মহারাষ্ট্রে প্রবল বর্ষণে মৃত্যু মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা

মহারাষ্ট্রে প্রবল বর্ষণে মৃত্যু মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা

মহারাষ্ট্র জুড়ে টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মুম্বই মহানগরীতে রেল ও বিমান পরিষেবা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। নানদেড় জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। অন্যদিকে গড়চিরোলি, রত্নাগিরি, সিন্ধুদুর্গ ও ঠাকুরসহ একাধিক জেলায় জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক ও জরুরি সতর্কবার্তা

মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতরের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা মুম্বই, ঠাকুর, রায়গড়, রত্নাগিরি ও সিন্ধুদুর্গের জন্য বিশেষভাবে সংকটজনক। ইতিমধ্যেই নদীগুলি বিপজ্জনক স্তরে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ থেকে জল ছাড়ার ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ফসল, গবাদি পশু ও বাড়িঘর ভেঙে পড়ার ক্ষতিতে এনডিআরএফ-এর নিয়মে সাহায্য দেওয়া হবে।

মুম্বইয়ে রেকর্ড বৃষ্টিপাত, অচল শহর

গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বইয়ে রেকর্ড ৩০০ মিমি বৃষ্টি নেমেছে। একাধিক নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে রেললাইন ও সড়ক ডুবে গেছে। সেন্ট্রাল রেলওয়ে মূল লাইন ও হারবার লাইন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ভিখরোলি উপশহরে ২৫৫.৫ মিমি বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে। বোম্বে হাইকোর্ট দুপুরের পরেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। পুরসভা সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। স্কুল-কলেজও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

রেল, ফ্লাইট ও মনোরেল পরিষেবায় ভরাডুবি

জনপরিবহন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত আটটি ফ্লাইট ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অনেক বিমান ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরিতে চলছে। বিদ্যুতের সমস্যায় একটি মনোরেল মাঝপথে দাঁড়িয়ে যায়, প্রায় ২০০ যাত্রী আতঙ্কে সময় কাটান। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, তবে পরে যাত্রীদের নিরাপদে নামানো হয়।

নানদেড়ে উদ্ধার অভিযান, নিখোঁজ বহু মানুষ

নানদেড়ে জেলায় টানা বৃষ্টিতে অন্তত ২৯০ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুকেদ-উদগির সড়কে একটি গাড়ি ও অটোরিকশা জলে ভেসে যায়, চারজন নিখোঁজ বলে জানা গিয়েছে। গড়চিরোলিতে এক যুবক জোড়া স্রোতে ভেসে প্রাণ হারান। চন্দ্রপুর জেলার ভদ্রাবতী সেতু থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির।

কৃষিক্ষেত্রে ভয়াবহ ক্ষতি

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রবল বর্ষণে প্রায় ১২-১৪ লক্ষ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার জানিয়েছেন, অন্তত ১০ লক্ষ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে। ফসল নষ্টের পাশাপাশি গবাদি পশুর মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। নদীগুলির অতিরিক্ত জলাধার প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী দুদিন কোকণ উপকূল ও মুম্বই অঞ্চলে অতিভারী বর্ষণের আশঙ্কা। মুম্বই, ঠাকুর, রায়গড়, রত্নাগিরি ও সিন্ধুদুর্গ জেলায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে। বিদর্ভ ও মরাঠওয়াড়ায় আগামী সপ্তাহে বৃষ্টি কিছুটা কমে ‘অরেঞ্জ’ ও পরে ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’-এ নেমে আসবে বলে আশা।

Leave a comment