বাংলার ঘরে ঘরে ঈদ–পূজোতে যেমন ইলিশের পোলাও বা ভাজা নিঃসন্দেহে মন ভরানোর খাবার, তেমন এই মাছের পুষ্টিগুণ কিন্তু আরও বিস্ময়কর। ইলিশ শুধু মুখরোচক নয়, শরীরের নানা সমস্যা দূর করতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই বলা হয়, ইলিশ কিনতে পকেট ফাঁকা হলেও স্বাস্থ্য যে ধনী করে তোলে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
মন খারাপ দূর করার এক অসাধারণ উপায়
ইলিশের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে মন ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ইলিশ খেলে বিষণ্নতা কমে ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে ইলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই যাঁরা আজকাল মানসিক ক্লান্তিতে ভুগছেন, তাঁদের জন্য ইলিশ যেন প্রকৃতির এক প্রিয় উপহার।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ইলিশ
ইলিশে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের জন্য মঙ্গলকর। এটি রক্তের প্লেটলেট কমিয়ে দেয়, যা ব্লাড ক্লট হওয়া রোধ করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি ইলিশ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও কমে যায়।
মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে ইলিশ
শিশু থেকে শুরু করে বয়স্কদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ইলিশ অতি উপকারী। গবেষণায় প্রমাণিত, এই মাছের নিয়মিত সেবনে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, মনোযোগ বেড়ে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের ইলিশ খাওয়া অনুপ্রেরণা দেয় শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য।
চুল ও ত্বকের যত্নে ইলিশের অবদান
ইলিশের তেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন–ই, যা ত্বকের কোষ নতুন করে তৈরি করে ত্বককে করে তোলে সুন্দর ও মসৃণ। তাছাড়া চুল পড়া কমায় এবং চুলের গোড়া মজবুত করে। তাই ইলিশ খাওয়া মানে স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্যকর ত্বক ও ঝলমলে চুলের নিশ্চয়তা।
হাড় ও জয়েন্টের সমস্যা কমায় ইলিশ
ইলিশের হাড়ও খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, যা হাড় মজবুত করে। নিয়মিত ইলিশ খেলে জয়েন্টে ব্যথা ও অস্থিসন্ধির সমস্যাও কমে। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য ইলিশ স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারী খাদ্য।
রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে ইলিশ
ইলিশে রয়েছে আয়রন ও অন্যান্য ভিটামিন, যা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার কমাতে কার্যকর। যারা বারবার দুর্বল বোধ করেন বা ক্লান্তির শিকার হন, তাদের ডায়েটে ইলিশ রাখা উচিত। নিয়মিত ইলিশ খেলে শরীরে রক্ত বৃদ্ধি পায়, শরীর থাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ইলিশ
মাছের মধ্যে ইলিশ তুলনামূলক উচ্চ প্রোটিনযুক্ত এবং কম ক্যালোরিযুক্ত। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রোটিন শরীরের পেশী বাড়াতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ সময় পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয়। ফলে অতিরিক্ত খাবারের আকাঙ্ক্ষা কমে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ইলিশ
ইলিশে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শীতকালে ইলিশের বিশেষ চাহিদা থাকে কারণ এটি শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত ইলিশ খাওয়া মানে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার।
ইলিশের মৌসুমে কেন যত্ন নেবেন?
মাছের রাজা ইলিশের সঠিক সময় ও ভালো মানের ইলিশ কেনা খুব জরুরি। সতেজ ইলিশ কেনা মানেই স্বাস্থ্যকর খাবার। বাজার থেকে সতেজ ও ঝিনুক-মুক্ত ইলিশ কিনে বাড়িতে নিয়ে এসে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
সারাংশ: স্বাস্থ্য ও স্বাদের মিলনস্থল ইলিশ
মনে রাখবেন, পকেট ফাঁকা হলেও স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ইলিশ মাছ কিনতে কখনো ভুলবেন না। এটি শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং সার্বিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অসাধারণ এক উপহার। শীতকালীন সকালে গরম গরম ইলিশ ভুনা কিংবা দোশা সঙ্গেই খান, পেয়ে যাবেন সুস্থতার নতুন অধ্যায়।