শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমায় ভাই-বোনের ভালোবাসার প্রতীক রাখি বন্ধন পালিত হয়। এই বছর ২০২৫ সালের ৯ই আগস্ট, শনিবার এই উৎসব পালিত হবে। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধে এবং তার জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু কামনা করে। অন্যদিকে ভাই বোনকে সারা জীবন রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
রাখি শুধু সুতো নয়, একটি পবিত্র প্রতীক
রাখি কেবল রেশমি বা সুতির সুতো নয়, এটি ভাই-বোনের সম্পর্কের আবেগপূর্ণ ও আধ্যাত্মিক প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি এমন একটি বন্ধন, যাতে ভালোবাসা, আশীর্বাদ ও রক্ষার অনুভূতি লুকানো থাকে। রাখি বাঁধার পরে অনেকে এটি দীর্ঘ সময় ধরে হাতে রাখেন, কিন্তু অনেকেই জানেন না যে কত দিন পর্যন্ত এটি পরা উচিত।
রাখি কতদিন পরা উচিত, জেনে নিন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, রাখি তৎক্ষণাৎ খুলে ফেলা শুভ মনে করা হয় না। এটি কমপক্ষে একদিন অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত হাতে রাখা উচিত। এর পেছনে এই বিশ্বাস রয়েছে যে, যে সুতোয় বোনের শ্রদ্ধা ও রক্ষার ভাবনা মিশে আছে, তা তৎক্ষণাৎ সরিয়ে ফেলা অশুভ।
কিছু বিশ্বাস অনুযায়ী, রাখি তিন, সাত বা এগারো দিন পর্যন্ত পরা যেতে পারে। আবার, অন্য একটি প্রথা অনুযায়ী, শ্রাবণ পূর্ণিমা থেকে ভাদ্র অমাবস্যা পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ১৫ দিন রাখি হাতে রাখা যায়। অনেক বাড়িতে এটি জন্মাষ্টমী বা গণেশ চতুর্থী পর্যন্তও খোলা হয় না।
পিতৃপক্ষের আগে রাখি খোলা কেন জরুরি মনে করা হয়
পিতৃপুরুষের পক্ষ অর্থাৎ পিতৃপক্ষ হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে অত্যন্ত পবিত্র ও শ্রদ্ধার সময়। এই সময় নতুন উৎসব বা মাঙ্গলিক বস্তু গ্রহণ করা হয় না। তাই রাখি, যা একটি উৎসবের প্রতীক, তা পিতৃপক্ষ শুরু হওয়ার আগে খুলে দেওয়া উচিত বলে মনে করা হয়।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাখি কত দিন পর্যন্ত পরা উচিত
যদি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণের কথা বলা হয়, তবে রাখি হল একটি সুতো, যা সময়ের সাথে সাথে নোংরা হতে শুরু করে। এটি ধুলো, মাটি, ঘাম ও জলের সংস্পর্শে আসার কারণে নোংরা হয়ে যায়, ফলে এতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। এর থেকে ত্বকের সংক্রমণ-এর মতো সমস্যা হতে পারে।
তাই রাখি ততক্ষণই পরা উচিত যতক্ষণ সেটি পরিষ্কার ও ভালো অবস্থায় থাকে। যদি সেটি ঘষতে শুরু করে বা তাতে নোংরা লাগে, তবে সেটি সরিয়ে দেওয়া উচিত।
রাখি খোলার পরে কী করবেন, এটি হল ঐতিহ্যপূর্ণ নিয়ম
রাখি একটি ধর্মীয় বস্তু, তাই এটিকে সম্মানের সাথে সরানো উচিত। এটি যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া অশুভ মনে করা হয়। যখনই রাখি হাত থেকে খুলবেন, তখন এটিকে কোনো পবিত্র স্থানে বিসর্জন দিন।
- আপনি রাখিকে কোনো বহমান জলে প্রবাহিত করতে পারেন।
- যদি সম্ভব না হয়, তবে এটিকে কোনো তুলসী গাছের গোড়ায় পুঁতে দিতে পারেন।
- একটি বিকল্প হল রাখিকে কোনো বট বা নিম গাছের ডালে বেঁধে দেওয়া।
এইভাবে রাখি বিসর্জন করলে পরিবেশেরও ক্ষতি হয় না এবং ধর্মীয় ভাব বজায় থাকে।
বোনের অনুভূতির প্রতি সম্মান জানান
ভাইয়ের জন্য রাখি শুধু একটি সুতো নয়, বোনের অনুভূতি, তার ভালোবাসা ও ভরসার প্রতীক। যখন সে রাখি বাঁধে, তখন তাতে শুধু তার শুভকামনাই থাকে না, বরং একটি অদৃশ্য শক্তিও থাকে, যা ভাইয়ের সুরক্ষার জন্য প্রকাশিত হয়। তাই রাখি খোলার নিয়মও তেমন হওয়া উচিত, যেমন কোনো পূজার সামগ্রীর সাথে করা হয়।
রাখি পরার পরে রোজকার অভ্যাসে কীভাবে এর যত্ন নেবেন
যদি আপনি হাতে রাখি বেঁধে রাখেন এবং রোজকার কাজের সময় হাত বার বার ভিজে যায়, তবে রাখি তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে রেশমি ও কাঁচা সুতো দিয়ে তৈরি রাখি তাড়াতাড়ি ঘষে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে জরুরি হল রাখিকে শুকনো রাখা এবং প্রয়োজন হলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা। চেষ্টা করুন হাত ধোয়ার সময় সেটি যেন ভিজে না যায় বা তাতে সাবান ইত্যাদি না লাগে।
পরিবর্তনশীল সময়ে রাখির রূপও বদলেছে
আজকাল বাজারে অনেক ধরনের রাখি পাওয়া যায়, যেমন - কড়ার মতো, চামড়ার, রেশমের, পাথর বসানো ও সাজসজ্জার রাখি। কিছু লোক স্টীল বা গোল্ড-কোটেড রাখিও পছন্দ করেন, যা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হাতে রাখা যায়। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে কাঁচা সুতোর রাখিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যাতে শ্রদ্ধার অনুভূতি বেশি থাকে বলে মনে করা হয়।
প্রত্যেক রাখির নিজস্ব একটি অনুভূতি থাকে
প্রত্যেক বোন তার রাখির মাধ্যমে তার ভাইয়ের জন্য আলাদা অনুভূতি প্রকাশ করে। কোনো রাখিতে ভালোবাসা থাকে, কোনোটিতে চিন্তা, তো কোনোটিতে আশীর্বাদ। এটাই কারণ যে রাখি খোলার আগে সেই অনুভূতিকেও সম্মান দেওয়া জরুরি। রাখি একদিন রাখা হোক বা দশ দিন, এর পেছনে লুকানো অনুভূতিকে বোঝাই হল উৎসবের আসল তাৎপর্য।