শনিবার শ্রদ্ধা ও নিয়ম মেনে শনিদেবের পূজা, ব্রত ও দান করলে জীবনে উন্নতি, নিরাপত্তা ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায়। শনি চালিসা পাঠ, দান-পুণ্য এবং সেবার মনোভাব দ্বারা শনিদেব প্রসন্ন হন এবং ব্যক্তিকে কর্ম অনুসারে শুভ ফল দেন।
শনিবার পূজা উপায়: শনিবারের দিনটি শনিদেবের আরাধনা এবং ন্যায়বিচারের দেবতার কৃপা লাভের জন্য বিশেষ বলে বিবেচিত হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে ব্রহ্ম মুহূর্তে স্নান করে পূজা ও ব্রত করলে জীবনের বাধা দূর হয় এবং মনে শান্তি আসে। শ্রদ্ধাপূর্বক করা মন্ত্র জপ, শনি চালিসা পাঠ এবং অভাবগ্রস্তদের দান করলে শনিদেব প্রসন্ন হন। এটি করলে কেবল শনি দোষই শান্ত হয় না, বরং সফলতা ও স্থিতিশীলতাও অর্জিত হয়।
শনিদেবের পূজার গুরুত্ব
শনি গ্রহকে ন্যায়বিচারের দেবতা বলা হয়েছে। তিনি কারো প্রতি পক্ষপাত করেন না এবং শুধুমাত্র কর্মের ভিত্তিতে ফল দেন। তাই শনিবারের দিনে শনিদেবের পূজা করার অর্থ হল নিজের কর্মের আত্মপর্যালোচনা করা এবং সত্যের পথে চলার সংকল্প নেওয়া।
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তির রাশিতে শনির অবস্থান দুর্বল হয় বা শনির সাড়ে সাতি বা ঢাইয়া প্রভাব চলে, তবে শনিদেবের পূজা ও দান দ্বারা তার কষ্ট কম হতে পারে।
শনিবার সকালে এভাবে শুরু করুন
শনিবারের দিনে ব্রহ্ম মুহূর্তে বা সূর্যোদয়ের আগে ওঠা শুভ বলে মনে করা হয়। প্রথমে স্নান করুন এবং পরিষ্কার কাপড় পরুন। এরপর মনে এই সংকল্প নিন যে আজকের দিনটি আপনি শনিদেবের আরাধনা ও সেবার জন্য উৎসর্গ করবেন। এই দিনে মনে বিনয় ও সেবার মনোভাব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি, কারণ শনিদেব সেইসব মানুষের উপর বিশেষ কৃপা করেন যারা অন্যের সাহায্য করেন এবং সততার সাথে জীবনযাপন করেন।

পূজার স্থানের প্রস্তুতি এবং প্রতীকী পূজা
যদি বাড়িতে পূজার স্থান থাকে, তবে সেটি পরিষ্কার করুন এবং উত্তর দিকে মুখ করে পূজার প্রস্তুতি নিন। কালো বা নীল কাপড়ের আসন বিছিয়ে তার উপর শনিদেবের মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন। যদি মূর্তি উপলব্ধ না থাকে, তবে একটি সুপারিকে প্রতীক হিসাবে রাখতে পারেন। এই সরল উপায়টিও শনিদেবের কৃপা লাভে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
এরপর পূজার থালায় নীল ফুল, অক্ষত (চাল), কাজল, সিঁদুর এবং তিল রাখুন। এই বস্তুগুলি শনিদেবকে অর্পণ করুন। পরে পঞ্চামৃত দিয়ে অভিষেক করুন এবং সরষের তেলের প্রদীপ জ্বালান। শনিদেবের কাছে সরষের তেল ও কালো তিল বিশেষ প্রিয় বলে মনে করা হয়, তাই এগুলির ব্যবহার শুভ ফল দেয়।
ভোগ ও দানের গুরুত্ব
পূজার পর ফল, মিষ্টি বা বিউলির ডালের খিচুড়ির ভোগ দিন। ভোগ দেওয়ার পর এটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করতে পারেন।
এছাড়াও, শনিদেবের সন্তুষ্টির জন্য অভাবগ্রস্তদের অন্ন, বিউলির ডাল, কালো তিল বা লোহার জিনিস দান করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এটি কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, সামাজিকভাবেও পুণ্যের কাজ। দান করার সময় মনে অহংকার রাখবেন না, বরং এটি সেবার মনোভাব নিয়ে করুন।
মন্ত্র জপে মানসিক ভারসাম্য লাভ হয়
- শনিবারের পূজায় মন্ত্র জপের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটি মনকে শান্তি দেয় এবং নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি দেয়।
- আপনি ॐ শং শনৈশ্চরায় নমঃ মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করতে পারেন। এই মন্ত্রটি শনিদেবকে প্রসন্ন করে এবং আপনার জীবনে স্থিতিশীলতা আনে।
- আরেকটি কার্যকর মন্ত্র হলো – ॐ নীলাঞ্জন সমাভাসং রবি পুত্রং যমাগ্রজম্। ছায়ামাতর্ণ্ডসম্ভূতং তং নমামি শনৈশ্চরম্॥
- এই মন্ত্রের নিয়মিত জপে শনি গ্রহের প্রতিকূলতা দূর হয় এবং মনোবল শক্তিশালী হয়।
শনি চালিসা এবং হনুমান চালিসা পাঠ
শনিবারের দিনে শনি চালিসা, হনুমান চালিসা বা বজরং বাণ পাঠ করা শুভ বলে মনে করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, হনুমান জীর পূজা করলে শনির কুপ্রভাব শান্ত হয়। তাই শনির পাশাপাশি হনুমান জীর উপাসনাও করা উচিত।
আপনি মন্দিরে গিয়ে হনুমান জী-কে সিঁদুর, জুঁই তেল এবং লাল ফুল অর্পণ করতে পারেন। হনুমান চালিসা পাঠ করার সময় মনকে একাগ্র রাখুন এবং প্রতিটি পঙ্ক্তি শ্রদ্ধার সাথে পড়ুন।
অশ্বত্থ গাছের পূজা
শনিবারের পূজায় অশ্বত্থ গাছের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বলা হয় যে অশ্বত্থ গাছে দেবতাদের বাস এবং শনিদেবও এতে বাস করেন।
এই দিনে অশ্বত্থ গাছে জল, কালো তিল এবং গঙ্গাজল নিবেদন করুন। তারপর তিন বা সাত বার পরিক্রমা করুন।
পরিক্রমা করার সময় ॐ শং শনৈশ্চরায় নমঃ মন্ত্রটি জপ করুন। এই উপায়ে জীবনে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং ধন-সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায়।
শনিদেবের পূজায় কী করবেন না
শনিবারের দিনে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। এই দিনে কারো নিন্দা করবেন না, মিথ্যা বলবেন না এবং বিনা কারণে কাউকে কষ্ট দেবেন না।
শনিদেব শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচারের দেবতা, তাই যারা খারাপ কাজ করে তাদের প্রতি তিনি অসন্তুষ্ট হন। এই দিনে মাংস, মদ্য বা তামসিক খাবার থেকে বিরত থাকুন।
একই সাথে, অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করুন — তা কোনো দরিদ্রকে খাবার দেওয়া হোক বা কোনো বৃদ্ধ ব্যক্তিকে সহায়তা করা হোক। এই কর্মকেই শনিদেবের সর্বশ্রেষ্ঠ পূজা বলে মনে করা হয়।
পূজা থেকে প্রাপ্ত সুবিধা
শনিবার শ্রদ্ধার সাথে পূজা করলে ব্যক্তির জীবনে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়। পুরনো বাধা দূর হয়, কর্মজীবনে স্থিতিশীলতা আসে এবং আর্থিক অবস্থা মজবুত হয়।
যদি কোনো ব্যক্তির উপর শনির সাড়ে সাতি বা ঢাইয়ার প্রভাব থাকে, তবে এই পূজা সেই কষ্ট কমাতে সহায়ক বলে মনে করা হয়। এছাড়াও, পরিবারে সদ্ভাব ও মানসিক শান্তিও বৃদ্ধি পায়।
শ্রদ্ধা ও সেবাই প্রকৃত পূজা
শনিবারের পূজা শুধুমাত্র নিয়মাবলী পালনের নাম নয়, বরং এটি নিজের জীবনে শৃঙ্খলা ও সত্যবাদিতা অবলম্বনের বার্তা দেয়। শনিদেব সেইসব মানুষদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন যারা কঠোর পরিশ্রমের সাথে জীবনযাপন করেন এবং অন্যদের সাহায্য করেন।
তাই পূজার পাশাপাশি নিজের ব্যবহার ও কর্মকেও শুদ্ধ রাখা জরুরি। যখন মনে সেবা ও সততার ভাব থাকে, তখনই শনিদেবের আশীর্বাদ পূর্ণ রূপে প্রাপ্ত হয়।












