ভারত-পাক ম্যাচ মানেই চরম উত্তেজনা
ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট মানেই অন্যরকম এক আবেগ, উত্তেজনা আর চাপ। মাঠের বাইরেও এই ম্যাচ ঘিরে থাকে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, কূটনৈতিক প্রভাব এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ। তার উপরে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ছায়া, যা পরিস্থিতিকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড দল ঘোষণা করলেও, আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে সাংবাদিক বৈঠকে ভারত-পাক ম্যাচ প্রসঙ্গে প্রশ্ন নিষিদ্ধ করার ঘটনা।
জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার প্রভাব
সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলায় বেশ কয়েকজন ভারতীয় প্রাণ হারান। দেশজুড়ে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এবং ভারত সরকার কঠোর ভাষায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। স্বাভাবিক ভাবেই ক্রিকেট নিয়ে রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, ভারত এশিয়া কাপে অংশ নেবে না অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই এড়িয়ে যাবে। কিন্তু সরকার অনুমতি দিলেও, BCCI এ নিয়ে সরাসরি কিছু না বলায় প্রশ্ন আরও তীব্র হয়েছে।
মুম্বইয়ে সাংবাদিক বৈঠকে বিতর্ক
মঙ্গলবার মুম্বইয়ে বিসিসিআইয়ের সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচক কমিটির প্রধান অজিত আগরকর ও ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই টিম ম্যানেজারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়— এই বৈঠক কেবল দল নির্বাচনের জন্য। ফলে সাংবাদিকদের প্রশ্ন কেটে দেওয়া হয়। এই আচরণে বিস্মিত হন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। অনেকে সরাসরি বোর্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
অর্থনীতি বনাম জাতীয় আবেগ
ভারত-পাক ম্যাচ শুধু ক্রিকেট নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বিপুল অর্থনৈতিক দিক। টিকিট বিক্রি, টেলিভিশন সম্প্রচার, স্পনসরশিপ ও বিজ্ঞাপন থেকে প্রবাহিত হয় কয়েকশো কোটি টাকা। অন্যদিকে রয়েছে জাতীয় আবেগ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত চাপ। একদিকে জনমতের চাপ, অন্যদিকে অর্থনৈতিক লাভ—এই দ্বন্দ্বের মাঝেই বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তাই অনেকেই মনে করছেন, BCCI ইচ্ছাকৃতভাবে চুপ করে আছে।
দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক অচলাবস্থা
উল্লেখ্য, বহু বছর ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয়নি। দুই দেশ মুখোমুখি হচ্ছে কেবলমাত্র আইসিসি বা এসিসির টুর্নামেন্টে। তাই এশিয়া কাপের মতো প্রতিযোগিতায় এই ম্যাচের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এবার আবার পটভূমি জঙ্গি হামলা ও রাজনৈতিক উত্তেজনায় আরও ভারী হয়ে উঠেছে। ফলে বোর্ডের সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যেও।
পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট
যেখানে ভারতীয় বোর্ড মুখে কুলুপ এঁটেছে, সেখানে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB) নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। পাকিস্তানের হাই পারফরম্যান্স ডিরেক্টর আকিব জাভেদ জানিয়েছেন, “রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল, কিন্তু আমরা চাই না সেটা খেলোয়াড়দের উপর প্রভাব ফেলুক।” অর্থাৎ পাকিস্তানের বার্তা পরিষ্কার—ক্রিকেটকে কূটনীতির শিকার হতে দেওয়া যাবে না।
সামনে আরও বিতর্কের আশঙ্কা
পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে আরও বিতর্ক তৈরি হতে বাধ্য। একদিকে সরকারের কঠোর অবস্থান, অন্যদিকে বোর্ডের নীরবতা। জনমনে প্রশ্ন—বোর্ড কি শুধুই আর্থিক স্বার্থে চলছে, না কি সরকারের নির্দেশে চুপ? সাংবাদিক বৈঠকের এই আচরণেই যেন সেই দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এখন দেখার, এশিয়া কাপের মঞ্চে নামার আগে বোর্ড নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে কি না।