ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি: জাপান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময়

ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি: জাপান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময়

নয়াদিল্লি: ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রস্তাবিত বাণিজ্য চুক্তির প্রেক্ষাপটে আমেরিকা কর্তৃক জাপান ও ইন্দোনেশিয়ার সাথে করা নতুন বাণিজ্যিক চুক্তিগুলি ভারতের জন্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তিগুলি থেকে ভারতের কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যখন শুল্ক, কৃষি বাজারে প্রবেশাধিকার এবং বিনিয়োগের বিষয় আসে।

শুল্কে ছাড়, কিন্তু দাম অনেক

আমেরিকা-জাপান চুক্তির অধীনে ওয়াশিংটন জাপানি পণ্যের উপর প্রস্তাবিত ২৫% শুল্ক কমিয়ে ১৫% করেছে। বিনিময়ে, জাপান মার্কিন কৃষি পণ্যকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে সম্মত হয়েছে এবং আমেরিকাতে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

একইভাবে, ইন্দোনেশিয়াও আমেরিকার সাথে চুক্তি করেছে, যার অধীনে মার্কিন শুল্ক ৪০% থেকে কমিয়ে ১৯% করা হয়েছে। এর বিনিময়ে জাকার্তা সরকার ৯৯% মার্কিন পণ্যের উপর থেকে তাদের শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর মধ্যে কৃষি, প্রযুক্তি এবং শিল্প পণ্য প্রধান।

এই দুটি চুক্তি থেকে স্পষ্ট হয় যে আমেরিকা কৌশলগত মিত্রদের থেকে শুল্কে ছাড় দেওয়ার বিনিময়ে ব্যাপক বাজার সুবিধা এবং নীতি সংক্রান্ত ছাড় চায়।

ভারতের উপর সম্ভাব্য চাপ এবং লাভের সম্ভাবনা

ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, যদি আমেরিকার সাথে বাণিজ্য চুক্তি হয়, তবে ভারতীয় পণ্যের উপর মার্কিন শুল্ক ১৫-২০% এর মধ্যে নির্ধারিত হতে পারে। এই হার ভিয়েতনাম (২০%) এবং ইন্দোনেশিয়ার (১৯%) থেকে কম হবে, যা ভারতকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিতে পারে।

ট্রেড ইকোনমিস্ট রিতেশ কুমার সিংয়ের মতে, “যদি আমেরিকা ১৫-২০% শুল্কে সম্মত হয়, তবে ভারত আসিয়ান দেশগুলির তুলনায় ভাল অবস্থানে থাকবে।”

তবে, একই সাথে এই আশঙ্কাও করা হচ্ছে যে আমেরিকা ভারতের থেকে কৃষি ও দুগ্ধ বাজার খুলে দেওয়া, জেনেটিক্যালি মডিফাইড (জিএম) ফিডকে অনুমোদন দেওয়া, রিম্যানুফ্যাকচারড গুডস গ্রহণ করা এবং ডিজিটাল বাণিজ্য ও পণ্য মানের উপর আমেরিকান নিয়ম अपनाने-এর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় ​​শ্রীবাস্তব সতর্ক করে বলেছেন যে, “এই দাবিগুলি মানা হলে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব, জনস্বাস্থ্য এবং কৃষি ভিত্তিক জীবনযাত্রা প্রভাবিত হতে পারে।”

কৃষির উপর বিশেষ নজর রাখার প্রয়োজন

ভারত বর্তমানে মার্কিন কৃষি পণ্যের উপর গড়ে ৩৮% শুল্ক আরোপ করে, যেখানে আমেরিকা ভারতীয় কৃষি পণ্যের উপর মাত্র ৫.৩% ট্যাক্স নেয়। আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে এই ভারসাম্যহীনতা দূর করার পক্ষে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যদি কোনও চুক্তিতে কৃষি পণ্যের বাজার খুলতেও হয়, তবে তা কোটা সিস্টেমের অধীনে সীমিত পরিমাণে হওয়া উচিত।

প্রাক্তন বাণিজ্য সচিব অনুপ ওয়াধওয়ানের মতে, “ ভারতকে সাবধানে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাড়াহুড়ো করে কোনও বড় ছাড় দিলে তা দেশীয় কৃষি খাতের জন্য মারাত্মক হতে পারে।”

Leave a comment