শনিবার সন্ধ্যায় হাওড়ার ব্যস্ততম রাস্তায় ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ধর্মতলা-দানেশ শেখ লেন রুটের একটি দ্রুতগামী মিনিবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে রাস্তার ধারে একটি ল্যাম্পপোস্টে। ঘটনাস্থলেই ছিটকে পড়েন একাধিক যাত্রী। মুহূর্তের মধ্যে তৈরি হয় আতঙ্কের পরিবেশ।
স্থানীয়দের তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধার অভিযান, পুলিশও ছুটে আসে
দুর্ঘটনার শব্দে তড়িঘড়ি ছুটে আসেন আশপাশের দোকানদার ও পথচলতি মানুষ। রক্তাক্ত অবস্থায় যাত্রীদের উদ্ধার করতে শুরু করেন তাঁরা। কিছু সময় পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হাওড়া থানার পুলিশবাহিনী। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্থানীয়দের এই সাহসিকতা প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রশাসনের।
আহত অন্তত ১৮, কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায়
এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৮ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র। বেশ কিছু যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হলেও কয়েকজনের শরীরে গভীর আঘাত রয়েছে। তাঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক দল।
ব্রেক ফেলই কারণ? তদন্তে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে বাসটির ব্রেক ফেল করায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার একদিকে থাকা দোকান ও ল্যাম্পপোস্ট দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। বাসটির সামনে ও ডানদিকের অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। তদন্ত চলছে বাস চালকের লাইসেন্স ও বাসের সার্ভিসিং সংক্রান্ত নথি ঘিরে।
ট্রাফিকের দফায় দফায় বিঘ্ন, ব্যস্ত সময়ে থমকে যায় যাতায়াত
দুর্ঘটনার জেরে ফরশোর রোডের একদিকের যান চলাচল পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে কাজ থেকে ফেরা যাত্রীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। পুলিশ বাহিনীর তৎপরতায় কিছু সময় পর ধাপে ধাপে ট্রাফিক স্বাভাবিক হলেও যানজটে আটকে পড়ে বহু গাড়ি।
হাওড়ার ডিসিপি ট্রাফিক জানালেন ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি
হাওড়ার ডিসিপি ট্রাফিক সুজাতা কুমারী সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘বাসটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে একটি দোকান ও পাশের ল্যাম্পপোস্টে। আহতদের বেশ কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে দু’জনের অবস্থা গুরুতর, তাঁদের হাওড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
আহত যাত্রীর মুখে ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনা
এক আহত যাত্রী বলেন, ‘বাসটা খুব দ্রুত যাচ্ছিল। হঠাৎ ফোরশোর রোডে এসে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা মারে এক পোস্টে। আমরা কেউ বুঝতেই পারিনি কী হচ্ছে। আমার হাত বেশ ফুলে গিয়েছে, প্রচণ্ড ব্যথা করছে।’ এই ঘটনায় বাস চালকের বেপরোয়া মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা।
পুরনো বাস ও অনিয়মিত রুটে চলা গাড়ি নিয়ে প্রশ্ন
এই দুর্ঘটনার পরে আবারও সামনে এল প্রশ্ন—বহু পুরনো মিনিবাস কেন এখনও শহরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ায়? রুটে নিয়মিত নজরদারি ও বাসের ফিটনেস যাচাই কি হয় যথাযথ? ট্র্যাফিক পুলিশ জানিয়েছে, তারা বাসটির বৈধতা পরীক্ষা করে আইনানুগ পদক্ষেপ করবে।