ইরানের যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনাস্থা, চূড়ান্ত জবাবের প্রস্তুতি

ইরানের যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনাস্থা, চূড়ান্ত জবাবের প্রস্তুতি

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আঞ্চলিক যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরান আক্রমণ চায় না, তবে প্রয়োজন হলে চূড়ান্ত জবাব দিতে প্রস্তুত।

যুদ্ধবিরতি: ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ আঞ্চলিক যুদ্ধবিরতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে স্পষ্ট করেছেন যে তাঁর দেশ এই যুদ্ধবিরতির উপর আস্থা রাখে না। তিনি বলেন, ইরান যে কোনও আক্রমণের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চূড়ান্ত ও কঠোর জবাব দেবে। তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার সমকক্ষদের সঙ্গে আলাপেও তিনি একই বার্তা দিয়েছেন।

ইরানের স্পষ্ট বার্তা: যুদ্ধবিরতিতে আস্থা নেই

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ সোমবার এক গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি অঞ্চলে চলমান যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দিহান। তিনি বলেন, ইরান এই যুদ্ধবিরতির উপর আস্থা রাখে না এবং যে কোনও সম্ভাব্য মোকাবিলার জন্য সম্পূর্ণভাবে সতর্ক ও প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি স্পষ্ট করেছেন যে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র অঞ্চলে যুদ্ধ বিস্তারের কোনো অভিপ্রায় রাখে না, তবে নিজের নিরাপত্তার সঙ্গে কোনো আপস করবে না। যদি ইরানের উপর আক্রমণ হয়, তবে তার জবাব শুধু তীব্র হবে না, বরং ধ্বংসাত্মকও হবে।

আঞ্চলিক আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ

ইরানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার সমকক্ষদের সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনের সময় এই কথা বলেন। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুলার এবং মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ খালিদ নরদিনের সঙ্গে পৃথক আলাপে নাসিরজাদেহ স্পষ্ট করেছেন যে ইরান যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।

তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে নাসিরজাদেহ বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ নিয়ে সতর্ক। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র এই যুদ্ধবিরতির উপর আস্থা রাখে না। তাই আমরা বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য কৌশল তৈরি করে রেখেছি।” তিনি আরও যোগ করেন যে, ইরান যুদ্ধ বাড়াতে চায় না, তবে সতর্কতায় কোনো কমতি করবে না।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য সংঘাত

ইরান আগেও বলেছে যে যদি তার সীমান্ত, স্বার্থ বা সহযোগী সংগঠনগুলির উপর আক্রমণ হয়, তবে তারা তার জবাব দিতে পিছপা হবে না। নাসিরজাদেহর এই সর্বশেষ বিবৃতি থেকে বোঝা যায় যে তেহরান এখন যুদ্ধবিরতির উপর নির্ভর করে চুপ করে থাকতে রাজি নয়।

মালয়েশিয়ার সমর্থন

মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ খালিদ নরদিনের সঙ্গে আলাপকালে ইরানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল ও আমেরিকার নীতির উপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি মালয়েশিয়ার সেই ভূমিকার প্রশংসা করেন যেখানে তারা ইসরাইলের আগ্রাসী মনোভাবের নিন্দা করেছে।

মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীও এই আলোচনায় স্পষ্ট করেছেন যে তাঁর দেশ ইরানকে একটি নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসাবে বিবেচনা করে। তিনি বলেন, “আমরা এই সংঘাতের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করি এবং এই কারণেই মালয়েশিয়া শুরু থেকেই এই যুদ্ধের কঠোর নিন্দা করেছে।”

পরমাণু আলোচনা নিয়েও আলোচনা

তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুলার আলোচনার সময় পরমাণু ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, তিনি আশা করেন যে পরমাণু আলোচনা এমন একটি চুক্তিতে শেষ হবে যা কেবল ইরানের জন্য নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্য লাভজনক হবে। তিনি যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে একই সঙ্গে স্বীকার করেছেন যে এই পরিস্থিতি স্থায়ী হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

জবাবী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত

ইরানি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র বেশ কয়েকটি কৌশলগত পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সামরিক কাঠামো এবং গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় রাখা হয়েছে। ইসরাইল ও আমেরিকার চাপানো সংঘাতের মধ্যে তাকে আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নাসিরজাদেহ আরও বলেন যে, যদি আক্রমণ হয়, তবে ইরান তার চূড়ান্ত ও কঠোর জবাব দেবে।

Leave a comment