উৎপন্না একাদশী ২০২৫ এই বছর ১৫ নভেম্বর পালিত হবে। মার্গশীর্ষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের এই পবিত্র তিথি ভগবান বিষ্ণু এবং বাল গোপালের পূজা-অর্চনার জন্য বিশেষ গুরুত্ব রাখে। এই দিনে ব্রত, দান, স্নান এবং রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে ভক্তরা অক্ষয় পুণ্য, মানসিক শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করেন।
উৎপন্না একাদশী: এই বছর উৎপন্না একাদশী ১৫ নভেম্বর, শুক্রবার পালিত হবে, যা মার্গশীর্ষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের পবিত্র তিথি। এই দিনে ভক্তরা ভগবান বিষ্ণু এবং বাল গোপালের পূজা-অর্চনা করেন। ব্রত, দান, স্নান এবং রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে ভক্তদের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং অক্ষয় পুণ্য লাভ হয়। এই সুযোগটি বিশেষভাবে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যারা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিকভাবে নিজেদের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে চান।
ধর্মীয় গুরুত্ব এবং ব্রতের বিশেষ মাহাত্ম্য
উৎপন্না একাদশী ২০২৫ এই বছর ১৫ নভেম্বর, শুক্রবার পালিত হবে। মার্গশীর্ষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে এই ব্রত হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত শুভ ও পবিত্র বলে গণ্য হয়। এই দিনে ভগবান বিষ্ণু এবং শ্রীকৃষ্ণের পূজা-অর্চনার মাধ্যমে ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। বৈদিক পঞ্চাঙ্গ অনুসারে ১৪ নভেম্বর রাত ১২:৪৯ মিনিটে অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী শুরু হবে এবং ১৫ নভেম্বর রাত ০২:৩৭ মিনিটে শেষ হবে। তাই এই বছর উৎপন্না একাদশী ১৫ নভেম্বরই পালিত হবে।
জ্যোতিষাচার্য ও ট্যারো কার্ড রিডার নীতিকা শর্মার মতে, মার্গশীর্ষ মাসকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপ বলে মনে করা হয়। এই দিনে লাড্ডু গোপাল রূপে শ্রীকৃষ্ণের পূজা বিশেষভাবে ফলদায়ক বলে বিবেচিত হয়। যে ভক্তরা এই দিনে ব্রত পালন করেন এবং ভগবান বিষ্ণু বা বাল গোপালের উপাসনা করেন, তাদের সমস্ত কাজ সফল হয় এবং তারা অক্ষয় পুণ্য লাভ করেন।
ব্রত ও পূজা বিধি
উৎপন্না একাদশী ব্রত পালনের জন্য এক দিন আগে দশমী তিথিতে সন্ধ্যার খাবারের পর দন্তধাবন (দাঁতন) করা আবশ্যিক, যাতে মুখে কোনো অন্নের অংশ না থাকে। এর পর উপবাস থাকা এবং বাণীর উপর সংযম রাখা শুভ বলে মনে করা হয়। একাদশীর সকালে স্নানের পর ব্রতের সংকল্প নিন। ভগবান বিষ্ণু এবং বাল গোপালের পূজা করার সময় ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য এবং ষোড়শ উপচারের প্রতি বিশেষ মনোযোগ রাখা উচিত।
সারাদিন নিরাহার থেকে বা কেবল ফল খেয়ে ব্রত সম্পন্ন করা হয়। রাতে দীপদান, ভজন-কীর্তন এবং জাগরণ করা শুভ বলে মনে করা হয়। পরের দিন ব্রাহ্মণদের ভোজন করানো এবং দান করা ব্রতের সমাপ্তির প্রতীক। এই দিনে ॐ নমো ভগবতে বাসুদেবায় মন্ত্র জপ করলে বিশেষ লাভ হয়।
বাল গোপালের অভিষেক ও পূজার পদ্ধতি
নীতিকা শর্মার মতে, পূজা গণেশ পূজনের মাধ্যমে শুরু করা উচিত। গণেশ জিকে জল, বস্ত্র, ফুল, চন্দন, দূর্বা এবং লাড্ডুর ভোগ নিবেদন করুন। এর পর বাল গোপালের অভিষেক দক্ষিণাবর্তী শঙ্খের জলে করা হয়। তাঁকে হলুদ বস্ত্র পরান, ময়ূরের পালকের মুকুট পরান এবং মাখন-মিছরির ভোগ নিবেদন করুন। পূজার সময় 'কৃং কৃষ্ণায় নমঃ' মন্ত্র জপ করা ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।

স্কন্দ পুরাণে উৎপন্না একাদশীর মাহাত্ম্য
স্কন্দ পুরাণের বৈষ্ণব খণ্ডে এই ব্রতের বিশেষ মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। এতে উল্লেখ আছে যে, যে ভক্তরা উৎপন্না একাদশী পালন করেন, তারা অক্ষয় পুণ্য লাভ করেন এবং পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে। মার্গশীর্ষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীতে ভগবান বিষ্ণু থেকে একাদশী দেবীর উৎপত্তি হয়েছিল। তাই এটিকে সমস্ত একাদশীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সিদ্ধিদায়ক বলে মনে করা হয়।
উপায় ও শুভ কর্ম
এই দিনে দান-পুণ্য করা, স্নান করা এবং রাত্রি জাগরণ করা অত্যন্ত শুভ। এছাড়াও, বাল গোপালের সামনে তুলসীর সাথে মাখন-মিছরির ভোগ নিবেদন করা, ভগবান শিব এবং হনুমান জির পূজা করা, দীপ জ্বালানো এবং হনুমান চালিশা পাঠ করা উপকারী বলে মনে করা হয়।
রাশি অনুসারে বিশেষ সামগ্রী অর্পণ করলেও লাভ হয়
- মেষ: লাড্ডুর ভোগ
- বৃষ: পঞ্চামৃত নিবেদন
- মিথুন: সবুজ রঙের বস্ত্র
- কর্কট: ক্ষীরের ভোগ
- সিংহ: লাল বস্ত্র
- কন্যা: ময়ূরের পালক
- তুলা: কামধেনু গরুর মূর্তি
- বৃশ্চিক: গুড়ের ভোগ
- ধনু: হলুদের তিলক
- মকর: পদ্ম ফুল
- কুম্ভ: শমীর পাতা
- মীন: চন্দনের তিলক
ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক লাভ
উৎপন্না একাদশীর ব্রত পালনের মাধ্যমে ভক্তদের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি, মানসিক শান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি আসে। এই দিনে ভগবান বিষ্ণু এবং বাল গোপালের ভক্তিতে সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়। স্নান, দান এবং জাগরণের মাধ্যমে নেতিবাচক শক্তি দূর হয় এবং ভক্তের জীবন ইতিবাচক শক্তিতে ভরে ওঠে।












