ভারত কর্তৃক রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ নাভারোর অভিযোগ, X-এর ফ্যাক্ট-চেকিংয়ে তা ভুল প্রমাণিত

ভারত কর্তৃক রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ নাভারোর অভিযোগ, X-এর ফ্যাক্ট-চেকিংয়ে তা ভুল প্রমাণিত

ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ পিটার নাভারো ভারতের বিরুদ্ধে রাশিয়া থেকে তেল কিনে মুনাফা অর্জনের অভিযোগ এনেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া সাইট X-এর ফ্যাক্ট-চেকিং এই দাবিকে ভুল বলে অভিহিত করেছে। এলন মাস্ক বলেছেন, X-এ জনগণই ন্যারেটিভ নির্ধারণ করে।

বিশ্ব আপডেট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগী পিটার নাভারো সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ এনেছেন। তাঁর মতে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে মুনাফা অর্জন করছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির ক্ষতি করছে। নাভারোর এই অভিযোগ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

নাভারোর দাবি এবং ভারতের উপর আক্রমণ

নাভারো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ পোস্ট করে বলেছেন যে ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতি মার্কিন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে। তিনি অভিযোগ করেন যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ভারত বিপুল পরিমাণে রুশ তেল কেনা শুরু করেছে। নাভারোর মতে, এই পদক্ষেপ রাশিয়ার সামরিক শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে এবং বিশ্ব শান্তির জন্য ক্ষতিকর।

X-এর ফ্যাক্ট-চেকিং দাবিটিকে ভুল প্রমাণ করেছে

এলন মাস্কের সোশ্যাল মিডিয়া সাইট X নাভারোর এই দাবির ফ্যাক্ট-চেকিং করেছে। X-এর কমিউনিটি নোটস স্পষ্ট করেছে যে ভারত কর্তৃক রাশিয়া থেকে তেল কেনা সম্পূর্ণ বৈধ। এই আমদানি ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য করা হচ্ছে এবং এটি কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন নয়।

ফ্যাক্ট-চেক থেকে আরও জানা যায় যে খোদ আমেরিকাও রাশিয়া থেকে কিছু জরুরি পণ্য আমদানি করে, যার মধ্যে ইউরেনিয়ামের মতো সামগ্রীও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের উপর নাভারোর অভিযোগগুলি দ্বিমুখী নীতি (double standards) প্রকাশ করে।

এলন মাস্কের প্রতিক্রিয়া

ফ্যাক্ট-চেকের পর এলন মাস্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন যে তাঁর প্ল্যাটফর্মে জনগণ নিজেই ন্যারেটিভ নির্ধারণ করে। এখানে প্রতিটি পক্ষই শোনা হয় এবং তথ্যগুলি সমানভাবে পরীক্ষা করা হয়। মাস্ক সরাসরি নাভারোর কথায় আক্রমণ না করলেও তাঁর মন্তব্য পরোক্ষভাবে নাভারোর দাবিগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে বলে মনে হয়েছে।

নাভারোর পাল্টা জবাব

ফ্যাক্ট-চেক প্রকাশিত হওয়ার পর নাভারো এটিকে "আ bal" বলে অভিহিত করেন এবং মাস্কের বিরুদ্ধে প্রচারণা ছড়ানোর অভিযোগ আনেন। তিনি দাবি করেন যে ভারত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই তেল কিনছে এবং এটি মুনাফাখোরি। কিন্তু X-এর কমিউনিটি নোটস আবার স্পষ্ট করে যে ভারতের জন্য এই আমদানি শক্তি চাহিদা পূরণের অংশ এবং এটি সম্পূর্ণ বৈধ।

আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

X-এর ফ্যাক্ট-চেক আরও একটি দিক উন্মোচন করেছে। আমেরিকা নিজেও রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম এবং অন্যান্য সামগ্রী আমদানি করে। এমতাবস্থায়, ভারতকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যুক্তিসঙ্গত নয়। নাভারোর মন্তব্যগুলি এই কারণে একপেশে এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলে বিবেচিত হচ্ছে।

নাভারোর বিতর্কিত মন্তব্য

পিটার নাভারো এখানেই থামেননি। তিনি ভারতকে রাশিয়ার সমর্থনের অভিযোগ এনে এটিকে "ক্রেমলিনের লন্ড্রোম্যাট" পর্যন্ত বলেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি জাতিগত মন্তব্যও করেছেন, যা তাঁর বক্তব্যকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছে। বহুবার নাভারো ভারতকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সহযোগী পর্যন্ত বলেছেন এবং এটিকে "মোদি-র যুদ্ধ" বলতেও দ্বিধা করেননি। এই মন্তব্যগুলি ভারত-বিরোধী বলে মনে করা হচ্ছে এবং আমেরিকা-ভারত সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলার মতো বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা তার জ্বালানি নিরাপত্তা (energy security) এবং সার্বভৌমত্বের (sovereignty) অংশ। ভারত আগেও বিভিন্ন দেশ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে আসছে এবং এটি তার স্বাধীন বিদেশ নীতির অংশ। যেকোনো বিশ্বব্যাপী সংঘাত বা যুদ্ধবিরতি (ceasefire) সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত ভারত তার অগ্রাধিকার এবং স্বার্থ বিবেচনা করে নেয়।

Leave a comment