আয়কর রিটার্ন দাখিল: সময়সীমা, জরিমানা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আয়কর রিটার্ন দাখিল: সময়সীমা, জরিমানা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

যদি আপনি এখনও পর্যন্ত আপনার ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল না করে থাকেন, তাহলে এখনও আপনার কাছে সুযোগ আছে। এইবার সরকার করদাতাদের স্বস্তি দিয়ে আইটিআর ফাইল করার শেষ তারিখ ৩১ জুলাই থেকে বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ করেছে। অর্থাৎ, এখন মানুষজন অতিরিক্ত ৪৫ দিন সময় পাচ্ছেন। কিন্তু এই সময়টা শুধুমাত্র সুবিধার জন্য, যারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না তাদের জন্য নয়।

দেরিতে ফাইলিং করলে জরিমানা ও সুদ লাগতে পারে

যদি কোনো করদাতা ১৫ সেপ্টেম্বরের পরে রিটার্ন ফাইল করেন, তাহলে তাকে ইনকাম ট্যাক্স আইনের অধীনে জরিমানা ও সুদ দুটোই দিতে হতে পারে। জরিমানার পরিমাণ আয়ের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। এছাড়া, ট্যাক্স বাকি থাকলে প্রতি মাসে ১ শতাংশ হারে সুদও দিতে হয়।

আয়ের ভিত্তিতে দেরির জন্য জরিমানা লাগবে

সরকার আইটিআর ফাইলিং-এ দেরি করলে জরিমানার পরিমাণ আয়ের ভিত্তিতে নির্ধারণ করেছে।

  • যদি আপনার বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার কম হয়, তাহলে জরিমানা ১০০০ টাকা লাগবে।
  • যদি আয় ৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তাহলে জরিমানা ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বকেয়া ট্যাক্সের উপর আলাদা করে সুদ লাগবে

যদি আপনি ট্যাক্স জমা দিতেও দেরি করেন, অর্থাৎ বকেয়া ট্যাক্স থেকে যায় এবং তা নির্দিষ্ট সময়ে জমা না দেন, তাহলে প্রতি মাসে ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।

দেরিতে ফাইল করার এইগুলি হতে পারে ক্ষতি

ক্রেডিট স্কোরে প্রভাব

আইটিআর ফাইল করতে দেরি করলে আপনার আর্থিক ছবির উপর প্রভাব পড়ে। যখন আপনি কোনো ব্যাংক বা সংস্থা থেকে ঋণ নিতে যান, তখন সেখানে আপনার ট্যাক্স রেকর্ড দেখা হয়। সময় মতো রিটার্ন না দিলে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা কম হতে পারে।

রিফান্ড পেতে দেরি

যদি আপনার অ্যাকাউন্টে ট্যাক্স রিফান্ড হওয়ার কথা থাকে এবং আপনি আইটিআর দেরিতে ফাইল করেন, তাহলে এই রিফান্ড পেতে অনেক দেরি হতে পারে। অনেক সময় মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়।

ভিসা আবেদনে বাধা

বিদেশ ভ্রমণ বা পড়াশোনার জন্য ভিসার আবেদন করার সময় অনেক দেশে আইটিআর নথি চাওয়া হয়। যদি আপনি সময় মতো রিটার্ন না দিয়ে থাকেন, তাহলে ভিসা প্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে।

সঠিক আইটিআর ফর্ম নির্বাচন করা জরুরি

আইটিআর ফাইল করার সময় প্রথমেই এটা জানা জরুরি যে আপনার জন্য কোন ফর্মটি সঠিক। আয়কর বিভাগ আলাদা আলাদা শ্রেণীর জন্য আইটিআর-১, আইটিআর-২, আইটিআর-৩ এবং আইটিআর-৪ ফর্ম জারি করেছে। চাকরিজীবীদের জন্য আইটিআর-১, আর যারা ব্যবসা করেন তাদের জন্য আইটিআর-৩ এবং আইটিআর-৪ ব্যবহার করা হয়।

পুরনো নাকি নতুন ট্যাক্স ব্যবস্থা, ভেবেচিন্তে নির্বাচন করুন

এই বছরও করদাতাদের কাছে দুটি বিকল্প আছে – পুরনো ট্যাক্স ব্যবস্থা এবং নতুন ট্যাক্স ব্যবস্থা। পুরনো ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ছাড় এবং ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়, যেখানে নতুন ব্যবস্থায় ট্যাক্সের হার কম, কিন্তু ছাড় সীমিত। নিজের আয়, খরচ এবং বিনিয়োগ দেখে ভেবেচিন্তে নির্বাচন করুন।

ই-ভেরিফিকেশন করতে ভুলবেন না

আইটিআর ফাইল করাই যথেষ্ট নয়। এর পরে সেটাকে ই-ভেরিফাই করাও জরুরি। ই-ভেরিফিকেশন না করলে আপনার রিটার্ন বাতিল বলে গণ্য হতে পারে। এই প্রক্রিয়া আধার ওটিপি, নেট ব্যাঙ্কিং, ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট বা অন্য কোনো উপায়ে করা যেতে পারে।

কাগজপত্র আগে থেকে তৈরি রাখুন

রিটার্ন ফাইল করার আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে রাখা খুবই জরুরি। যেমন:

  • ফর্ম 16
  • ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট
  • বেতনের রসিদ
  • বিনিয়োগের প্রমাণপত্র
  • হোম লোন বা মেডিকেল ইন্স্যুরেন্সের রসিদ
  • ভাড়া চুক্তি (যদি ভাড়ায় থাকেন)

এই সমস্ত কাগজপত্রের সাহায্যে আপনি সঠিক তথ্য দিতে পারবেন এবং ভুল থেকে বাঁচতে পারবেন।

আইটিআর ভরা এখন আগের থেকে অনেক সহজ

ইনকাম ট্যাক্স বিভাগ রিটার্ন ফাইলিংয়ের প্রক্রিয়াকে আগের থেকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। এখন পোর্টালে লগইন করার পরে আপনার কিছু তথ্য আগে থেকেই ভরা থাকে। এতে রিটার্ন ভরতে সুবিধা হয়। তবুও, তথ্য একবার যাচাই করে নেওয়া জরুরি।

অনলাইন পোর্টালে সহজেই করুন ফাইলিং

ইনকাম ট্যাক্সের ওয়েবসাইট incometax.gov.in-এ গিয়ে আপনি আপনার আইটিআর ফাইল করতে পারেন। এখানে স্টেপ-বাই-স্টেপ গাইডও দেওয়া আছে। যদি আপনার প্রযুক্তিগত জ্ঞান না থাকে, তাহলে কোনো ট্যাক্স বিশেষজ্ঞ বা সিএ-র সাহায্যও নিতে পারেন।

কোনো বাধা ছাড়াই আইটিআর ফাইলিংয়ের প্রক্রিয়া শেষ করুন

যারা এখনও পর্যন্ত রিটার্ন ভরেননি, তাদের কাছে আর বেশি সময় নেই। শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫। এর আগে নিজের ফাইলিং শেষ করুন, যাতে জরিমানা, সুদ এবং অন্যান্য সমস্যা থেকে বাঁচা যায়। সময় মতো ফাইল করলে শুধুমাত্র আপনি সরকারের নিয়ম পালন করেন তাই নয়, নিজের আর্থিক অবস্থাও মজবুত করেন।

Leave a comment