শুভমন গিলের নেতৃত্বে ভারতীয় দলকে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হারের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, যা এখন দলের উপর চাপ সৃষ্টি করবে নিশ্চিত।
ক্রীড়া সংবাদ: ভারত এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে পাঁচ টেস্ট ম্যাচের অ্যান্ডারসন-তেন্ডুলকর ট্রফির দ্বিতীয় ম্যাচটি ২ জুলাই থেকে বার্মিংহামের এজবাস্টন মাঠে শুরু হতে চলেছে। ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুভমন গিলের সামনে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে, কারণ প্রথম টেস্টে হারের পর টিম ইন্ডিয়া সিরিজে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে। এমতাবস্থায়, এজবাস্টন টেস্ট জিতে সমতা ফেরানোর চাপ স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল — এজবাস্টনের পিচ ভারতীয় দলের জন্য কতটা সহায়ক হবে?
কেমন হবে এজবাস্টনের পিচ?
বার্মিংহামের এজবাস্টন মাঠ সবসময়ই ফাস্ট বোলারদের সহায়ক পিচের জন্য পরিচিত। এখানকার পিচকে ভারসাম্যপূর্ণ বা 'ব্যালান্সড' ধরা হয়, যেখানে প্রথম দুই দিন ফাস্ট বোলাররা বাউন্স এবং সিম মুভমেন্ট পান, যেখানে ম্যাচ যত গড়ায়, পিচ ব্যাটসম্যানদের জন্য সহজ হতে থাকে। এজবাস্টনে জুলাই মাসের আবহাওয়ায় প্রায়ই মেঘ দেখা যায়, যার ফলে ডিউকস বল অতিরিক্ত সুইং করে। এর ফলে টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের শুরুতেই বেশ বেগ পেতে হয়। এই মাঠে অনেক সময় প্রথম সেশনে ৩-৪ উইকেট পতনের প্রবণতাও দেখা গেছে।
তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনের কথা বললে, পিচ ফ্ল্যাট হতে শুরু করে এবং ব্যাটসম্যানরা রান করতে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু পঞ্চম দিনে আবার পিচে ফাটল ধরে এবং ক্ষয় হতে শুরু করে, যার ফলে স্পিনাররা টার্ন পেতে শুরু করে। এই কারণেই ম্যাচের ফলাফল প্রায়শই পিচের এই পরিবর্তনশীল প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
এজবাস্টনের গড় স্কোর
- প্রথম ইনিংস: প্রায় ৩১০ রান
- দ্বিতীয় ইনিংস: প্রায় ২৮০ রান
- তৃতীয় ইনিংস: ২৩0–২৫০ রান
- চতুর্থ ইনিংস: ১৭০–২০০ রান
এজবাস্টনে ভারতের ইতিহাস
এজবাস্টন ভারতীয় দলের জন্য কখনোই "ভাগ্যবান" ভেন্যু ছিল না। টিম ইন্ডিয়া এখানে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে ৭টিতে হারের সম্মুখীন হয়েছে, যেখানে ১টি ম্যাচ ড্র হয়েছে (১৯৮৬)। অর্থাৎ, জয়ের খাতা এখনো পর্যন্ত খোলা হয়নি। এই দিক থেকে, শুভমন গিলের নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়ার উপর রেকর্ড ভাঙার চাপ স্পষ্ট দেখা যাবে। এজবাস্টনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স
- বিরাট কোহলি — ২ ম্যাচ, ২৩১ রান
- সুনীল গাভাস্কার — ৩ ম্যাচ, ২১৬ রান
- ঋষভ পন্থ — ১ ম্যাচ, ২০৩ রান
- শচীন তেন্ডুলকর — ২ ম্যাচ, ১৮৭ রান
- গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ — ২ ম্যাচ, ১৮২ রান
- এমএস ধোনি — ১ ম্যাচ, ১৫১ রান
- রবীন্দ্র জাদেজা — ১ ম্যাচ, ১২৭ রান
এজবাস্টনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন স্কোর
সর্বোচ্চ স্কোর: ইংল্যান্ড ২০১১ সালে ভারতের বিরুদ্ধে ৭১০ রান করেছিল।
সর্বনিম্ন স্কোর: সাউথ আফ্রিকা ১৯২৯ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৫০ রান করে, যা এখন পর্যন্ত এই মাঠের সর্বনিম্ন টেস্ট স্কোর।
এজবাস্টনে এবার কি আশা করা যায়?
আবহাওয়া দপ্তরের মতে, এজবাস্টন টেস্টের প্রথম দুই দিন হালকা মেঘ থাকবে, যা ফাস্ট বোলারদের সাহায্য করবে। ভারতের কাছে জাসপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ এবং রবীন্দ্র জাদেজার মতো বোলার রয়েছে, যারা এই পরিস্থিতির সুবিধা নিতে পারে। ব্যাটিংয়ে শুভমন গিল নিজেই বড় দায়িত্ব পালন করবেন, যেখানে যশস্বী জয়সওয়াল, বিরাট কোহলি এবং শ্রেয়াস আইয়ারের মতো ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকেও রানের প্রত্যাশা থাকবে।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ড দল তাদের নিজস্ব পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলবে। জেমস অ্যান্ডারসন, অলি রবিনসনের মতো বোলাররা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত।
টিম ইন্ডিয়ার জন্য কৌশল কী হতে পারে?
- প্রথম দুই দিন টপ অর্ডার সাবধানে খেলুক
- ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা
- তৃতীয় দিনে বড় শট খেলার সুযোগ
- পঞ্চম দিনে স্পিনারদের জন্য উইকেটে চাপ তৈরি করা
এজবাস্টনের চ্যালেঞ্জ ভারতের জন্য শুধু পিচের নয়, মানসিকও কারণ এখানে এখনো পর্যন্ত জয়ের খাতা খোলা যায়নি। শুভমন গিলের নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়া ইতিহাস পরিবর্তনের সোনালী সুযোগ পাবে, তবে তার জন্য তাদের প্রথম দিন থেকেই আক্রমণাত্মক এবং কৌশলগত ক্রিকেট খেলতে হবে।