প্রবল বর্ষণের এক ঘণ্টায়ই ডুবে গেল হাওড়া শহরের রাজপথ
শনিবার দুপুরে আচমকাই ঝেঁপে নামা ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ল গোটা হাওড়া শহর। মাত্র এক ঘণ্টার টানা বর্ষণে হাঁটুসমান জল জমে যায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। রাজপথে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় নাকাল সাধারণ মানুষ—কারও পা জল ঠেলে, কারও হাতে স্কুটার ঠেলে—জলই যেন হাওড়াবাসীর নিয়তি হয়ে দাঁড়ায় এই বর্ষায়।
হাওড়া ময়দান থেকে কদমতলা—জলমগ্ন শহরের একাধিক ওয়ার্ড
এই স্বল্প সময়ের বৃষ্টিতেই হাওড়ার ময়দান, চার্চ রোড, মহাত্মা গান্ধী রোড, পঞ্চাননতলা রোড, কদমতলা–সহ অন্তত এক ডজন ওয়ার্ডে জল জমে যায়। প্রতিটি এলাকায় জলস্তর ছিল হাঁটু ছুঁইছুঁই। বাজার, বাসস্টপ, স্কুল গেট—জলের কবলে আটকে পড়ে শহরজুড়ে স্বাভাবিক জনজীবন। শিশু, বৃদ্ধ কিংবা কর্মজীবী, কেউই রেহাই পাননি।
রাস্তায় জল ঠেলে হাঁটছেন মানুষ, বিকল যানবাহন মাঝ রাস্তায় থমকে
জলের নিচে রাস্তা ঢাকা পড়ে যাওয়ায় পথচারীরা নাজেহাল। কেউ গুটিয়ে ফেলেছেন প্যান্ট, কেউ তুলে ধরেছেন জামা, কেউ আবার জলে ভিজেই এগিয়ে চলেছেন গন্তব্যের দিকে। বাইক ও স্কুটারের মতো হালকা যানবাহনগুলি মাঝরাস্তাতেই বিকল হয়ে পড়ে। চালকেরা বাধ্য হয়ে গাড়ি ঠেলে নিয়ে যান পাশের ফুটপাথে।
দোকানে ঢুকছে জল, যানজটে স্থবির শহর
জল ঢুকেছে বহু দোকানেও। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতেই দোকানের ভিতরে ঢুকে পড়েছে ময়লা জল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জিনিসপত্র। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সি, বাস, অটো কোনও কিছুই চলতে পারেনি। যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে শহরের প্রধান রাস্তাগুলিতে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা।
ঝড়-বৃষ্টিতে গাছ ভেঙে রাস্তায় বিপর্যয়, শালিমারে যান চলাচল বন্ধ
বর্ষণের সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়াও বইতে শুরু করে। তার ফল, শালিমার অঞ্চলে রাস্তার ধারে একটি পুরনো গাছ ভেঙে পড়ে। গাছের ডাল ও গুঁড়ি রাস্তাজুড়ে পড়ে থাকায় যান চলাচল পুরোপুরি থমকে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই গাছ সরানোর চেষ্টা করলেও সঠিক যন্ত্রপাতি ছাড়া তা সম্ভব হয়নি। কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তখনও পৌঁছয়নি উপযুক্ত সাহায্য।
কর্পোরেশনের দাবি—পাম্প চালু, জল বের করার কাজ চলছে
এই বৃষ্টির পর শহরজুড়ে জলমগ্ন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায়, হাওড়া কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তৎপরতা দেখানোর চেষ্টা করা হয়। কর্পোরেশনের তরফে জানানো হয়েছে, দ্রুত জল নিষ্কাশনের জন্য শহরের একাধিক এলাকায় পাম্প চালু করা হয়েছে। সাফাই কর্মীরা নেমেছেন ম্যানহোল পরিষ্কারে ও জল বার করার কাজে। তবে বাস্তবে তার কতটা প্রভাব পড়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আবারও কাঠগড়ায় হাওড়ার নিকাশি ব্যবস্থা, ক্ষুব্ধ নাগরিকরা
প্রতিবারের মতো এবারও শহরবাসীর একটাই প্রশ্ন—প্রতিবছর বর্ষায় হাওড়ার একই দশা কেন হয়? জল জমা ঠেকাতে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না কেন? মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে যদি গোটা শহর থমকে যায়, তবে আগামী কয়েক সপ্তাহের ভারী বৃষ্টির মোকাবিলা কীভাবে করবে প্রশাসন? প্রশ্ন তুলছেন নাগরিকরা।
ঘণ্টাখানেকেই মুখ থুবড়ে পড়ল নাগরিক পরিকাঠামো, আশু ব্যবস্থা চাই
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফের একবার স্পষ্ট হল—হাওড়ার নিকাশি ব্যবস্থা আদতে ভঙ্গুর। নগরবাসী আশঙ্কায় রয়েছেন, বর্ষা যত গড়াবে, তত বাড়বে জল জমার প্রকোপ। কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এখন যতই তৎপরতা দেখান, ততদিনে শহরের মানুষের দুর্ভোগ চরমে। প্রশাসনের কাছে তাই এখন একটাই দাবি—বৃষ্টির আগে পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা চালু করা হোক।