টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দলীয় সর্বোচ্চ ৫ ইনিংস

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দলীয় সর্বোচ্চ ৫ ইনিংস

টেস্ট ক্রিকেটকে ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিনতম সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়, কারণ এখানে কেবল শক্তিশালী শট খেলার দক্ষতা থাকলেই চলে না, এর সাথে প্রয়োজন ধৈর্য, কৌশল, মানসিক দৃঢ়তা এবং পরিস্থিতির গভীর উপলব্ধি।

স্পোর্টস নিউজ: টেস্ট ক্রিকেট খেলাটির সবচেয়ে কঠিন এবং গৌরবময় ফরম্যাট হিসেবে বিবেচিত হয়। পাঁচ দিনব্যাপী এই খেলায় ব্যাটসম্যানদের শুধু বোলারদের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয় না, বরং মানসিক এবং শারীরিক ক্লান্তিকেও জয় করতে হয়। এই কারণেই টেস্ট ক্রিকেটে 400 বা 500 রান করা স্কোরও অনেক সময় ম্যাচ জেতানোর জন্য যথেষ্ট হয়, কিন্তু যখন কোনো দল 800-900 রানের গণ্ডি পার করে, তখন তা নিজেই একটি ইতিহাস তৈরি করে।

আজ আমরা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের 5টি সবচেয়ে বড় দলীয় ইনিংস নিয়ে আলোচনা করব, যার মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোরটি হলো 952 রান, যা গত 27 বছর ধরে কেউ ভাঙতে পারেনি। আসুন, এই ঐতিহাসিক ইনিংসগুলোর গল্প জানি:

শ্রীলঙ্কা বনাম ভারত (1997) — 952/6

কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে 1997 সালে খেলা ভারত ও শ্রীলঙ্কার এই ম্যাচটি আজও টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান করা দলীয় ইনিংস হিসেবে রেকর্ড গড়ে রেখেছে। ভারত প্রথমে ব্যাট করে 537/8 রানে ইনিংস ঘোষণা করে, কিন্তু জবাবে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা এমন তাণ্ডব চালান যে রেকর্ড ভেঙে যেতে থাকে। সনাত জয়সুরিয়া 340 রান এবং রোশন মহানামা 225 রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন।

দুজনের মধ্যে 576 রানের পার্টনারশিপ হয়, যা আজও টেস্ট ইতিহাসের বৃহত্তম জুটিগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। শ্রীলঙ্কা 6 উইকেটে 952 রান করে ইনিংস ঘোষণা করে এবং ম্যাচটি ড্র হয়। এই ইনিংসকে টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে দুর্দান্ত দলীয় ইনিংস বললে ভুল হবে না।

ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া (1938) — 903/7

1938 সালে ওভালে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ টেস্টে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করে। ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে 903/7 রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। সেই সময়ে লিওনার্ড হাটন 364 রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন, যা কয়েক দশক ধরে রেকর্ড হিসেবে টিকে ছিল। অস্ট্রেলিয়া এই স্কোরের চাপে ভেঙে পড়ে এবং মাত্র 201 রানে অলআউট হয়ে যায়। ইংল্যান্ড এই ম্যাচটি ইনিংস ও 579 রানে জিতে ইতিহাস তৈরি করে।

ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (1930) — 849 রান

1930 সালে কিংস্টন (জ্যামাইকা)-এর মাঠে ইংল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে 849 রান করে। ম্যাচটি ড্র হলেও, ইংল্যান্ডের ব্যাটিং সেই যুগে সকলকে বিস্মিত করে। তখনও দীর্ঘ ইনিংস খেলার প্রবণতা এত বেশি ছিল না, তাই এই স্কোর একটি বিশাল অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান (2024) — 823/7

2024 সালে ইংল্যান্ড পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুলতানে 823/7 রান করে এবং ম্যাচটি নিজেদের করে নেয়। বিশেষ বিষয় হল, ইংল্যান্ড মাত্র 150 ওভারে এই স্কোর তৈরি করে, যা প্রমাণ করে যে আধুনিক টেস্ট ক্রিকেটেও দলগুলোর আক্রমণাত্মক মনোভাব বজায় রয়েছে। এই ম্যাচে অনেক ব্যাটসম্যান দ্রুত স্ট্রাইক রেটে খেলে পাকিস্তানকে কোনো সুযোগ দেয়নি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম পাকিস্তান (1958) — 790/3

1958 সালে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 790/3 রানের বিশাল স্কোর গড়েছিল। এই ইনিংসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল গ্যারিফিল্ড সোবার্সের ডাবল সেঞ্চুরি, যিনি 365 রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেছিলেন। সেই সময়ে এই স্কোর ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য কোনো জাদু থেকে কম ছিল না। বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুত খেলার প্রবণতা বেড়েছে, যাতে ফলাফল নিশ্চিত করা যায়। দলগুলো 800-900 রান করার পরিবর্তে 400-500 রানে ইনিংস ঘোষণা করে ম্যাচ জিততে চায়। এই কারণেই শ্রীলঙ্কার 952 রানের রেকর্ড গত 27 বছরে কেউ ভাঙতে পারেনি।

Leave a comment