তেজস্বী যাদবের 'সূত্র' বিতর্ক: রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড়

তেজস্বী যাদবের 'সূত্র' বিতর্ক: রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড়

তেজস্বী যাদব সাংবাদিকদের 'সূত্র' কে 'মূত্র' বলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন, যা রাজনৈতিক ও মিডিয়া মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

তেজস্বী যাদব: বিহারের রাজনীতিতে প্রায়শই বাণীবর্ষণ দেখা যায়, তবে এবার বিষয়টা অন্য রূপ নিয়েছে। প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব সাংবাদিকদের 'সূত্র' কে 'মূত্র' বলে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া তাঁর এই মন্তব্যে শুধু রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়নি, বরং সাংবাদিকতা জগৎ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটি নতুন বিতর্কের সূচনা হয়েছে।

বিতর্কের সূত্রপাত

তেজস্বী যাদব সম্প্রতি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন যে, 'নির্বাচন কমিশন স্বয়ং সামনে আসার পরিবর্তে সূত্রের মাধ্যমে খবর পরিবেশন করছে, যাতে এর আড়ালে খেলা করা যায়। এই একই সূত্র অপারেশন সিঁদুরের সময় ইসলামাবাদ, লাহোর এবং করাচি দখল করেছিল। তাই আমরা এই ধরনের সূত্রকে মূত্র মনে করি। মূত্র অর্থাৎ এমন বর্জ্য পদার্থ যা দুর্গন্ধ ছড়ায়।' তাঁর এই মন্তব্যের ফলে একটি গুরুতর রাজনৈতিক বিতর্কের পরিবর্তে ব্যঙ্গ, কটাক্ষ এবং অপমানজনক শব্দের প্রয়োগ হয়েছে।

সূত্র নিয়ে প্রশ্ন নাকি সাংবাদিকতার উপর আঘাত?

সাংবাদিকতায় 'সূত্র' শব্দটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটি সেই অজানা তথ্যের উৎস, যার মাধ্যমে অনেক সময় বড় বড় কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু তেজস্বী যাদব যে ভাবে এই শব্দটিকে 'মূত্র' বলেছেন, তা থেকে প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট, নাকি নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়ার উপর তাঁর এই আঘাত ছিল? তাঁর এই মন্তব্যের পর 'সূত্র সমাজ' এবং মিডিয়া জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক বর্ষীয়ান সাংবাদিক এটিকে 'আপত্তিকর', 'অসংবেদনশীল' এবং 'গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের অবমাননা' বলে উল্লেখ করেছেন।

ভোটার তালিকা বিতর্ক এবং 'খেলা'র অভিযোগ

এই পুরো বিতর্কের প্রেক্ষাপটে বিহারে চলমান ভোটার তালিকা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে ভোটার তালিকায় নেপাল, মায়ানমার এবং বাংলাদেশের লোকেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই খবর কিছু মিডিয়া রিপোর্টে 'সূত্র' মারফত প্রকাশিত হয়েছিল। তেজস্বী যাদবের অভিযোগ, এ সবই বিরোধী দলগুলিকে বদনাম করার এবং 'খেলা' করার ষড়যন্ত্র।

শব্দের রাজনীতি নাকি রাজনৈতিক শব্দের পতন?

বিহারের রাজনীতিতে লালু যাদবের একটি বিশেষ ধরণ ছিল, যেখানে তিনি মজাদার ঢঙে গুরুতর রাজনৈতিক কথা বলতেন। তেজস্বী যাদবও সেই ঢঙে কথা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু এবার শব্দের সীমা লঙ্ঘিত হয়েছে। সাংবাদিকদের মূত্র বলার ফলে বিষয়টি হাস্যরসের পরিবর্তে ঘৃণা এবং অপমানের দিকে মোড় নিয়েছে। বিরোধী দলগুলি তেজস্বীর এই মন্তব্যকে 'মিডিয়ার অপমান' হিসেবে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে, তেজস্বীর সমর্থকেরা বলছেন যে, তিনি 'সূত্র'-এর মাধ্যমে খবর পরিবেশনকারীদের, অর্থাৎ 'সিস্টেম'-এর উপর প্রশ্ন তুলেছেন, সাংবাদিকদের উপর নয়।

'মূত্র' কি অপমানজনক, নাকি উপযোগী?

তেজস্বী যাদবের এই মন্তব্যকে কেউ কেউ মজাদার বা ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে দেখতে পারেন, কিন্তু প্রশ্ন হল, 'মূত্র'-র মতো শব্দের ব্যবহার কোনো ব্যাখ্যায় কতটা উপযুক্ত? একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ভারতে মূত্র নিয়ে দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই এর 'ঔষধি ব্যবহারের' জন্য পরিচিত ছিলেন। আজও আয়ুর্বেদে 'গোমূত্র'-র উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়। এমন যুক্তিও আসে যে, মূত্রকে সম্পূর্ণরূপে বর্জ্য পদার্থ হিসেবে বিবেচনা করা ভুল। তবুও, সাংবাদিকদের 'সূত্র'-এর সঙ্গে এর তুলনা ভাষা এবং মর্যাদার ক্ষেত্রে उचित নয়।

তেজস্বীর কি 'রাজনৈতিক টিউটোরিয়াল'-এর প্রয়োজন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তেজস্বী যাদবের তাঁর বক্তব্য নিয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। তাঁর বাবা লালু যাদব তাঁর রসবোধ এবং ব্যঙ্গাত্মক কথার জন্য পরিচিত ছিলেন, তবে তিনি শব্দের সীমা লঙ্ঘন না করে তাঁর কথা বলতেন। তেজস্বী যদি তাঁর বাবার কাছ থেকে 'সূত্র ও মূত্র'-এর সঠিক ধারণা বিষয়ে 'টিউটোরিয়াল' নেন, তাহলে সম্ভবত ভবিষ্যতে এমন বিতর্কগুলি এড়ানো যেতে পারে।

Leave a comment