ইরান ও আমেরিকার মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে, ওয়াশিংটন পোস্টের একটি নতুন প্রতিবেদন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের গোপন কথোপকথন ইন্টারসেপ্ট করার পরে, মার্কিন কর্মকর্তারা জানতে পারেন যে, ইরানি কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে মার্কিন হামলায় ক্ষয়ক্ষতিকে কম করে দেখছেন।
ওয়াশিংটন: ইরান ও আমেরিকার মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চলমান উত্তেজনা আবারও আলোচনায় এসেছে। সাম্প্রতিক বিতর্কের মূল কারণ হলো ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদন, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইরানি কর্মকর্তাদের গোপন কথোপকথন ইন্টারসেপ্ট করেছে। সেই কথোপকথনে তারা বলছিলেন যে, মার্কিন হামলায় তাদের পরমাণু কর্মসূচির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চারটি ভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, ইরানি কর্মকর্তারা তাদের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে দেখাতে এবং মার্কিন চাপকে হালকাভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছিলেন। এই কথোপকথনে, ইরানি কর্মকর্তারা তাদের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে কথিত হামলা নিয়ে আলোচনা করছিলেন এবং দাবি করছিলেন যে তাদের মূল অবকাঠামো সুরক্ষিত আছে।
অন্যদিকে, মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা মনে করেন যে, ইরানের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ সত্য নাও হতে পারে এবং এটি নিছক একটি কৌশলগত প্রচারণা হতে পারে। রয়টার্সও একজন বেনামী সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে, এই গোপন কথোপকথনগুলোর উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করা যায় না।
ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (DIA) মূল্যায়ন ভিন্ন
ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (DIA) প্রাথমিক ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকার সাম্প্রতিক হামলার পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কেবল কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে গেছে, সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়নি। এই প্রতিবেদন হোয়াইট হাউস এবং ট্রাম্প প্রশাসনের দাবির উপর প্রশ্ন তুলেছে। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে যে, মার্কিন বিমান হামলা ইরানের বেশ কয়েকটি পরমাণু কেন্দ্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যা তেহরানের পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
তবে, DIA-এর মতে, ইরানের বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা অনেক স্থানে আগেই ব্যাকআপ তৈরি করে রেখেছিলেন, যার মাধ্যমে তারা দ্রুত আবার কর্মসূচি শুরু করতে পারে।
হোয়াইট হাউসের পাল্টা জবাব
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হোয়াইট হাউস তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, "এটা ভাবা হাস্যকর যে, ইরানের বেনামী কর্মকর্তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা পরিস্থিতির সঠিক তথ্য রাখেন। তাদের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি আমেরিকার পদক্ষেপের কারণে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।" তিনি আরও বলেন, ইরানের পক্ষ থেকে করা এই দাবি কেবল তাদের নিজেদের জনগণ এবং আঞ্চলিক মিত্রদের আশ্বস্ত করার জন্য একটি প্রচারণা।
ট্রাম্প তার দাবি পুনর্ব্যক্ত করলেন
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ফক্স নিউজের সানডে মর্নিং ফিউচার্স উইথ মারিয়া বার্টিরোমো শো-তে তার দাবিটি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, "আমরা ইরানের সেই স্থানগুলোতে আঘাত হেনেছি, যা আগে কেউ করেনি। তাদের সম্পূর্ণ পরমাণু কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার অবসান হয়েছে, তা কিছু সময়ের জন্য হলেও।" ট্রাম্প বলেন, ইরান যদি এ বিষয়ে অন্য কিছু দাবি করে, তবে তা মিথ্যা এবং আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাও তা ভালো করেই জানে।
ইরানের নীরবতা, তবে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ইরানের নিরাপত্তা পরিষদ এবং পরমাণু শক্তি সংস্থার মধ্যে সাম্প্রতিক হামলার পর গুরুতর আলোচনা চলছে। কিছু সূত্রের দাবি, ইরান খুব শীঘ্রই তাদের পরমাণু কেন্দ্রগুলোকে পুনরায় চালু করার জন্য নতুন কৌশল তৈরি করছে এবং সম্ভবত আগামী মাসগুলোতে নতুন সাইটেরও উন্মোচন করতে পারে।
তেহরান থেকে বর্তমানে এই প্রতিবেদনের উপর কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ কিছু সূত্রের মতে, দেশটির সামরিক এবং পরমাণু ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে "সুরক্ষিত" রয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে কোনো মার্কিন বা ইসরায়েলি পদক্ষেপের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
ইরানের পরমাণু স্বপ্ন কি শেষ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি মার্কিন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়নি। এর কারণ হলো, ইরান দীর্ঘদিন ধরে তার কর্মসূচি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে, যাতে একটি স্থানে হামলা হলে পুরো ব্যবস্থা অচল না হয়ে যায়। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন এবং DIA-এর প্রাথমিক মূল্যায়ন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আমেরিকা ও ইসরায়েল যদি ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে চায়, তাহলে তাদের ক্রমাগত নজরদারি ও ব্যবস্থা নিতে হবে।