মার্কিন কঠোর শর্তে ভারত বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে আসতে পারে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সুভাষ গর্গের মতে, রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কিনে ভারত ২.৫ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে।
ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক: সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। 'অপারেশন সিদুর' ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে এবং এখন বাণিজ্য চুক্তিকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সুভাষ গর্গের মতে, আমেরিকার শর্তগুলি কঠোর হওয়ায় ভারত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে আসতে পারে।
'অপারেশন সিদুর' এর পর সম্পর্কের অবনতি
'অপারেশন সিদুর' ঘটনার পর ভারত-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছিল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্থাপনে ব্যর্থ হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। ট্রাম্প সরকার ভারতে ৫০% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক (ট্যারিফ) ঘোষণা করেছিল। এর পর দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তগুলি বিবেচনা করে, ভারত স্পষ্টতই চাপ মানতে অস্বীকার করেছে। এখন খবর পাওয়া যাচ্ছে যে ভারত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি থেকেও সরে আসতে পারে।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর বড় মন্তব্য
এনডিটিভি-র সাথে এক সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সুভাষ গর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রমাগত দাবি করছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে সস্তা দামে তেল কিনে প্রচুর লাভ করছে। তবে, সুভাষ গর্খ স্পষ্ট করেছেন যে ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে একটি রাজনৈতিক চাল। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর মতে, অর্থনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন এবং ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে ভারতের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
রাশিয়া থেকে তেল কিনলে কত সাশ্রয়?
সুভাষ গর্খের মতে, রাশিয়া থেকে তেল কিনে ভারত বছরে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ২.২২ লক্ষ কোটি ভারতীয় টাকা সাশ্রয় করছে। ট্রাম্প বাণিজ্য চুক্তিতে তার শর্ত চাপিয়ে দিতে এবং ভারতকে চাপ দিতে এই সাশ্রয়ের ক্রমাগত অতিরঞ্জিত চিত্র তুলে ধরছেন।
তিনি স্পষ্ট করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে প্রতি ব্যারেল ৩-৪ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ২৬৪-৩৫২ ভারতীয় টাকা দরে তেল কিনছে। এই চুক্তি আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী এবং এটি বেআইনি নয়।
বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের অবস্থান
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সুভাষ গর্খ স্পষ্ট করেছেন যে ভারত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত তার পদক্ষেপ ফিরিয়ে নিয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিক আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত চাপ মানার জন্য প্রস্তুত নয়।
গর্খের মতে, কোনো দেশ এত বেশি আমদানি শুল্ক এবং কঠোর শর্ত সহ বাণিজ্য করতে অগ্রাধিকার দেবে না। বিশেষ করে যখন কৃষি ও ভোগ্যপণ্যের প্রশ্ন আসে, তখন ভারত তার কৃষক এবং সাধারণ ভোক্তাদের স্বার্থের সঙ্গে আপস করবে না।
কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস নেই
সুভাষ গর্খ বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও স্পষ্ট করেছেন যে ভারত তার কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করবে না। আমেরিকার দাবি ছিল যে ভারতকে আমেরিকান সংস্থাগুলির জন্য তার কৃষি বাজার সম্পূর্ণভাবে খুলে দিতে হবে। তবে, ভারতীয় সরকারের মতে, এটি ভারতীয় কৃষকদের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে এবং স্থানীয় বাজার অস্থিতিশীল হবে।
ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশল
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ট্রাম্পের বক্তব্যকে রাজনৈতিক চাল বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে ট্রাম্প ভারতের বিষয়ে যে তথ্যগুলি উপস্থাপন করছেন তা সত্য থেকে অনেক দূরে। বাস্তবতা হল যে ভারত তার অর্থনৈতিক নীতি বিবেচনা করে, দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের ক্রমবর্ধমান দামের প্রভাব কমাতে রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কিনছে।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পরামর্শ
সুভাষ গর্খ ভারত-চীন সম্পর্ক নিয়েও মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে চীন থেকে আসা সমস্ত বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ভারতের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যদি ভারত চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য তার বাজার খুলে দেয়, তবে এটি অন্যান্য দেশগুলির উপর তার অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমাতে পারে। তিনি বলেছিলেন যে অর্থনৈতিক ফ্রন্টে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নত করা ভারতের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে, কারণ বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তির দিক থেকে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।