মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তাঁর শুল্ক (Tariff) নীতি বিশ্বের সাতটির মধ্যে চারটি যুদ্ধকে বাঁচিয়েছে। তিনি বলেন যে তিনি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধকেও থামিয়েছেন এবং নিজেকে “শান্তির রক্ষক (Peacekeeper)” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
Tariff War: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। তিনি সম্প্রতি দাবি করেছেন যে যদি তাঁর কাছে শুল্ক (Tariff) আরোপ করার ক্ষমতা না থাকত, তাহলে বিশ্বের সাতটির মধ্যে অন্তত চারটি যুদ্ধ এতক্ষণে শুরু হয়ে যেত। ট্রাম্প এও বলেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ থামাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আলোচনার বিষয়ই নয়, তাঁর “শান্তি রক্ষক (Peacekeeper)” দাবির দিকেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আসুন জেনে নিই ট্রাম্প আসলে কী বলেছেন এবং তাঁর এই মন্তব্যের পেছনে কী যুক্তি দিয়েছেন।
ট্রাম্প বললেন – শুল্ক না থাকলে অনেক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত
ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি সাক্ষাৎকারের সময় বলেন যে তাঁর শুল্ক নীতি (Tariff Policy) বিশ্বকে অনেক যুদ্ধ থেকে বাঁচিয়েছে। তিনি বলেন, “আমার যদি শুল্ক আরোপের ক্ষমতা না থাকত, তাহলে সাতটির মধ্যে অন্তত চারটি যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। যদি আপনি ভারত ও পাকিস্তানকে দেখেন, তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। সাতটি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছিল। আমি বলতে চাই না যে আমি কী বলেছিলাম, কিন্তু আমার পদক্ষেপ অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।”
ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি কেবল আমেরিকার জন্য শত শত বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেননি, বরং শুল্ক নীতির মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতেও অবদান রেখেছেন। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের শুল্ক নীতির মাধ্যমে কেবল অর্থনৈতিক শক্তিই অর্জন করিনি, বরং আমরা শান্তির রক্ষক (Guardians of Peace) হিসেবেও কাজ করেছি।”
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার সময় ট্রাম্পের মধ্যস্থতা
ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমনে নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর কার্যকালে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, বিশেষ করে ২০১৯ সালে যখন পুলওয়ামা হামলার পর উভয় দেশের মধ্যে বিমান সংঘর্ষ হয়েছিল।
সেই সময় ভারত বালাকোটে বিমান হামলা চালিয়েছিল এবং পাকিস্তান ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে বন্দি করেছিল। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি সেই সময় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে দেননি। তিনি বলেন যে তাঁর সময়ে অনেক দেশের মধ্যে Ceasefire (যুদ্ধবিরতি) হয়েছিল এবং এবং তিনি এই ধরনের সংঘাত প্রশমনের জন্য তাঁর নীতি এবং ব্যক্তিগত আলোচনার ব্যবহার করেছিলেন।
“আমি শান্তির রক্ষক” – ট্রাম্পের আত্মবিশ্বাসী দাবি
ট্রাম্প নিজেকে “শান্তির রক্ষক” বলে দাবি করে বলেছেন যে বিশ্বের উচিত তাঁর নীতির গুরুত্ব বোঝা। তাঁর বক্তব্য ছিল যে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে তিনি অনেক দেশকে যুদ্ধের পথ থেকে দূরে রেখেছেন। তিনি বলেন, “আমার বিরোধীরা বলে যে আমি আক্রমণাত্মক, কিন্তু সত্য হলো আমি যুদ্ধ শেষ করেছি, শুরু করিনি।”
ট্রাম্প বলেন যে তিনি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করেননি, বরং অনেক দেশকে পারস্পরিক সংঘাত থেকেও বাঁচিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার শুল্ক নীতি কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য ছিল না, এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ ছিল যাতে দেশগুলো আলোচনার টেবিলে আসে, যুদ্ধের ময়দানে নয়।”
জাতিসংঘেও ট্রাম্প তাঁর দাবি পুনর্ব্যক্ত করলেন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ধরনের দাবি এই প্রথম নয়। সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (UNGA)-এ তাঁর ভাষণেও তিনি বলেছিলেন যে তিনি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম সাত মাসে সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছেন।
তিনি গর্বের সঙ্গে বলেছিলেন, “আমি সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছি, যা কয়েক দশক ধরে চলছিল। আমি এটি করেছি কারণ আমি জানতাম যে অর্থনৈতিক শক্তিই আসল অস্ত্র।” ট্রাম্প এই মন্তব্যের সময় এও বলেছিলেন যে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার (Nobel Peace Prize) দেওয়া উচিত কারণ তিনি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশাল অবদান রেখেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধ থামানো দেশগুলির তালিকা প্রকাশ করেছিল
জুলাই মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের মুখপাত্র একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে সেই দেশগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা বা নীতির কারণে যুদ্ধ এড়ানো বা শেষ হয়েছিল।
সেই তালিকায় নিম্নলিখিত দেশগুলির উল্লেখ ছিল –
- ভারত ও পাকিস্তান
- ইজরায়েল ও ইরান
- থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া
- রুয়ান্ডা ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো
- সার্বিয়া ও কসোভো
- আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান
- মিশর ও ইথিওপিয়া
সূত্র অনুযায়ী, ট্রাম্প এই সমস্ত সংঘাতে ফোন কল, বাণিজ্য চুক্তি, শুল্ক চাপ এবং মধ্যস্থতার মতো কূটনৈতিক পদক্ষেপ ব্যবহার করেছিলেন।
ট্রাম্পের “শুল্ক নীতি” কীভাবে অস্ত্র হয়ে উঠল
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে শুল্ক (Import Duties) অর্থাৎ আমদানির উপর আরোপিত কর কেবল অর্থনৈতিক অস্ত্র নয়, বরং এগুলি কূটনৈতিক মাধ্যমও বটে। তিনি বলেন যে যখন কোনো দেশ আমেরিকার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কে নমনীয়তা দেখায়, তখন তারা যুদ্ধের মতো পদক্ষেপ থেকেও পিছিয়ে আসে।
তাঁর বক্তব্য ছিল যে যখন তিনি চীন, ভারত, রাশিয়া এবং ইরানের উপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তখন এই দেশগুলি আমেরিকার বিরুদ্ধে কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংঘাত এড়াতে চেষ্টা করেছিল। ট্রাম্পের মতে, “যে দেশগুলি আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে পারত, তারা এখন বাণিজ্যের কথা বলছে।”