ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হয়েছে। ভারত তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ৬ উইকেটে ৪২৭ রান করে ঘোষণা করে এবং স্বাগতিক দলের সামনে ৬০৮ রানের বিশাল লক্ষ্য রাখে।
IND vs ENG 2nd Test Day 4: ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে খেলা হওয়া দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন ভারতীয় দলের দাপটের সাক্ষী থাকল। অধিনায়ক শুভমন গিলের অসাধারণ শতরানের ইনিংস এবং বোলারদের প্রাথমিক ধাক্কায় ভারত ম্যাচের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। ভারত তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ৬ উইকেটে ৪২৭ রান করে ঘোষণা করে এবং ইংল্যান্ডকে ৬০৮ রানের প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য দেয়। জবাবে ইংল্যান্ড স্টাম্পস পর্যন্ত ৩ উইকেট হারিয়েছে এবং এখনও ৫৩৬ রান দূরে রয়েছে।
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে গিল দুর্দান্ত ১৬১ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেন। এছাড়াও কেএল রাহুল (৫৫), ঋষভ পন্থ (৬৫) এবং রবীন্দ্র জাদেজা (অপরাজিত ৬৯) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময় ইংল্যান্ডের অবস্থা ছিল এমন যে অলি পোপ ২৪ এবং হ্যারি ব্রুক ১৫ রান করে লড়াই করছিলেন। ভারতের হয়ে আকাশ দীপ চমৎকার বোলিং করে দুটি উইকেট শিকার করেন, যেখানে মোহাম্মদ সিরাজ একটি সাফল্য পান।
গিলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, ইংল্যান্ডের মনোবল দুর্বল
চতুর্থ দিনে ভারত ১ উইকেটে ৬৪ রান থেকে খেলা শুরু করে। যদিও দিনের প্রথম ধাক্কা দ্রুত লাগে, যখন করুন নায়ার ২৬ রান করে আউট হন। এরপর গিল এবং রাহুল সাবধানে খেলে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান। রাহুল স্থিতিশীল ব্যাটিং করে ৫৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন, তবে জোশ টাংয়ের দ্রুত গতির বোলিংয়ের সামনে তিনি বোল্ড হন।
রাহুলের বিদায়ের পর ঋষভ পন্থ ক্রিজে আসেন এবং তিনি গিলের সঙ্গে জুটি বেঁধে ইংল্যান্ডের বোলারদের উপর আক্রমণ চালান। দুজনে চতুর্থ উইকেটের জন্য ১১০ রান যোগ করেন। পন্থ ৬৫ রান করেন এবং তাঁর ইনিংসে বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় শট খেলেন। যদিও শোয়েব বশির তাকে এলবিডব্লিউ করে এই বিপজ্জনক জুটি ভাঙেন।
এই সময়ে গিল অসাধারণ আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে তাঁর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এবং ইনিংস আরও এগিয়ে নিয়ে যান। তিনি রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে পঞ্চম উইকেটের জন্য ১৭৫ রান যোগ করে ভারতকে প্রায় ম্যাচ থেকে বাদ যাওয়ার কোনও সুযোগ দেননি। গিলের ১৬১ রানের ইনিংসে ১৩টি চার এবং ৮টি বিশাল ছক্কা ছিল, যা তাঁর আক্রমণাত্মক মনোভাব স্পষ্ট করে তোলে। গিল অবশেষে শোয়েব বশিরের বলে আউট হন।
এরপরে জাদেজা ৬৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন এবং ওয়াশিংটন সুন্দর (১২ অপরাজিত)-এর সঙ্গে মিলে দলকে ৪২৭ রানের স্কোরে পৌঁছে দেন। ভারত লিড ৬0৭ রান করার পরেই ইনিংস ঘোষণা করে এবং ইংল্যান্ডকে চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ের জন্য ডাকে।
বোলাররা ইংল্যান্ডকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা খুবই খারাপ হয়। প্রথম বল থেকেই ভারতের বোলাররা ইংল্যান্ডের উপর চাপ তৈরি করে। আকাশ দীপ জ্যাক ক্রলিকে কোনও রান করতে না দিয়েই বোল্ড করেন। এরপর ডাকেট (২৫) কিছুটা লড়াই করেন, তবে আকাশ দীপ একটি সুন্দর বলে তাঁর উইকেট ভেঙে দেন।
সবচেয়ে বড় সাফল্য ভারত পায় যখন আকাশ দীপ জো রুট-এর মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে ৬ রানে বোল্ড করেন। ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ৩৯ রানে ৩ উইকেট হয়ে যায় এবং দল সম্পূর্ণ চাপে পড়ে যায়। স্টাম্পসের সময় অলি পোপ এবং হ্যারি ব্রুক কোনওমতে উইকেট বাঁচিয়ে ক্রিজে টিকে ছিলেন, তবে ভারতের বোলাররা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছেন যে পঞ্চম দিনে দ্রুত সাতটি উইকেট তুলে নিয়ে সিরিজে সমতা ফেরানো যায়।
পঞ্চম দিনের উত্তেজনা
ভারতের কাছে পঞ্চম এবং শেষ দিনে পুরো সাতটি উইকেট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পিচে সামান্য ফাটল এবং বাউন্স রয়েছে, যার সুবিধা রবীন্দ্র জাদেজা এবং আর অশ্বিন পেতে পারেন। এছাড়াও ফাস্ট বোলাররা যে ভাবে শুরু করেছেন, তাতে ইংল্যান্ডের সমস্যা বাড়ছে বলেই মনে হচ্ছে। ভারতীয় অধিনায়ক গিল ইনিংস ঘোষণার পরে বলেন, আমরা সম্পূর্ণ কৌশল নিয়ে খেলেছি এবং ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব পালন করেছে। এখন বোলারদের শেষ দিনে সাত উইকেট নিতে হবে এবং আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে তারা এই কাজটি সম্পন্ন করবে।
ইংল্যান্ডকে এখনও ৫৩৬ রান করতে হবে, যা ক্রিকেট ইতিহাসে কখনও হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের জয় প্রায় নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে। শুধুমাত্র আবহাওয়া বা কোনো অলৌকিক ঘটনাই ইংল্যান্ডকে বাঁচাতে পারে। যদি ভারত এই টেস্ট জেতে, তবে সিরিজ ১-১ ব্যবধানে সমান হবে এবং শেষ ম্যাচটি নির্ণায়ক হবে।