কেন্দ্র সরকার ক্রিটিক্যাল মিনারেলস (Critical Minerals)-এর দেশীয় পুনর্ব্যবহার (recycling) ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ১,৫০০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা (incentive) প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এটি ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশনের (National Critical Mineral Mission) একটি অংশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি বছর ৪০ কিলো টন খনিজ উৎপাদন, ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন পুনর্ব্যবহার ক্ষমতা এবং প্রায় ৭০,০০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
Critical Minerals: কেন্দ্র সরকার ক্রিটিক্যাল মিনারেলসের আত্মনির্ভরতা বাড়াতে এবং সবুজ শক্তি (green energy) স্থানান্তরকে গতি দিতে ১,৫০০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রকল্পটি ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশনের অধীনে পরিচালিত হয় এবং এতে কপার (copper), লিথিয়াম (lithium), নিকেল (nickel), কোবাল্ট (cobalt) এবং রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস (rare earth elements) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল দেশীয় পুনর্ব্যবহার ক্ষমতা বাড়িয়ে প্রতি বছর ৪০ কিলো টন খনিজ উৎপাদন করা, ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন পুনর্ব্যবহার ক্ষমতা তৈরি করা এবং প্রায় ৭০,০০০ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাকরির সৃষ্টি করা।
ক্রিটিক্যাল মিনারেলস কি?
ক্রিটিক্যাল মিনারেলসের মধ্যে কপার, লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট এবং রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস অন্তর্ভুক্ত। এই খনিজগুলি ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক যানবাহন, সৌর প্যানেল এবং অন্যান্য পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রযুক্তির (clean energy technologies) উৎপাদনে অপরিহার্য। বিশ্বব্যাপী এদের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। ভারতে এই খনিজগুলির দেশীয় প্রাপ্যতা কম, তাই দেশকে এখন এদের পুনর্ব্যবহার এবং উৎপাদনে জোর দেওয়ার প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রিটিক্যাল মিনারেলসের একটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য সরবরাহ ভারতকে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। এই পদক্ষেপ কেবল শক্তি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা বাড়াবে না, সবুজ শক্তি প্রকল্পগুলির গতিও ত্বরান্বিত করবে।
প্রকল্পের মূল বিষয়
এই প্রকল্পের অধীনে দেশে সেকেন্ডারি উৎস (secondary sources) থেকে খনিজ নিষ্কাশন এবং উৎপাদনের দেশীয় ক্ষমতা উন্নত করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল প্রতি বছর ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন পুনর্ব্যবহার ক্ষমতা তৈরি করা, প্রায় ৪০ কিলো টন ক্রিটিক্যাল মিনারেলসের বার্ষিক উৎপাদন এবং প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা। এছাড়াও, এই প্রকল্প থেকে ৭০,০০০ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্পের মেয়াদ ছয় বছর, যা অর্থবর্ষ ২০২২-২৩ থেকে ২০৩০-৩১ পর্যন্ত চলবে। শুধুমাত্র তারাই এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন যারা প্রকৃত পুনর্ব্যবহারের সাথে জড়িত থাকবেন, কেবল ব্ল্যাক মাস (black mass) উৎপাদনের সাথে যুক্তরা নয়।
পুনর্ব্যবহারের উৎস
এই প্রকল্পের অধীনে পুনর্ব্যবহার ই-ওয়েস্ট (e-waste), লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির স্ক্র্যাপ (lithium-ion battery scrap), অন্যান্য স্ক্র্যাপ এবং এন্ড-অফ-লাইফ (end-of-life) যানবাহনের ক্যাটালিটিক কনভার্টার (catalytic converters) থেকে হবে। এর জন্য প্ল্যান্ট, মেশিনারি এবং ইউটিলিটির (plant, machinery and utility) উপর ২০ শতাংশ ক্যাপেক্স ভর্তুকি (capex subsidy) দেওয়া হবে। সময়মতো উৎপাদন শুরুকারী সংস্থাগুলির জন্য সম্পূর্ণ ভর্তুকি পাওয়ারও ব্যবস্থা আছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুনর্ব্যবহারই হল একটি দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং টেকসই উপায় যার মাধ্যমে ভারত তার খনিজ চাহিদা পূরণ করতে পারে। কারণ খনিজ সরবরাহ শৃঙ্খল (supply chain) তৈরি করতে দীর্ঘ সময় লাগে। খনিজ অনুসন্ধান, নিলাম, খনি পরিচালনা এবং বিদেশী খনিজ সম্পদ সংগ্রহে সময় লাগে। এমন পরিস্থিতিতে, দেশীয় পুনর্ব্যবহার একটি বাস্তব বিকল্প হয়ে উঠেছে।
প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত সুবিধা
এই প্রকল্পের ফলে দেশে ক্রিটিক্যাল মিনারেলসের প্রাপ্যতা বাড়বে এবং বিদেশী নির্ভরতা কমবে। এই পদক্ষেপ বৈদ্যুতিক যানবাহন, ব্যাটারি এবং সবুজ শক্তি শিল্পকে শক্তিশালী করবে। বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিও উপকৃত হবে।
এছাড়াও, এই প্রকল্প পরিবেশগতভাবেও লাভজনক হবে। পুরনো ব্যাটারি এবং ই-ওয়েস্ট পুনর্ব্যবহারের ফলে দূষণ কমবে এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার সম্ভব হবে। এই উদ্যোগ ভারতের সবুজ শক্তি এবং ক্লিন টেকনোলজি (clean technology) প্রকল্পগুলির জন্যও সহায়ক হবে।
ক্রিটিক্যাল মিনারেলস-এ বিশ্ব প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি
ক্রিটিক্যাল মিনারেলসের বিশ্বব্যাপী চাহিদা বাড়ছে। আমেরিকা, ইউরোপ এবং চীন এই খনিজগুলিতে বিনিয়োগ করছে। ভারতের এই উদ্যোগ দেশকে বিশ্ব স্তরে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে এবং খনিজগুলির ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে খনিজগুলির ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করে তোলার এটি একটি বড় পদক্ষেপ।