এইচপিসিএল-মিত্তাল এনার্জি লিমিটেড (এইচএমইএল) রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। এই পদক্ষেপ আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেন কর্তৃক নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির এই নীতি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এটিকে ভারত সরকারের জ্বালানি সুরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারত-রাশিয়া তেল বাণিজ্য: ভারত-রাশিয়ার জ্বালানি সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা গেছে, যেখানে এইচপিসিএল-এর অংশীদারিত্বে থাকা কোম্পানি এইচএমইএল (HPCL-Mittal Energy Ltd) রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল ক্রয় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। বাথিন্ডা-ভিত্তিক এই শোধনাগারটি এতদিন "ডেলিভারড বেসিস"-এ রাশিয়া থেকে তেল আনত, কিন্তু সাম্প্রতিক আমেরিকান এবং ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞাগুলি পরিবহন এবং বীমাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। নিষিদ্ধ জাহাজ সংক্রান্ত বিতর্কিত প্রতিবেদনের পর কোম্পানি এই পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী এবং ভারত সরকারের নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যায়।
এইচএমইএল-এর বড় সিদ্ধান্ত
এইচএমইএল, যা मित्तल গোষ্ঠী এবং এইচপিসিএল-এর একটি যৌথ উদ্যোগ, স্পষ্ট জানিয়েছে যে তারা এখন রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেলের কোনো নতুন চালান আনবে না। কোম্পানি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সম্প্রতি আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেন কর্তৃক রাশিয়ার ওপর আরোপিত কঠোর নিষেধাজ্ঞার পর। এই নিষেধাজ্ঞাগুলির প্রভাব কেবল তেলের ওপর নয়, বরং শিপিং, বীমা এবং পেমেন্ট সিস্টেমের ওপরেও পড়ছে।
এইচএমইএল প্রথম ভারতীয় কোম্পানি হিসেবে এই নতুন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়া থেকে প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানি জানিয়েছে যে এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী এবং ভারত সরকারের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
রাশিয়া থেকে তেল সরবরাহ কীভাবে হতো
এইচএমইএল পাঞ্জাবের বাথিন্ডায় একটি বড় তেল শোধনাগার পরিচালনা করে। কোম্পানি এতদিন রাশিয়া থেকে 'ডেলিভারড বেসিস'-এ তেল সরবরাহ নিত। এর অর্থ ছিল যে তেল রাশিয়া থেকে ভারতে আনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল রাশিয়ান সরবরাহকারীর। জাহাজের ব্যবস্থা, তার বীমা এবং পরিবহন সবকিছু সরবরাহকারীই সামলাত। এইচএমইএল সরাসরি ভারতীয় বন্দরে তেল গ্রহণ করত।
কিন্তু এখন নতুন নিষেধাজ্ঞার পর এই পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেবল রাশিয়ান তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, বরং সেইসব জাহাজ ও কোম্পানির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে যারা রাশিয়া থেকে তেল পরিবহন করে। এতে এইচএমইএল-এর মতো ক্রেতাদের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
বিতর্কের পর নেওয়া সিদ্ধান্ত

এইচএমইএল-এর এই সিদ্ধান্ত একটি বিতর্কের পর এসেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে একটি বিদেশী সংবাদ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে কোম্পানিটি নিষিদ্ধ জাহাজ থেকে তেল সরবরাহ নিয়েছিল। প্রতিবেদন অনুসারে, এইচএমইএল কমপক্ষে চারটি চালান এমন জাহাজ থেকে এনেছিল, যেগুলির ওপর পশ্চিমা দেশগুলির নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। এই চালানগুলির মূল্য প্রায় ২৮ কোটি ডলার বলা হয়েছিল।
এই প্রতিবেদনের পর কোম্পানি স্পষ্টীকরণ দিয়েছে যে তারা 'ডেলিভারড বেসিস'-এ তেল ক্রয় করেছিল এবং জাহাজগুলি সরবরাহকারী দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিল। কোম্পানি বলেছিল যে তারা সমস্ত সরকারি নিয়মাবলী এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মান মেনে চলে।
সস্তা রাশিয়ান তেলের ওপর ব্রেক পড়ায় পরিস্থিতির পরিবর্তন
কোম্পানির মতে, রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় ততক্ষণ পর্যন্ত চলছিল যতক্ষণ এই প্রক্রিয়া নিরাপদ এবং লাভজনক ছিল। কিন্তু নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে এবং বীমা ও পরিবহন সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি পাওয়ায়, এইচএমইএল রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ ভারতের জ্বালানি সরবরাহ নীতিতে একটি বড় মোড় প্রমাণিত হতে পারে। রাশিয়া থেকে সস্তা তেলের সরবরাহ ভারতের জন্য লাভজনক ছিল, কিন্তু এখন নিষেধাজ্ঞার কারণে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।













