ভারত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি 336 রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ 1-1 এ সমতা ফেরাল। এজবাস্টনে এই জয় ঐতিহাসিক ছিল, কারণ 58 বছর পর ভারতীয় দল এই মাঠে কোনো টেস্ট ম্যাচ জিতল।
IND Vs ENG 2nd Test: ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে এজবাস্টনের নাম সবসময় একটি তিক্ত স্মৃতি হিসেবে লেখা ছিল। 58 বছর ধরে ভারত এই মাঠে জয়ের মুখ দেখেনি, কিন্তু অবশেষে শুভমন গিলের নেতৃত্বে এই মিথ ভেঙে গেল। ভারত ইংল্যান্ডকে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে 336 রানে হারিয়ে সিরিজ 1-1 এ ড্র করে।
এজবাস্টনের পিচে গিল ব্রিগেড সেই কীর্তি দেখিয়েছে যা প্যাটৌদি, কপিল দেব, সৌরভ গাঙ্গুলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং বিরাট কোহলিও করতে পারেননি। এই জয়ে অনেক তারকা উজ্জ্বল ছিলেন, কিন্তু পাঁচজন খেলোয়াড় তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। আসুন সেই পাঁচ বীরের কথা জানি, যাদের দমে ভারত এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের অহংকার চূর্ণ করেছে।
1. শুভমন গিল - অধিনায়কই নন, সংকটমোচনও
শুভমন গিল এই টেস্টে এমন ব্যাটিং করেছেন যে ইংরেজ বোলারদের মনোবল ভেঙে যায়। গিল প্রথম ইনিংসে 269 রান করেন, যেখানে 387 বল মোকাবেলা করে 28টি চার মারেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও গিলের ব্যাট চলে এবং তিনি 161 রান করেন। এইভাবে, ম্যাচে তার মোট অবদান ছিল 430 রান।
গিল উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করা এবং প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা বিশ্বের নবম এবং ভারতের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান। তার অধিনায়কত্ব এবং দুর্দান্ত ব্যাটিং ভারতকে এজবাস্টনে ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছে।
2. আকাশ দীপ - বল দিয়ে ইংল্যান্ডের মেরুদণ্ড ভাঙলেন
ফাস্ট বোলার আকাশ দীপ এই ম্যাচে তার বোলিং দিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। প্রথম ইনিংসে তিনি 4 উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে 6 উইকেট নিয়ে মোট 10 উইকেট শিকার করেন। তার সুইং এবং লাইন লেন্থের সামনে ইংল্যান্ডের শীর্ষ অর্ডার থেকে শুরু করে নিচের দিকের ব্যাটসম্যানদের সবাই সংগ্রাম করতে দেখা গেছে। আকাশ দীপ ইংল্যান্ডে 10 উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় ভারতীয়। এর আগে 1986 সালে চেতন শর্মা এই কীর্তি গড়েছিলেন।
3. মোহাম্মদ সিরাজ - অন্য প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত সমর্থন
ফাস্ট বোলিং আক্রমণে আকাশ দীপের সঙ্গী মোহাম্মদ সিরাজও পিছিয়ে ছিলেন না। সিরাজ পুরো ম্যাচে সাত উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রাখেন। তার রিভার্স সুইং এবং নির্ভুল ইয়র্কার ইংল্যান্ডকে সামলানোর কোনো সুযোগ দেয়নি। সিরাজ প্রথম স্পেলেই ইংলিশ টপ অর্ডারে চাপ সৃষ্টি করেন, যা শেষ পর্যন্ত বজায় ছিল।
4. রবীন্দ্র জাদেজা - ব্যাট দিয়ে নির্ভরযোগ্য অবদান
জাদেজা এই ম্যাচে তার অলরাউন্ডার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। তিনি প্রথম ইনিংসে 89 রান করেন এবং দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত 69 রান যোগ করেন। কঠিন সময়ে যখন গিলের একজন সঙ্গীর প্রয়োজন ছিল, তখন জাদেজা ক্রিজে টিকে থেকে রান করতে থাকেন। এছাড়াও ফিল্ডিংয়েও জাদেজা কামাল দেখিয়েছেন এবং একটি কঠিন ক্যাচ নিয়ে ইংল্যান্ডের শেষ আশা ভেঙে দেন।
5. ঋষভ পন্থ - চাপে থেকেও দেখালেন ক্লাস
ভারতীয় সহ-অধিনায়ক ঋষভ পন্থেরও এজবাস্টন টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। প্রথম ইনিংসে তিনি 25 রান করলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে 65 রানের দ্রুত ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। তার উইকেটকিপিংও অসাধারণ ছিল, বিশেষ করে আকাশ দীপ এবং সিরাজের বোলিংয়ে তিনি বেশ কয়েকটি কঠিন ক্যাচ ধরেন এবং স্টাম্পিংয়ে দ্রুততা দেখান।
গিল ব্রিগেড ইতিহাস গড়ল
এজবাস্টনে এই জয় ভারতের জন্য শুধু একটি টেস্ট ম্যাচের জয় ছিল না, বরং 58 বছরের খরা শেষ করার প্রতীকও ছিল। এর আগে ভারত এখানে আটটি টেস্ট খেলেছিল, যার মধ্যে সাতটিতে হেরেছিল এবং একটি ড্র হয়েছিল। গিলের নেতৃত্বে ভারতীয় দল এই মায়াজাল ভেঙে ইতিহাস তৈরি করেছে। এখন পাঁচ ম্যাচের সিরিজ 1-1 এ সমান এবং পরবর্তী ম্যাচে টিম ইন্ডিয়া আত্মবিশ্বাসে ভরপুর দেখা যাবে।