ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত: মন্ত্রিসভার অনুমোদন

ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত: মন্ত্রিসভার অনুমোদন

ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে দীর্ঘদিনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) অবশেষে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভা এই চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে এবং আগামী ২৪ জুলাই লন্ডনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুই দিনের ব্রিটেন সফরের সময় এই চুক্তিটি সম্পন্ন হবে। তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও উপস্থিত থাকবেন।

বহু আলোচনার পর সম্মতি

ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে এই চুক্তি নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা চলছিল। দুই দেশের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের মধ্যে ১৪ দফা আলোচনা হয়েছে। অবশেষে ৬ মে ২০২৫ তারিখে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা শেষ হওয়ার ঘোষণা করা হয়। এখন ক্যাবিনেটের অনুমোদনও পাওয়া গেছে।

ভারত থেকে রপ্তানি বাড়বে, ট্যাক্স हटবে

এই FTA-এর সবচেয়ে বড় সুবিধা পাবে ভারত, শ্রম-প্রধান পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে। বস্ত্র, চামড়া ও জুতার মতো পণ্য ব্রিটেনে রপ্তানির ক্ষেত্রে এখন আর কোনো ট্যাক্স লাগবে না। এর ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইউরোপীয় বাজারে নতুন সুবিধা পাবে এবং তাদের পণ্য সেখানে আগের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা যাবে।

বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো এই চুক্তির দ্বারা বেশি উপকৃত হবে, যারা এতদিন ইউরোপীয় ট্যাক্সের কারণে ব্রিটেনে পণ্য বিক্রি করতে পারত না অথবা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকত।

ব্রিটেন থেকে আমদানিও সস্তা হবে

অন্যদিকে, ব্রিটেন থেকে ভারতে আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ পরিবর্তন দেখা যাবে। ভারত সরকার এই চুক্তিতে ব্রিটিশ হুইস্কি ও বিলাসবহুল গাড়ির ওপর ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব রেখেছে। এতে ব্রিটিশ ব্র্যান্ডগুলো ভারতে সস্তা হতে পারে।

তবে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, সব পণ্যের ক্ষেত্রেই একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে। খুব বেশি পণ্যকে চুক্তির বাইরে রাখা হয়নি। এর মানে হল এই চুক্তি ব্যাপক এবং এতে উভয় পক্ষই একে অপরের প্রয়োজন ও চাহিদার প্রতি খেয়াল রেখেছে।

ऊर्जा নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হবে

বিদেশ সচিব আরও জানিয়েছেন যে, এই সফরের সময় ভারত-ব্রিটেনের মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হবে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জ্বালানি সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যার ফলে ভারতের জ্বালানি সরবরাহের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। গুজরাটের वाডিনার রিফাইনারি, যেখানে রাশিয়ার কোম্পানি রোснефть-এর বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে, সেটিও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে।

ভারত সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বিদেশ সচিব বলেন, "আমরা দ্বৈত মানদণ্ড গ্রহণ করি না। যা কিছু প্রয়োজন হবে, আমরা করব। वैश्विक ऊर्जा बाजार की स्थिति को लेकर भारत की दृष्टि बिल्कुल स्पष्ट है।"

ব্রিটেনের তরফেও আগ্রহ

ব্রিটেন সরকারের তরফেও এই চুক্তি নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেন ইউরোপের বাইরে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার খুঁজছে এবং ভারত তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, এই চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের নতুন পথ খুলবে।

২০৩০ সালের মধ্যে ১২০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা

এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত ও ব্রিটেন উভয় দেশই আগামী পাঁচ বছরে তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তির ফলে ভারত কেবল বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে না, বরং ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কও আরও মজবুত হবে।

FTA-এর পরে আর কী কী সহজ হতে পারে

এই চুক্তিতে বাণিজ্য ছাড়াও পরিষেবা খাতের কিছু প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর ফলে ভারতীয় আইটি ও কনসাল্টিং কোম্পানিগুলোর ব্রিটেনে পরিষেবা দিতে সুবিধা হবে। পাশাপাশি, ভারতে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় শিক্ষা খাতেও বিনিয়োগ বাড়তে পারে।

এছাড়াও, স্টার্টআপ, ডিজিটাল বাণিজ্য, প্রযুক্তি, ফিনান্স ও হেলথকেয়ারের মতো ক্ষেত্রগুলোতেও এই চুক্তির পরে অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

Leave a comment