সোমবার ভগবান শিব ও চন্দ্রের পূজা করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে এই দিনে বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, কালো তিল, মাংস এবং অ্যালকোহলের মতো জিনিস খাওয়া উচিত নয়, কারণ এগুলো চন্দ্রের শুভতাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং মানসিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
সোমবারের প্রতিকার: হিন্দু ধর্মে সোমবারকে ভগবান শিব ও চন্দ্রের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জ্যোতিষীরা বলেন যে এই দিনে তামসিক খাবার খেলে চন্দ্র দুর্বল হয়, যার ফলে ব্যক্তির মন ও আবেগের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই সোমবার বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, কালো তিল এবং আমিষ খাবার এড়িয়ে চলা শুভ বলে মনে করা হয়। সাত্ত্বিক খাবার খেলে চন্দ্র দোষ শান্ত হয় এবং মনে শান্তি ও ভারসাম্য বজায় থাকে।
সোমবারের দিনটি কেন বিশেষ
সনাতন ধর্মে সপ্তাহের প্রতিটি দিনের সম্পর্ক কোনো না কোনো দেবতা ও গ্রহের সাথে যুক্ত। সোমবার ভগবান শিব ও চন্দ্রের সাথে সম্পর্কিত। এই দিনে শিবজির পূজা, জলাভিষেক, রুদ্রাভিষেক এবং ব্রত পালনের প্রথা খুব প্রচলিত। মনে করা হয় যে সোমবার ব্রত পালন করলে ভগবান শিবের আশীর্বাদ পাওয়া যায় এবং চন্দ্রের দোষ শান্ত হয়।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, শিবজি চন্দ্রকে তাঁর মস্তকে ধারণ করেন। তাই সোমবার এমন আচরণ ও খাবার গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয় যা মনকে শান্ত, ভারসাম্যপূর্ণ এবং সাত্ত্বিক রাখে। তামসিক বা উগ্র প্রকৃতির খাবার এই ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
জ্যোতিষশাস্ত্রীয় কারণ
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে চন্দ্র ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য, চিন্তা, আবেগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। যখন চন্দ্র শক্তিশালী হয়, তখন ব্যক্তির মন শান্ত থাকে, চিন্তা স্পষ্ট হয় এবং আত্মবিশ্বাস বজায় থাকে। কিন্তু যদি চন্দ্র দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে ব্যক্তি উদ্বেগ, অনিদ্রা, মানসিক চাপ এবং বিভ্রান্তির মতো সমস্যায় ভোগে।
এই কারণে সোমবারের দিন সাত্ত্বিক খাবার খাওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। এটি কেবল শরীরকে হালকা রাখে না, বরং মানসিক দিক থেকেও ব্যক্তিকে স্থির রাখে। আবার কিছু বিশেষ খাদ্যদ্রব্য আছে যা এই দিনে খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

সোমবার কী কী জিনিস এড়িয়ে চলবেন
১. বেগুন
জ্যোতিষ ও আয়ুর্বেদ উভয় শাস্ত্র অনুসারে, বেগুনকে তামসিক খাবারের শ্রেণীতে রাখা হয়েছে। তামসিক খাবার সেই খাবার যা মনকে অস্থির, উত্তেজিত বা অলস করে তোলে। সোমবার বেগুন খেলে সাত্ত্বিকতা কমে যায়।
মনে করা হয় যে বেগুন খেলে অলসতা ও উগ্রতা বাড়ে, যার কারণে ব্যক্তি ধ্যান ও পূজায় একাগ্র হতে পারে না। এই কারণেই সোমবারের ব্রত বা পূজার দিনে বেগুন এড়িয়ে চলা উচিত।
২. কালো তিল
কালো তিলের সম্পর্ক শনিদেবের সাথে যুক্ত বলে মনে করা হয়। শনি ও চন্দ্রের প্রকৃতির মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। যেখানে চন্দ্র আবেগ ও কোমলতার প্রতীক, সেখানে শনি কঠোর অনুশাসন ও তপস্যার প্রতীক।
জ্যোতিষশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে সোমবার কালো তিল খেলে মন ভারী হতে পারে এবং মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। এই দিনটি শিবজির পূজার জন্য, তাই শনির সাথে সম্পর্কিত জিনিস এই দিন এড়িয়ে চলা ভালো।
৩. রসুন ও পেঁয়াজ
রসুন ও পেঁয়াজকে তামসিক খাবারের শ্রেণীতে রাখা হয়েছে। এগুলো খেলে শরীরে উষ্ণতা ও উত্তেজনা বাড়ে। সোমবার এই জিনিসগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি বলে মনে করা হয় কারণ এগুলো মানসিক অশান্তি তৈরি করতে পারে।
ধ্যান ও সাধনার সময় মনকে শান্ত রাখতে ফল, দুধ এবং হালকা খাবারের মতো সাত্ত্বিক আহার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। রসুন ও পেঁয়াজ খেলে ধ্যান ও একাগ্রতা প্রভাবিত হতে পারে, তাই এই দিন এগুলো থেকে দূরে থাকা ভালো।
৪. তেতো বা কষা খাবার
চন্দ্রকে শরীরের কফ ও পিত্তের ভারসাম্যের কারণ বলে মনে করা হয়। সোমবার অতিরিক্ত তেতো বা কষা জিনিস খেলে এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
নিম বা অন্যান্য তেতো জিনিস খেলে শরীরে পিত্ত ও কফ উভয়ই বাড়ে, যার ফলে খিটখিটে মেজাজ, অস্থিরতা এবং নেতিবাচকতা বাড়ে। তাই এই দিনে হালকা, মিষ্টি এবং শান্ত প্রকৃতির খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৫. মাংস ও অ্যালকোহল
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সোমবারের দিন আমিষ খাবার ও অ্যালকোহল সেবন নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। মাংস ও অ্যালকোহল উভয়ই তামসিক প্রবৃত্তি বাড়ায়। এগুলো মন ও শরীর উভয়কেই অশান্ত করে তোলে।
চন্দ্র আবেগের গ্রহ, তাই এই জিনিসগুলো সেবন করলে মানসিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। এছাড়াও, ভগবান শিবের পূজার দিনে এগুলো সেবন করা ধর্মীয়ভাবে অনুচিত বলে মনে করা হয়।
চন্দ্রের উপর প্রভাব
জ্যোতিষশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে সোমবার তামসিক খাবার খেলে চন্দ্র দুর্বল হয়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে ব্যক্তির মন ও আবেগের উপর। দুর্বল চন্দ্র ব্যক্তিকে অস্থির, বিষণ্ণ এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তুলতে পারে।
এর বিপরীতে, ফল, দুধ, দই এবং হালকা খাবারের মতো সাত্ত্বিক খাবার মনকে শান্ত ও স্থির রাখে। যখন ব্যক্তি সাত্ত্বিকতার দিকে অগ্রসর হয়, তখন তার মানসিক ও আবেগিক ভারসাম্য উন্নত হয় এবং এটিই চন্দ্রের শুভতাকে শক্তিশালী করে।
সোমবার কেমন আহার করা উচিত
সোমবারের দিন ব্রত পালনকারীরা সাধারণত ফলহার করেন। দুধ, দই, ফল, চিনাবাদাম, সাবু এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা উপকারী।
যদি কেউ ব্রত না-ও রাখে, তাহলেও এই দিনে হালকা, সাত্ত্বিক এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বেশি মশলাদার, ভাজাভুজি বা তামসিক খাবার গ্রহণ করবেন না।
এর পাশাপাশি, শিবলিঙ্গে জল, দুধ বা চাল নিবেদন করা এবং "ওঁ নমঃ শিবায়" জপ করা চন্দ্র দোষ শান্ত করতে সাহায্য করে।
সাত্ত্বিকতা থেকে মেলে মানসিক শান্তি
জ্যোতিষীদের মতে, সোমবার সাত্ত্বিক আহার এবং সংযত দৈনন্দিন জীবনযাপন করলে ব্যক্তির মধ্যে শান্তি, ভারসাম্য এবং ইতিবাচকতা বৃদ্ধি পায়। চন্দ্রকে শান্ত গ্রহ বলে মনে করা হয়, তাই এর প্রভাব সরাসরি মনের উপর পড়ে।
তামসিক খাবার চন্দ্রের শক্তিকে দুর্বল করে, যখন সাত্ত্বিক আহার এটিকে শক্তিশালী করে তোলে। এই কারণেই সোমবারের দিনটি কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।












