ভারতে বিলাসবহুল গাড়ির অনুরাগীরা আপাতত বিরতি নিয়েছেন। সম্প্রতি ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার পর দেশের অনেক ধনী ব্যক্তি বিদেশি গাড়ির বুকিং বাতিল করেছেন। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বিলাসবহুল গাড়ির ডিলারদের উপর। তারা ইতিমধ্যেই কোম্পানিগুলোকে অর্ডার দিয়েছেন এবং এখন ক্রেতাদের পরিবর্তে খালি শোরুম দেখতে পাচ্ছেন।
বুকিংয়ে নিষেধাজ্ঞা, কারণ কমতে চলেছে ট্যাক্স
ব্রিটেন থেকে আসা দামি গাড়িগুলির উপর বর্তমানে ৭৫ থেকে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক লাগে। কিন্তু ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে প্রস্তাবিত বাণিজ্য চুক্তির অধীনে এই ট্যাক্স কমে ১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। মে মাসে এই চুক্তির খবর সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিপুল সংখ্যক গ্রাহক বুকিং বন্ধ করে দেন। কেউ কেউ অগ্রিম দিয়ে করা বুকিংও বাতিল করেছেন।
ব্রিটিশ কার ব্র্যান্ড সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
এই চুক্তির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই গাড়ি ব্র্যান্ডগুলি, যা সরাসরি ব্রিটেনে তৈরি হয়। এর মধ্যে Jaguar, Land Rover, Aston Martin, Bentley, Rolls Royce এবং McLaren-এর মতো নাম রয়েছে। Jaguar এবং Land Rover এখন টাটা মোটরসের মালিকানাধীন হলেও, এদের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট ব্রিটেনে অবস্থিত।
ডিলাররা বলছেন, অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে সমস্যা
দেশের অনেক বিলাসবহুল গাড়ির ডিলার বলছেন যে এই পরিস্থিতি তাদের দ্বিধায় ফেলেছে। একজন বড় ডিলার জানান, তারা গাড়িগুলোর অর্ডার ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন, কিন্তু এখন গ্রাহকরা পিছিয়ে যাচ্ছেন। ডিলারের বক্তব্য, আমরা জানি না এই বাণিজ্য চুক্তি কবে কার্যকর হবে এবং এর প্রভাব সঙ্গে সঙ্গে পড়বে নাকি ধীরে ধীরে। যতক্ষণ না এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হচ্ছে, ততক্ষণ গ্রাহকরা অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গ্রাহকরা দামের পার্থক্য বুঝতে পারছেন
ভারতে ব্রিটিশ গাড়ির দাম যুক্তরাজ্যের তুলনায় তিনগুণ পর্যন্ত বেশি হয়। এর কারণ হল বিপুল আমদানি শুল্ক, রাজ্যের স্থানীয় ট্যাক্স এবং রেজিস্ট্রেশন চার্জ। তাই ট্যাক্সে ছাড়ের কথা সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ ভাবতে শুরু করেছে যে এখন দামি গাড়ি কেনার চেয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা ভালো।
ডিলাররা গ্রাহকদের বোঝাচ্ছেন
যদিও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ডিলাররা গ্রাহকদের বলছেন যে ট্যাক্স কমানো সঙ্গে সঙ্গে হবে না। তাদের বলা হচ্ছে যে এই চুক্তি কার্যকর হতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে এবং ট্যাক্সও একবারে নয়, ধীরে ধীরে কমবে। পাশাপাশি, এও বলা হচ্ছে যে প্রতি বছর বিলাসবহুল গাড়ির দাম প্রায় ৫ শতাংশ বাড়ে এবং পাউন্ডের তুলনায় টাকার দামও দুর্বল হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরে কিনলে খরচ বেশি হতে পারে।
ব্র্যান্ডের উপরও দেখা গেছে প্রভাব
এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রভাব ব্র্যান্ডের ভারতে কৌশলগুলির উপরও পড়েছে। কিছু কোম্পানি ভারতের জন্য পরবর্তী চালানের ডেলিভারি পিছিয়ে দিয়েছে। আবার কেউ কেউ নতুন অর্ডার নেওয়া থেকে আপাতত বিরত রয়েছে।
এক বছর লাগতে পারে চুক্তি কার্যকর হতে
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে এই বাণিজ্য চুক্তি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগতে পারে। পাশাপাশি এতে এটিও নির্ধারণ করা হবে যে প্রতি বছর কতগুলি গাড়ির উপর ট্যাক্সে ছাড় দেওয়া হবে। অর্থাৎ এই সুবিধা সীমিত পরিমাণে পাওয়া যাবে।
গাড়ির ডেলিভারিও হতে পারে দেরিতে
বুকিং বন্ধ করার আরেকটি প্রভাব হল যখন চুক্তি কার্যকর হবে, তখন হঠাৎ চাহিদা বাড়বে এবং ডেলিভারিতে দেরি হতে পারে। পাশাপাশি, সেই সময় গাড়ির দামও বেড়ে যাবে।
বাজারের চালচলনের উপর নজর রাখছেন ডিলাররা
দেশজুড়ে বিলাসবহুল গাড়ির ডিলাররা এই মুহূর্তে খুব সাবধানে কাজ করছেন। তারা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং চেষ্টা করছেন চুক্তি কার্যকর হওয়া পর্যন্ত কম ক্ষতি হয়। যদিও এখনও অনেক গ্রাহক তাদের বুকিং নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে আসেনি কোনো নির্ধারিত তারিখ
আপাতত ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এটা জানানো হয়নি যে বাণিজ্য চুক্তি কবে কার্যকর হবে বা এর শর্তগুলো কী হবে। এতে ডিলার এবং গ্রাহক উভয়ই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।