে, বাংলাদেশ আদানি পাওয়ারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার করার জন্য অনুরোধ করেছে। কোম্পানি বর্তমানে গোড্ডা প্রকল্পের উভয় ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এই সরবরাহ বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সময়সূচী অনুযায়ী চলছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সংকট বাধা সৃষ্টি করেছিল
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ, ডলারের ক্রমবর্ধমান মূল্য এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিশোধে বাধা সৃষ্টি করেছিল। আগস্ট ২০২৪-এ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। পরিশোধের অভাবে নভেম্বর ২০২৪-এ আদানি পাওয়ার তাদের সরবরাহ অর্ধেক করে দেয়। যদিও, মার্চ ২০২৫ থেকে বকেয়া পরিশোধ শুরু হওয়ার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়।
সরকার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (PPA) তদন্ত করেছে
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন ইউনুস সরকার আদানি পাওয়ারের সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (PPA) পর্যালোচনা করেছে। এই তদন্তে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে যে চুক্তিটি স্বচ্ছ ছিল এবং উভয় দেশের স্বার্থে ছিল। এটি আদানি পাওয়ারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।
গোড্ডা প্ল্যান্ট বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সস্তা সরবরাহের উৎস
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের মেরিট অর্ডার ডিসপ্যাচ (Merit Order Dispatch) অনুসারে, গোড্ডা প্ল্যান্ট বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এই প্ল্যান্ট থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ দেশের অন্যান্য উৎসের তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে উপলব্ধ। এই কারণে, এই প্ল্যান্টটি বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
ক্রেডিট রেটিং-এর উন্নতি হতে পারে
এখন যেহেতু আদানি পাওয়ারের আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল হয়েছে এবং কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং AA থেকে AA+ এ উন্নীত করা যেতে পারে। এর ফলে কোম্পানিকে মূলধন সংগ্রহ করতে সুবিধা হবে এবং সুদের হারও কমতে পারে।
গোড্ডা প্রকল্পের সহায়ক ইউনিটের একত্রীকরণ
আদানি পাওয়ার গোড্ডা প্রকল্পের মূল সহায়ক কোম্পানিকে এখন মূল কোম্পানির সঙ্গে একীভূত করেছে। এর ফলে পরিচালন সমন্বয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খরচও কমেছে। কোম্পানি বর্তমানে এই প্ল্যান্টটি সরাসরি তাদের মূল কাঠামোর অধীনে পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং IMF থেকে সাহায্য
বাংলাদেশ বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুতের অভাব এবং ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে সরকারের উপর চাপ বেড়েছে। এরই মধ্যে, ইউনুস সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর কাছে ৩ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত সাহায্যের আবেদন করেছে। এর আগে, IMF বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের একটি বেলআউট প্যাকেজ প্রদান করেছে।
মূল পরিসংখ্যান যা পুরো পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে:
- পরিশোধের পরিমাণ: ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার (জুনে)
- সরবরাহের উৎস: ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা প্ল্যান্ট (১,600 মেগাওয়াট ক্ষমতা)
- বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার অংশ: প্রায় ১০ শতাংশ
- পরিশোধের নিয়মিততা: গত ৩-৪ মাস ধরে প্রতি মাসে ৯০-১০০ মিলিয়ন ডলার
- নতুন সরকারি গ্যারান্টি: দুই মাসের এলসি এবং সার্বভৌম গ্যারান্টি
- সরবরাহের অবস্থা: উভয় ইউনিট থেকে সম্পূর্ণ সরবরাহ পুনরুদ্ধার
- PPA-এর বৈধতার নিশ্চয়তা: নতুন সরকারের তদন্তে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি
- সম্ভাব্য ক্রেডিট রেটিং: AA থেকে বেড়ে AA+ হতে পারে