এশিয়া কাপে ভারতীয় দলের জার্সিতে স্পনসর অনিশ্চিত নতুন মোড়ে বিসিসিআই

এশিয়া কাপে ভারতীয় দলের জার্সিতে স্পনসর অনিশ্চিত নতুন মোড়ে বিসিসিআই

ড্রিম ১১-এর সঙ্গে সম্পর্ক শেষ, স্পনসরশূন্য ভারত?

এশিয়া কাপের একেবারে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলে স্পনসরশিপ নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় প্রশ্নচিহ্ন। সম্প্রতি ড্রিম ১১-এর সঙ্গে বিসিসিআইয়ের চুক্তি শেষ হয়েছে। বোর্ড নতুন স্পনসর খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু করলেও, নির্ধারিত সময়ে সব সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। তাই এবারের এশিয়া কাপে হয়তো জার্সিতে কোনও স্পনসরের নামই থাকবে না।

২০২৭ পর্যন্ত স্পনসর নিয়োগের পরিকল্পনা

সূত্রের খবর, বোর্ড এখন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত একজন টাইটেল স্পনসরকে ধরে রাখা। তবে চুক্তির খসড়া, বিজ্ঞাপনী প্রক্রিয়া, আর্থিক দিক সব সম্পূর্ণ করতে সময় লাগবে। ফলে ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপে জার্সিতে স্পনসর না থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

অনলাইন গেমিং আইনে কড়া বিধিনিষেধ

ড্রিম ১১-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার মূল কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের পাশ করা অনলাইন গেমিং প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অ্যাক্ট। এই আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অনলাইন মানি গেমকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিতে পারবে না। ফলে ড্রিম ১১ কিংবা এই ধরনের গেমিং সংস্থার সঙ্গে আর বোর্ডের স্পনসরশিপ সম্ভব নয়।

রাজীব শুক্লার জরুরি বৈঠক

গত ২৮ আগস্ট বিসিসিআই-এর জরুরি অ্যাপেক্স কাউন্সিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছিলেন রাজীব শুক্লা। সেই বৈঠকেই নতুন স্পনসর খোঁজার প্রসঙ্গ ওঠে। আলোচনা হলেও, সময়সীমার কারণে এশিয়া কাপের আগে স্পনসর পাওয়া কঠিন—এমনটাই মেনে নিয়েছেন বোর্ড কর্তারা।

দেবজিৎ সাইকিয়ার স্পষ্ট অবস্থান

এর আগে বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরকারের নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর আর ড্রিম ১১ বা এ জাতীয় গেমিং কোম্পানির সঙ্গে বোর্ডের সম্পর্ক থাকতে পারে না। তাঁর দাবি, আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আইন অনুযায়ী এখন কোনও ছাড় নেই। ফলে আমরা বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কোটি টাকার চুক্তি বাতিল

প্রসঙ্গত, ড্রিম ১১ এবং মাই ১১ সার্কেল মিলিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট ও আইপিএল স্পনসরশিপ বাবদ বিসিসিআইকে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা দিয়েছে। ড্রিম ১১ বিশেষভাবে ২০২৩–২০২৬ চক্রের জন্য ৩৫৮ কোটি টাকার চুক্তি সই করেছিল। কিন্তু নতুন আইন কার্যকর হতেই সেই চুক্তি ভেস্তে গেল।

গেমিং কোম্পানির জন্য বড় ধাক্কা

শুধু বোর্ড নয়, ড্রিম ১১-এর মতো সংস্থার জন্যও এই সিদ্ধান্ত বিশাল ধাক্কা। অনলাইন গেমিং ব্যবসা ক্রমে বিস্তৃত হলেও নতুন আইনে বিজ্ঞাপন ও প্রচারে নিষেধাজ্ঞা তাদের অর্থনৈতিক মডেলকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রীড়া স্পনসরশিপে এই আইনের প্রভাব আগামী দিনে আরও স্পষ্ট হবে।

খেলোয়াড়দের মানসিক প্রভাব নেই

যদিও ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, জার্সিতে স্পনসর না থাকা দলের পারফরম্যান্সে কোনও প্রভাব ফেলবে না। খেলোয়াড়দের কাছে মুল লক্ষ্য টুর্নামেন্টে সাফল্য অর্জন। তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে বোর্ড কিছুটা চাপের মুখে পড়তে পারে। কারণ টাইটেল স্পনসরশিপ থেকে বিপুল অর্থ আসে, যা ক্রিকেটের পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়।

এশিয়া কাপের উত্তেজনা বজায়

৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এশিয়া কাপে ভারতীয় দলের সব চোখ থাকবে মাঠের লড়াইয়ে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান—সবাই সমান তালে প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্পনসর থাকুক বা না থাকুক, দর্শকদের কাছে টিম ইন্ডিয়ার পারফরম্যান্সই আসল আকর্ষণ হয়ে থাকবে।

আগামীতে নতুন কর্পোরেট নাম?

ক্রিকেট মহলে গুঞ্জন, প্রযুক্তি সংস্থা কিংবা ই-কমার্স জায়ান্টরা স্পনসর দৌড়ে নামতে পারে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে সরকারি নিয়মকানুন ও বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্তের উপর। যে ভাবেই হোক, আসন্ন মাসগুলোতে বোর্ডের নতুন পদক্ষেপ নজর কাড়বে সবার।

Leave a comment