কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগের আগে সতর্কতা জারি করলো NSE ও BSE

কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগের আগে সতর্কতা জারি করলো NSE ও BSE

বিগত কয়েক বছরে ডিজিটাল বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগের প্রবণতা দ্রুত বেড়েছে। অনেক বিনিয়োগকারী ফিক্সড রিটার্নের লোভে অনলাইন বন্ড প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু এখন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) এবং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE) একটি জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। এক্সচেঞ্জগুলো বলেছে যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাওয়া YTM (Yield to Maturity) বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে এবং এটিকে নিশ্চিত রিটার্ন মনে করা বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

YTM একটি অনুমান, নিশ্চিত আয় নয়

এক্সচেঞ্জগুলো স্পষ্টভাবে বলেছে যে বন্ডের উপর দেখানো YTM আসলে একটি আনুমানিক রিটার্ন, যা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি যে বিনিয়োগকারী বন্ডটিকে মেয়াদ পর্যন্ত ধরে রাখবে। কিন্তু এটা জরুরি নয় যে YTM-এর সমান রিটার্ন বিনিয়োগকারী সত্যিই পাবে। এতে অনেক বাহ্যিক কারণ প্রভাব ফেলে — যেমন বাজারের সুদের হার পরিবর্তন হওয়া, কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং কমে যাওয়া, অথবা বিনিয়োগকারীকে মাঝপথে বন্ড বিক্রি করতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাপ্ত রিটার্ন অনুমান থেকে বেশ কম হতে পারে।

SEBI থেকে রেজিস্টার্ড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন

NSE এবং BSE উভয়ই বলেছে যে বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র সেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে বন্ড কিনুন যেগুলো SEBI (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া) থেকে রেজিস্টার্ড অনলাইন বন্ড প্ল্যাটফর্ম প্রোভাইডার (OBPP) হিসাবে স্বীকৃত। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রতারণা থেকে বাঁচতে পারবে এবং তারা স্বচ্ছতা ও সঠিক তথ্য পাবে।

ক্রেডিট রেটিংকে হালকাভাবে নেবেন না

বন্ড কেনার আগে এর ক্রেডিট রেটিং পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। রেটিং এজেন্সি যেমন CRISIL, ICRA, CARE ইত্যাদি কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে রেটিং দেয়। AAA রেটেড বন্ডকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করা হয়, যেখানে D রেটিং মানে ডিফল্টের ঝুঁকি বেশি। NSE এবং BSE স্পষ্ট করেছে যে বিনিয়োগকারীদের শুধুমাত্র উচ্চ কুপন রেট দেখে বন্ডে বিনিয়োগ করা উচিত নয়, বরং কোম্পানির সুনাম, এর ইতিহাস এবং পরিশোধের ক্ষমতাও পরীক্ষা করা উচিত।

কুপন রেটেও ঝুঁকি লুকিয়ে আছে

অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন যে কুপন রেট অর্থাৎ বার্ষিক সুদের পরিমাণ তারা যে কোনো মূল্যে পাবেন। কিন্তু এক্সচেঞ্জ বলেছে যে এমনটা জরুরি নয়। কুপন রেট ততক্ষণ পর্যন্ত পাওয়া যায় যতক্ষণ পর্যন্ত ইস্যু করা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকে। যদি কোম্পানি লোকসানে চলে যায় বা তার ক্যাশ ফ্লো খারাপ হয়, তাহলে সে সুদের পেমেন্ট বন্ধও করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারী কেবল সুদের ক্ষতিই নয়, মূলধনের উপরেও ঝুঁকি আসতে পারে।

বন্ডের লিকুইডিটিও বোঝা জরুরি

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল বন্ডের লিকুইডিটি অর্থাৎ বাজারে সেই বন্ড বিক্রি করার সুবিধা। অনেক বন্ড আছে যেগুলোর বাজারে ক্রেতার সংখ্যা খুব কম। এমন পরিস্থিতিতে যদি কোনো বিনিয়োগকারীর হঠাৎ করে টাকার প্রয়োজন হয় এবং সে বন্ড বিক্রি করতে চায়, তাহলে তাকে হয় কম দামে বিক্রি করতে হতে পারে অথবা সে কোনো ক্রেতাই নাও পেতে পারে। এই কারণে YTM-এর পরিসংখ্যান আরও বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

সেটলমেন্ট এবং ট্যাক্স নিয়মও ভালোভাবে দেখে নিন

বন্ড বিনিয়োগের পর তার সেটেলমেন্ট অর্থাৎ টাকা এবং বন্ডের ডেলিভারি কত তাড়াতাড়ি হয়, এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিছু বন্ড T+1 বা T+2 সেটেলমেন্টে হয়, আবার কিছুতে সময় লাগতে পারে। এর সাথে, বন্ডের উপর পাওয়া সুদ বা রিডেম্পশন অ্যামাউন্টের উপর কীভাবে ট্যাক্স লাগবে, সেই তথ্যও বিনিয়োগকারীকে আগে থেকে জেনে নেওয়া উচিত।

এক্সচেঞ্জের দাবি  ঝুঁকির পরিমাপ ঠিক হোক

NSE এবং BSE উভয়ই এই পরামর্শ দিয়েছে যে মিউচুয়াল ফান্ডের মতো বন্ডের জন্যও একটি ‘ঝুঁকি-মিটার’ (Risk-o-meter) বা স্কেল তৈরি করা উচিত, যাতে বিনিয়োগকারীরা জানতে পারে যে তারা কতটা ঝুঁকির বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এতে তারা YTM-এর পাশাপাশি ঝুঁকিরও একটা ধারণা করতে পারবে এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত আরও ভালোভাবে নিতে পারবে।

অনারজিস্টার্ড প্ল্যাটফর্ম থেকে বিপদ বেশি

অনলাইন বিনিয়োগে तेजी-এর সাথে কিছু এমন প্ল্যাটফর্মও সামনে এসেছে যেগুলো SEBI থেকে রেজিস্ট্রিকৃত নয়। এই প্ল্যাটফর্মগুলো বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় YTM এবং ফিক্সড ইনকামের মতো শব্দ দিয়ে ভুল পথে চালিত করতে পারে। কিন্তু এদের মাধ্যমে করা বিনিয়োগ প্রায়শই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এতে স্বচ্ছতার অভাব থাকে এবং বিনিয়োগকারীর কাছে আইনি সুরক্ষা থাকে না।

প্রায়শই YTM এবং রিয়েল রিটার্নের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়

মার্কেটের পরিসংখ্যান দেখায় যে অনেক সময় বন্ডের ঘোষিত YTM এবং বাস্তবে বিনিয়োগকারী যে রিটার্ন পায়, তার মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। বিশেষ করে তখন, যখন বিনিয়োগকারী বন্ডকে ম্যাচিউরিটির আগে বিক্রি করে দিয়েছে অথবা যখন ইস্যু করা কোম্পানি সময়মতো পেমেন্ট করেনি। তাই শুধু YTM দেখে বিনিয়োগ করা একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে।

এক্সচেঞ্জগুলোর এই সতর্কতা কেন গুরুত্বপূর্ণ

এই প্রথম দেশের দুটি বড় স্টক এক্সচেঞ্জ একসাথে বন্ড বিনিয়োগের উপর এত স্পষ্ট সতর্কতা জারি করেছে। এর উদ্দেশ্য হল বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচানো এবং এটা নিশ্চিত করা যে তারা তাদের টাকা নিরাপদে এবং স্বচ্ছভাবে বিনিয়োগ করে।

Leave a comment