ভারত কর্তৃক রাশিয়া থেকে তেল কেনা এবং নিজেদের কৃষি ও দুগ্ধ বাজারকে সুরক্ষিত রাখা আমেরিকাকে উদ্বেগে ফেলেছে। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী বলেছেন যে এই দুটি কারণ সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
India US Trade Tension: আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাড়তে থাকা দূরত্ব নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে শুধুমাত্র ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনাই দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনার কারণ নয়, বরং এর পিছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে যা দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করছে।
ভারতের জ্বালানি চাহিদা এবং রুশ তেলের ভূমিকা
মার্কো রুবিও ফক্স রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে ভারতের জ্বালানি চাহিদা অনেক বেশি। এর মধ্যে তেল, গ্যাস এবং কয়লার মতো সম্পদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ভারতের বিশাল জনসংখ্যা এবং দ্রুত বাড়তে থাকা অর্থনীতিকে চালানোর জন্য জরুরি। রুবিও-র মতে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনে কারণ সেই তেল অন্যান্য উৎসের তুলনায় সস্তা হয়, এবং অনেক সময় তা বিশ্ব বাজারের দামের থেকেও কম দামে পাওয়া যায়।
তিনি এটাও বলেছেন যে আমেরিকা এই বিষয়ে আপত্তি জানায় যে ভারত কর্তৃক কেনা এই তেল রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অর্থনৈতিক সাহায্য করে। তাই, এটি ভারত-মার্কিন সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রুশ তেলই নয়, কৃষি এবং দুগ্ধ সেক্টরও বিবাদের মূল
যদিও রুবিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এটি একা কারণ নয়। তিনি জানিয়েছেন যে আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও অনেক মতভেদ রয়েছে। এই মতভেদের সবচেয়ে বড় কারণ হল ভারত কর্তৃক নিজেদের কৃষি এবং দুগ্ধ সেক্টরকে বিদেশি হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা।
কী চায় আমেরিকা?
আমেরিকা চায় যে তারা ভারতের কৃষি বাজারে আরও বেশি প্রবেশাধিকার পাক, বিশেষ করে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (GM) শস্য, দুগ্ধজাত পণ্য, ভুট্টা, সয়াবিন, আপেল, বাদাম এবং ইথানলের মতো পণ্যের জন্য। আমেরিকা এই ক্ষেত্রগুলিতে আমদানি শুল্ক অর্থাৎ ট্যারিফ কমানোর দাবি জানাচ্ছে যাতে তাদের পণ্য ভারতীয় বাজারে সস্তা দামে আসতে পারে।
ভারতের জবাব: ছোট কৃষকদের সুরক্ষা জরুরি
ভারতের পক্ষ থেকে আমেরিকার দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে যে দুগ্ধ, চাল, গম এবং জিএম ফসলের উপর ট্যারিফ কমানো বর্তমানে সম্ভব নয়। ভারতীয় আধিকারিকদের মতে, এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ দেশের প্রায় ৭০ কোটি গ্রামীণ মানুষের জীবিকাকে প্রভাবিত করতে পারে। এর মধ্যে প্রায় ৮ কোটি ছোট দুগ্ধ কৃষক অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ভারতের যুক্তি হল আমেরিকা থেকে সস্তা এবং ভর্তুকিযুক্ত কৃষি পণ্য দেশে আসতে দেওয়া ছোট কৃষকদের আয়ের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে।
অন্যান্য সেক্টরেও সংঘাত
কৃষি এবং দুগ্ধ ছাড়াও আমেরিকা ভারতের বাজারে অন্যান্য ক্ষেত্রেও আরও ভালো প্রবেশাধিকার চায়। এর মধ্যে ইথানল, আপেল, বাদাম, অটোমোবাইল, মেডিকেল ডিভাইস, ওষুধ এবং মদের মতো পণ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমেরিকা চায় যে ভারত তাদের নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার কম করুক, কাস্টমস নিয়ম সরল করুক এবং ডিজিটাল ট্রেড, পেটেন্ট এবং ডেটা স্টোরেজ সংক্রান্ত আইনগুলিতে ছাড় দিক।