২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপ: ধোনির নেতৃত্বে ভারতের ঐতিহাসিক জয়, পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন!

২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপ: ধোনির নেতৃত্বে ভারতের ঐতিহাসিক জয়, পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন!

২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখটি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। এই দিনেই ভারতীয় দল প্রথম টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। 

স্পোর্টস নিউজ: সালটা ছিল ২০০৭, জায়গা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ এবং তারিখ ছিল ২৪ সেপ্টেম্বর। এটি ছিল প্রথম টি২০ বিশ্বকাপ এবং ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। পরিবেশ এমন ছিল যেন পুরো শহরে নীরবতা বিরাজ করছে, মানুষ টিভি স্ক্রিনের সামনে আটকে ছিল এবং সর্বত্র ছিল উত্তেজনার আবহ। সেই সময়, ছয় মাস আগে টিম ইন্ডিয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে খারাপভাবে হেরে বাদ পড়েছিল। 

এরপর শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী এবং রাহুল দ্রাবিড় টি২০ তে খেলতে অস্বীকার করেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে অধিনায়কত্ব নতুন মুখ মহেন্দ্র সিং ধোনিকে দেওয়া হয়েছিল, যিনি দলে এক নতুন আশা হয়ে এসেছিলেন।

টি২০ বিশ্বকাপ ২০০৭: ভারতীয় দলের নতুন মুখ

টি২০ বিশ্বকাপ ২০০৭-এ ভারতের কাছে বেশিরভাগই অনভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছিল। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী এবং রাহুল দ্রাবিড়ের মতো বড় নামগুলি ছয় মাস আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে হারের পর টি২০ তে খেলতে অস্বীকার করেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছিল এমএস ধোনিকে, যিনি ভারতীয় ক্রিকেটের এক নতুন এবং অচেনা মুখ ছিলেন।

ধোনির নেতৃত্বে ভারতীয় দলকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছিল না। কিন্তু এই তরুণ দলটি মাঠে এমন পারফর্ম করেছে যে প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমী হতবাক হয়ে গিয়েছিল। এটি সেই দল ছিল যেটি প্রমাণ করে দিয়েছিল যে উদ্দীপনা এবং আত্মবিশ্বাস যেকোনো বড় দলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

ফাইনাল ম্যাচ: ভারত বনাম পাকিস্তান

  • ম্যাচের স্থান: জোহানেসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা
  • তারিখ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭

অধিনায়ক এমএস ধোনি টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। চোটগ্রস্ত বীরেন্দ্র সেহওয়াগের পরিবর্তে অভিষেককারী ইউসুফ পাঠানই প্রথম শট খেলেন এবং মোহাম্মদ আসিফের বলে ছক্কা মেরে দুর্দান্ত সূচনা করেন। যদিও ইউসুফ দ্রুত আউট হয়ে যান, কিন্তু তাঁর এই অসাধারণ শুরু দলকে উৎসাহিত করেছিল।

গৌতম গম্ভীর চাপের মুখে দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন। তিনি ৫৪ বলে ৭৫ রান করেন, যার মধ্যে ৮টি চার এবং ২টি ছক্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত রোহিত শর্মা দ্রুত ৩০ রান করে ভারতকে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৭ রানের স্কোর এনে দেন।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া এবং শেষ ওভারের উত্তেজনা

পাকিস্তান দল জবাবে খেলা শুরু করে, কিন্তু আরপি সিং এবং ইরফান পাঠান দুর্দান্ত বোলিং করে শুরুতেই ধাক্কা দেন। প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ হাফিজ আউট হন এবং কিছুক্ষণ পরেই কামরান আকমলও প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। তবে মিসবাহ-উল-হক চার-ছক্কার বৃষ্টি করে ম্যাচটিকে শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে আসেন। শেষ ৬ বলে পাকিস্তানের জয়ের জন্য ১৩ রান দরকার ছিল। সবার মনোযোগ ছিল এই দিকে যে শেষ বলটি কাকে দেওয়া হবে।

ধোনি শেষ ওভারটি যোগিন্দর শর্মার হাতে তুলে দেন, যা সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। প্রথম বল ওয়াইড, দ্বিতীয় বল ডট। তৃতীয় বলে মিসবাহ ছক্কা মারেন। এখন জয়ের জন্য মাত্র ৬ রান বাকি ছিল। পরের বলে মিসবাহ স্কুপ শট খেলেন এবং শ্রীশান্ত ক্যাচ ধরে নেন। এই ক্যাচের পর স্টেডিয়ামে যেন ঝড় বয়ে গেল। দলের সকল খেলোয়াড় মাঠে দৌড়ে আসেন এবং ধোনি তাঁর জার্সি একটি ছোট বাচ্চাকে দিয়ে দেন, যা তাঁর সরলতা ও বিনয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

Leave a comment