ইনফোসিস ১৮,০০০ কোটি টাকার শেয়ার বাইব্যাক ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি ১,৮০০ টাকা দরে ১০ কোটি শেয়ার কিনবে। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ১৯% প্রিমিয়াম পাবেন এবং কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (EPS) বাড়তে পারে। এটি আইটি সেক্টরের বৃহত্তম বাইব্যাক বলে মনে করা হচ্ছে।
শেয়ার বাইব্যাক: ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইটি কোম্পানি ইনফোসিস বৃহস্পতিবার ১৮,০০০ কোটি টাকার শেয়ার বাইব্যাক ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি ১,৮০০ টাকা প্রতি শেয়ার দরে ১০ কোটি শেয়ার কিনবে, যা বর্তমান বাজার দরের চেয়ে ১৯% বেশি। এই বাইব্যাক সম্পূর্ণ নগদে হবে এবং মোট পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের ২৫% এর কম থাকবে। বাইব্যাকের ফলে ইনফোসিসের শেয়ারের সংখ্যা কমে যাবে, যার ফলে শেয়ার প্রতি আয় (EPS) বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন। এর আগেও কোম্পানি ২০১৭, ২০১৯ এবং ২০২১ সালে বাইব্যাক করেছে।
শেয়ার বাইব্যাক কী
শেয়ার বাইব্যাকের সহজ অর্থ হলো যখন কোনো কোম্পানি তার নিজের শেয়ারগুলো বাজার থেকে ফিরিয়ে কেনে। এটি করলে বাজারে কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা কমে যায়। ফলে অবশিষ্ট শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পায়। কোম্পানিগুলো সাধারণত তখনই বাইব্যাক করে যখন তারা মনে করে যে তাদের শেয়ারের দাম বাজারে কম মূল্যায়ন করা হচ্ছে অথবা তাদের কাছে অতিরিক্ত নগদ অর্থ রয়েছে যা তারা বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দিতে চায়।
ইনফোসিসের বাইব্যাক কীভাবে হবে
ইনফোসিস বাজারকে জানিয়েছে যে এই বাইব্যাক সম্পূর্ণ নগদে করা হবে। কোম্পানি স্পষ্ট করেছে যে এর আকার তার মোট পরিশোধিত মূলধন এবং ফ্রি রিজার্ভের ২৫% এর কম হবে। এই গণনা ৩০ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত নিরীক্ষিত আর্থিক তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে যে এই পদক্ষেপ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মূল্য সৃষ্টি করবে।
বিনিয়োগকারীরা বড় সুবিধা পাবেন
ধরা যাক, ইনফোসিসের কাছে বর্তমানে ১০০ কোটি শেয়ার আছে। কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা এর মধ্যে ১০ কোটি শেয়ার ফিরিয়ে কিনবে। যদি শেয়ারের দাম ১,৮০০ টাকা হয়, তবে কোম্পানিকে ১০ কোটি × ১,৮০০ টাকা অর্থাৎ মোট ১৮,০০০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এতে শেয়ারহোল্ডাররা নগদে সুবিধা পাবেন।
এখন যদি কোম্পানির বার্ষিক আয় ২৫,০০০ কোটি টাকা হয়, তবে আগে শেয়ার প্রতি আয় অর্থাৎ ইপিএস ছিল ২৫,০০০ কোটি ÷ ১০০ কোটি = ২৫০ টাকা। কিন্তু বাইব্যাকের পর মোট শেয়ার কমে ৯০ কোটি হবে। এক্ষেত্রে ইপিএস বেড়ে হবে ২৫,০০০ কোটি ÷ ৯০ কোটি = প্রায় ২৭৭ টাকা। যখন ইপিএস বাড়ে, তখন কোম্পানির শেয়ারের মূল্যও বাড়তে শুরু করে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য কেন এই সিদ্ধান্ত বিশেষ
বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে বাইব্যাকের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে। যখন কোনো কোম্পানি নিজের শেয়ার কেনে, তখন এটি ইঙ্গিত দেয় যে এটি তার ব্যবসা এবং ভবিষ্যতের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখে। এছাড়াও, এটি দেখায় যে কোম্পানির নগদ অর্থের অভাব নেই। ইনফোসিসের এই পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের কেবল ভাল রিটার্ন দেবে না, কোম্পানির মূল্যও বাড়াবে।
আগেও বাইব্যাক করেছে
ইনফোসিস এবারই প্রথম শেয়ার বাইব্যাকের ঘোষণা করেনি। এর আগে কোম্পানি ২০১৭, ২০১৯ এবং ২০২১ সালেও শেয়ার বাইব্যাক করেছে। প্রতিবার কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডারদের সুবিধা দিয়েছে। আইটি সেক্টরে এটি এখন পর্যন্ত বৃহত্তম বাইব্যাক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভারতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাইব্যাক করেছিল মুকেশ আম্বানির কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। তবে ইনফোসিসের এই বাইব্যাকও বেশ বড় এবং আইটি সেক্টরের দিক থেকে এটি রেকর্ড-ব্রেকিং হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।