জয়পুরের SMS হাসপাতালে আইসিইউ ওয়ার্ডে আগুন লেগে ৮ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। স্বজনরা অবহেলার অভিযোগ তুলছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
জয়পুর: রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের সওয়াই মানসিংহ (SMS) হাসপাতালে রবিবার ৫ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১১.২০ মিনিটে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। এই আগুন আইসিইউ ওয়ার্ডে লাগে, যেখানে ভর্তি আটজন রোগীর মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগীরা ছিলেন, যারা জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন। এই দুর্ঘটনা রাজধানীতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা দিল্লি সফর বাতিল করলেন
এই গুরুতর দুর্ঘটনার পর রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা তার দিল্লি সফর বাতিল করে দেন এবং অবিলম্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান ইকবাল খান। এই কমিটির উদ্দেশ্য হল ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা এবং দোষীদের চিহ্নিত করা।
স্বজনরা অবহেলার অভিযোগ তুলছেন
দুর্ঘটনার সময় কিছু স্বজন অভিযোগ করেন যে আগুন লাগার প্রায় ২০ মিনিট আগে হালকা ধোঁয়া দেখা গিয়েছিল, কিন্তু এটিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়নি। স্বজনদের বক্তব্য, যদি প্রাথমিক সতর্কতা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হত, তাহলে অনেক জীবন বাঁচানো যেত। স্বজনরা মেডিকেল স্টাফদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন যে, আগুন বাড়লে তারা সাহায্য করার পরিবর্তে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
আইসিইউ ওয়ার্ডের বাইরে স্ট্রেচার এবং নিরাপত্তা সরঞ্জাম উপস্থিত ছিল না। রোগীদের স্বজনরা নিজেরাই আইসিইউতে ঢুকে লোকজনকে বের করার চেষ্টা শুরু করেন। অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের নিরাপদে বের করে আনার জন্য কোনো মেডিকেল স্টাফ সাহায্যের জন্য উপস্থিত ছিলেন না। এই ঘটনা হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি তুলে ধরেছে।
হাসপাতালে আগুন নেভানোর ব্যবস্থার অভাব
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। রাতের বেলায় হাসপাতালে কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন না। প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কোনো প্রশিক্ষণ বা অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। এই কারণে সময় মতো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
ক্ষুব্ধ স্বজনদের স্লোগান
দুর্ঘটনার পর মৃতদের স্বজনরা ট্রমা সেন্টারের গেটে ধরনায় বসেন। তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং অবহেলার অভিযোগ তোলেন। স্বজনরা দাবি করছেন যে, দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
প্রধানমন্ত্রী মোদির শোক প্রকাশ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং টুইটের মাধ্যমে বলেছেন যে, রাজস্থানের জয়পুর স্থিত SMS হাসপাতালে আগুন লেগে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন এবং মৃতদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির দায়িত্ব
তদন্ত কমিটিকে খুঁজে বের করতে হবে যে, কার অবহেলায় আগুন লেগেছে এবং রোগীদের সময় মতো কেন বাইরে বের করা হয়নি। এছাড়াও, রোগীদের বাঁচানোর জন্য স্বজনদের প্রচেষ্টায় কেন সাহায্য করা হয়নি, তাও খতিয়ে দেখা হবে।
কংগ্রেস স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে
রাজস্থানের বিরোধী দলনেতা টিকারাম জুলিয়ে বলেছেন যে, এই দুর্ঘটনা সরকারের পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষার অভাবকে তুলে ধরে। তিনি বলেন যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। তার বক্তব্য ছিল যে, মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রী যদি দিল্লি সফরের পরিবর্তে এসএমএস হাসপাতাল পরিদর্শন করতেন, তাহলে রাজ্যে আরও ভালো পর্যবেক্ষণ সম্ভব হত।